খুলনা | সোমবার | ২১ জুলাই ২০২৫ | ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

আওয়ামী লীগের দোসরদের মিথ্যা মামলা, হয়রানি থেকে বাঁচার আকুতি বিএনপি নেতার

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৪৯ এ.এম | ২১ জুলাই ২০২৫


আওয়ামী লীগের দোসরদের মিথ্যা মামলা, হয়রানি থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়ে ও ন্যায় বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন নগরীর ২৬নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন আহসান। 
রোববার দুপুর ১২টায় খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিগত প্রায় ১৭ বছর ফ্যাসিবাদী শাসনামলে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রতিনিয়ত টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছি। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পতন ঘটলেও খুলনায় শেখ বাড়ির দাপট দেখানো দোসররা নতুন ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এখন তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেঁচে থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। খুলনার আদালতে অবসরপ্রাপ্ত পেশকার নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ১/২ নবীনগর এলাকার আওয়ামী লীগের দোসর মোঃ সরোয়ার হোসেন, তাঁর ছেলে নিষিদ্ধ মহানগর ছাত্রলীগের নেতা মোঃ ইমারান খান ফ্যাসিস্ট শাসনামল থেকে তার বিরুদ্ধে মামলা, হুমকিসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে আসছে। সরোয়ার হোসেন তার নিজ বোনের স্বামী ও ইমরান খান তার ভাগ্নে হলেও তাদের হাত থেকে নিস্তার পাননি। তারা শেখ পরিবারের প্রভাব খাটিয়ে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বোনকে হত্যা করেছে বলে হয়রানি করেছে। দীর্ঘদিন ক্যান্সার, কিডনিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত সাহানা পারভীন লিলি (৫২) এর চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমার পৈতৃক জমি-জমা বিক্রি করে নিঃস্ব ও রিক্ত হয়ে গেছেন। দেশে-বিদেশে এই মরণঘাতি রোগের সুচিকিৎসার জন্য দীর্ঘ সময় বোনকে নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছি। কিন্তু আমার বোনের স্বামী ফ্যাসিবাদের আজ্ঞাবহ হয়ে রাজনৈতিক ফায়দার জন্য তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রথমে বোনকে পয়জনিং করে হত্যা ও পরে ডাকাতি-লুটপাট-হামলার অভিযোগে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। শুধু তাই নয়, সরোয়ার হোসেন এখন আদালতে প্রভাব বিস্তার করে আদালত ও প্রশাসনকে ব্যবহার করছে। এমন অবস্থায় আমাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ফ্যাসিবাদের পতন হলেও ফ্যাসিবাদী দোসররা নতুন ভাবে আবির্ভ‚ত হয়েছে। একদিকে সহায় সম্পদ ও অর্থ হারিয়েছি, নিজেদের আপন বোনকে হারিয়েছেন। অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবে অবিরত হয়রানি, হুমকি, অসত্য অভিযোগ ও হয়রানি-স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ধ্বংস করে দিয়েছে। 
তিনি আরো বলেন, ১৯৮৪ সালের ২৮ এপ্রিল তার বোন সাহানা পারভীন লিলির সঙ্গে মোঃ সরোয়ার হোসেনের বিয়ে হয়। ২০১৮ সালের দিকে তার ভাগ্নি নিলুফার ইয়াসমিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে বোন মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন। একপর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে অসহায় অবস্থায় তাদের কাছে চলে আসেন। খুলনা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা, পরীক্ষা নিরীক্ষা করালে তাঁর ক্যান্সার, কিডনি রোগসহ বিভিন্ন সমস্যা ধরা পড়ে। বোনের এই মরণঘাতি চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমাদের পৈতৃক সম্পতি বিক্রি করতে বাধ্য হন। এক পর্যায়ে তার বোন বাবার দেওয়া জমির কিছু অংশ চিকিৎসা ব্যয় মেটানোর সুবিধার জন্য লিখে দেন। বোনকে নিয়ে ৫-৭ বার ভারত, ভারতের ভেলর, ঢাকায় চিকিৎসা করিয়েছেন। বড় ধরনের অপারেশন করাতে হয়েছে। একদিকে শারীরিক সমস্যা ও অন্যদিকে মেয়ের অকাল মৃত্যুতে ভেঙ্গে পড়েছিলেন। তারা যখন বিপর্যস্ত, তখন বোনের স্বামী মোঃ সরোয়ার হোসেন তার স্ত্রীকে নিজ জিম্মায় নিতে আদালতে সিআর মামলা নং ১৬১/২০২০ দায়ের করেন। আদালত বোনের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। বোন তাঁর স্বামীর বাড়িতে যেতে অস্বীকৃতি জানান। এমন কী তিনি তাঁর স্বামী সরোয়ার হোসেন ও ছেলে ইমরান খানের নামে ২০২০ সালের ৮ মার্চ সোনাডাঙা থানায় সাধারণ ডায়রি করেন। 
তিনি বলেন, বোনকে বাঁচিয়ে রাখতে এমন কোন প্রচেষ্টা নেই-যা আমরা ক্রটি রেখেছি। কিন্তু আমাদের সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে ২০২৩ সালের ২৮ মে বোন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আর এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করেই ভগ্নিপতি সরোয়ার হোসেন, ভাগ্নে মোঃ ইমরান খানের নতুন ষড়যন্ত্র ও হয়রানি শুরু হয়। বিষ প্রয়োগে বোনকে হত্যার অভিযোগ আনে। পুলিশের কাছে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের দাবি তোলে। এক পর্যায়ে পুলিশ তাঁর মৃতদেহ ময়নাতদন্ত, সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। পরে আমরা মৃতদেহ দাফন করি। এরপরে ইমরান খান আমি আমার ভাই মোঃ আসগর আলী, আমার স্ত্রী রোজিনা খাতুন ওরফে রোজি, বোন নারগিস পারভীন ডলির বিরুদ্ধে সোনাডাঙ্গা থানায় ২৩ নভেম্বর হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলা তদন্ত কর্মকর্তা সোনাডাঙ্গা থানার তৎকালীন পরিদর্শক ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। যাতে আমার বোনের দীর্ঘ অসুস্থতা জনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রমাণিত হয়, আমাদের বিরুদ্ধে হয়রানি ও নাজেহাল করতে তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু তারা এখানেই থেকে থাকেনি। তারা তদন্ত রিপোর্টে নারাজি প্রদান করে। মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরো উলে­খ করেন, তার বোনের স্বামী ও তাঁর ছেলে হত্যা মামলায় ফাঁসাতে ব্যর্থ হয়ে গোপনে তার বিরুদ্ধে দস্যুতা, ভাঙচুর ও লুটপাটের নতুন অভিযোগ এনেছে। ২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট সোনাডাঙ্গা থানার আমলী আদালতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকেসহ অজ্ঞাত ৮/১০জনকে আসামি করে মোঃ সরোয়ার হোসেন এ মামলা দায়ের করে। তাদের অভিযোগ ওই বছর ৫ আগস্ট আমার নেতৃত্বে ও হুকুমে দেশি অস্ত্র নিয়ে সরোয়ার হোসেনের বাড়িতে ভাঙচুর-মারধর-লুটপাট করি। বাড়িতে থাকা নগদ ৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ বিভিন্ন জিনিস লুট করি। ওই তাঁর ১২ বছরের নাতি গাজী শেখ নেয়াজ মোহাম্মদ, ছেলে ইমরান খান আহত হন। যা সম্পূর্ণ অসত্য, কাল্পনিক ও ভুয়া। আমাদের হত্যা মামলা দিয়ে ফাঁসাতে না পেরে তারা নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এক বছর আগে ৫ আগস্টের ঘটনা, ১৫ আগস্ট মামলা হলেও আমরা সপ্তাহ খানেক পর বিষয়টি জানতে পারি। মূলতঃ খুলনা আদালতের সাবেক পেশকার মোঃ সরোয়ার হোসেন নিজের প্রভাব কাটিয়ে অসাধু ব্যক্তিদের মাধ্যমে রাজনৈতিক ভাবে হয়রানি ও জব্দ করার ফায়দা এটেছে। আমার এ থেকে রেহাই চাই। ন্যায় বিচার পেয়ে বাঁচতে চাই। 
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপি’র সভাপতি হাফিজুর রহমান মনি, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

্রিন্ট

আরও সংবদ