খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৪ জুলাই ২০২৫ | ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

তালায় হাসুয়ার আঘাতে মাদকাসক্ত ছেলের মৃত্যু, গ্রেফতার মায়ের আদালতে জবানবন্দি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা, তালা প্রতিনিধি |
১২:৩৯ এ.এম | ২৩ জুলাই ২০২৫


তালা উপজেলার আটারই গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে মাদকাসক্ত মোঃ হাবিবুর মোড়ল (৩০) নামে এক যুবককে হাসুয়া দিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে মায়ের বিরুদ্ধে। সোমবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে উপজেলার আটারই গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হাবিবুর তালার আটারই গ্রামের আব্দুল­াহ মোড়লের ছেলে এবং পেশায় একজন ভ্যানচালক। খবর পেয়ে তালা থানার পুলিশ রাতেই পারুল বেগমকে আটক করে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার নিহতের স্ত্রী শান্তা খাতুন বাদী হয়ে তালা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
গ্রেফতারকৃত পারুল বেগম মঙ্গলবার বিকেলে সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম পঞ্চম আদালতের বিচারক অর্পিতা আক্তারের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাকে আদালতের নির্দেশে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। পারুল বেগম সাতক্ষীরার তালা উপজেলার আটারই গ্রামের আব্দুল­াহ মোড়লের স্ত্রী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মোটরসাইকেল কেনা নিয়ে স্ত্রী শান্তা খাতুন ও মা পারুল বেগমের সঙ্গে হাবিবুরের বাগবিতন্ডা হয়, যা একপর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। 
নিহতের স্ত্রী শান্তা খাতুন বলেন, আমার স্বামী মাদকাসক্ত। প্রায়ই মাদক সেবন করে আমাকে ও শাশুড়িকে মারধর করত। মোটরসাইকেল কেনার জন্য চাপ দিতো। সোমবার রাতে সে আবারও টাকা চেয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমি বাধা দিতে গেলে সে আমাকে মারধর করে। এতে অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে জ্ঞান ফিরে দেখি সে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।’ 
নিহতের মা পরুল বেগম আদালতের জবানবন্দিতে বলেন, দুই বছর আগে দক্ষিণ আটারই গ্রামের শান্তা খাতুনের সঙ্গে ছেলের বিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে তাদের ১০ মাসের একটি শিশু সন্তান আছে। তার ছেলে নেশা করে এসে বউ ও মায়ের সাথে ঝগড়া, মারামারি, অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করে। যার কারণে আগেও দু’টো বউ চলে গেছে হাবিবুরের। ঘটনার দিন মেয়ে সুমাইয়াকে খর্ণিয়াতে বিয়ে দেওয়ার পর থেকে জন মজুর খেটে দিন চালান তিনি। তার ছেলে ভ্যানচালক হাবিবুর রহমান একজন মাদকাসক্ত। এক বছর আগে ছেলে হাবিবুর রহমান তার গলায় দা ঠেকিয়ে ১৪ শতক জমি এক লাখ ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য করে। নেশা করে সে ওই টাকা নষ্ট করার পর তার কাছ থেকে মোটরসাইকেল নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিলো। রাতে মায়ের সাথে বাইক কিনে দিতে বলে ঝগড়ার এক পর্যায়ে পাশে সিঁড়ির উপর থাকা হাসু (কাস্তে) দিয়ে মাকে কোপ দেওয়ার সময় হাতাহাতিতে সেই কোপ তার গায়ে ও মাথায় লাগে। এর ফলে সে মারা যায়। তার মায়ের বক্তব্য আর কেউ এই ঘটনায় দ্বায়ী নয়, তার ছেলে একজন নেশাখোর, তার মাথা ঠিক থাকেনা ঝগড়া মারামারি করে বলে অন্য কেউ তেমন তাদের বাড়িতে আসেনা।
পারুল বেগম আরো জানান, সোমবার রাত ৯টার দিকে হাবিবুর রহমান ভ্যান চালিয়ে বাড়ি ফেরে। এ সময় বিদ্যুৎ ছিল না। এ সময় সে তার কাছে একটি মোটরসাইকেল কেনার টাকা চায়। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ধান কাটার কাজে ব্যবহৃত একটি ধারালো কাস্তে নিয়ে তাকে মারতে আসে। এ সময় তার (পারুল) জীবন বাঁচাতে আসে পুত্রবধূ শান্তা। তার ও শান্তার সঙ্গে ধাক্কা ধাক্কির এক পর্যায়ে হাবিবুর মাটিতে পড়ে গেলে তার হাতে থাকা কাস্তে কপালে ও গলায় লাগে। 
জানা গেছে পারুল বেগম ও তার পুত্রবধূ শান্তা রাত ১০টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতাল থেকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে আটক করে।
এলাকাবাসীর দাবি, হাবিবুর মাদকাসক্ত ছিলেন এবং প্রায়ই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঝগড়া করতেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর কপাল ও গলায় ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন ছিল।
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মাইনউদ্দিন বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের স্ত্রী শান্তা খাতুন বাদী হয়ে শাশুড়ীকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন (নং-১১,তাং-২২/০৭/২৫)। গ্রেফতার পারুল বেগমকে মঙ্গলবার সকালে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলত জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে হাবিবুরের মরদেহ স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে ওসি নিশ্চিত করেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ