খুলনা | শনিবার | ২৬ জুলাই ২০২৫ | ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

সাপে কাটার প্রতিষেধক গবেষণা কেন্দ্রটিতে বরাদ্দ নিশ্চিত করুন

|
১২:২১ এ.এম | ২২ জুলাই ২০২৫


দেশে বর্ষা এলেই সাপের কামড়ের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। প্রতিবছর প্রায় ছয় লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হন আর প্রাণ হারান ছয় হাজারের বেশি মানুষ। দুঃখজনক হচ্ছে, কার্যকর প্রতিষেধকের অভাব এই ভয়াবহ পরিসংখ্যান বাড়িয়ে তুলছে। গবেষকেরা প্রতিষেধক তৈরির একেবারে দ্বারপ্রান্তে থাকলেও তাঁদের গবেষণা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সাপের কামড়কে ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের অবহেলিত ট্রপিক্যাল রোগ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার পরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে যাত্রা শুরু করে ভেনম রিসার্চ সেন্টার। উদ্দেশ্য ছিল একটাই, দেশের মাটিতেই আমাদের সাপের বিষের গঠন ও বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অ্যান্টিভেনম তৈরি করা। বর্তমানে যে অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করা হয়, তা ভারতের সাপের বিষ থেকে তৈরি এবং তা সবক্ষেত্রে কার্যকর নয়। সেখানকার গবেষকেরা স্বপ্ন দেখছিলেন দেশি ১০ ধরনের বিষধর সাপের জন্য অ্যান্টিভেনম তৈরি করে হাজার হাজার প্রাণ বাঁচানোর।
বিশেষ করে চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম তৈরির কাজ ইতিমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে ইঁদুরের শরীরে অ্যান্টিবডি প্রয়োগের কথা। এ পরীক্ষা সফল হলে পরবর্তী ধাপে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে আমরা পেতে পারি বহু আকাক্সিক্ষত দেশীয় প্রতিষেধক; কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে, এক বছর ধরে কোনো অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় গবেষণা কার্যক্রম কার্যত থমকে গেছে।
একসময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মক্ষম পরিকল্পনার (অপারেশনাল প্ল্যান) আওতায় প্রতিবছর এক কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পেতো এ প্রতিষ্ঠান। কর্মীদের বেতন, সাপ সংগ্রহ, খাবার, যন্ত্রপাতি কেনাসহ যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ হতো এ বাজেট থেকে। ২০১৯ সালে যেখানে সাপের সংখ্যা ছিল ৫৬, এখন তা বেড়ে প্রায় ৪০০টিতে দাঁড়িয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক সাপের খাবারের খরচই মাসে এক লাখ টাকার বেশি; কিন্তু তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গবেষক ও কর্মীদের ভবিষ্যৎ যেমন অনিশ্চিত, তেমনি সাপের জীবনও এখন সংকটাপন্ন।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এই গবেষণা নিছকই একটি বৈজ্ঞানিক কাজ নয়, এটি হাজার হাজার মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন। ফলে অর্থের অভাবে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাটি থেমে যাওয়ার বিষয়টি কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। ভেনম রিসার্চ সেন্টারের কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দিয়ে এ গবেষণাকে রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছে এবং একটি অর্গানোগ্রামও জমা দিয়েছে। আমাদের নীতিনির্ধারকদের দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। ভেনম রিসার্চ সেন্টারের গবেষণা কার্যক্রমকে অবিলম্বে সচল রাখতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা উচিত।

্রিন্ট

আরও সংবদ