খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৪ জুলাই ২০২৫ | ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

ঝিনাইদহে চাতাল শ্রমিক দম্পতিকে আটকে রেখে নির্যাতন, শ্রমিকের মৃত্যু

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি |
১২:৪০ এ.এম | ২৩ জুলাই ২০২৫


পাওনা টাকা দিতে না পারায় ঝিনাইদহে এক শ্রমিক দম্পতিকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এতে নেছার আলী ওরফে আলমগীর (৫০) নামের এক শ্রমিক মারা গেছেন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলার ডাকবাংলা বাজার সংলগ্ন সরকার এন্টারপ্রাইজ নামের একটি চাতালে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত নেছার আলী যশোরের চৌগাছা উপজেলার কান্দি গ্রামের মৃত সোনাই মন্ডলের ছেলে। নির্যাতনের শিকার দম্পতি সদর উপজেলার ডাকবাংলা বাজার এলাকায় বসবাস করেন।
নেছার আলীর স্ত্রী দিপালী খাতুন অভিযোগ করে বলেন, টাকা ধার নিয়ে দিতে না পারাই আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। সোমবার সকালে কোটচাঁদপুর উপজেলার তালসার বাজারের একটি হোটেলে খাবার খেতে বসি। তখন পাওনাদাররা আমাদের হোটেল থেকে বের করে নিয়ে আসে। সেখানে টাকার ব্যাপারে একটি জায়গায় স্থানীয় মেম্বর ও পুলিশের উপস্থিতিতে শালিসী বৈঠক হয়। তখন আমার বোন শিফালী পাওনা টাকা দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দেয় এবং চাতাল ব্যবসায়ী শফিকুলের পাওনা দেড় লক্ষাধিক টাকা ফেরত দিই। এরপরও আমাদেরকে ধরে নিয়ে আসে। রাতে চাতালের দুই তলায় একটি রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে। সকালে আমার সামনে আমার স্বামী নেছার আলীর পায়ে লাঠি দিয়ে দু’টি বাড়ি মারে।
তিনি আরও বলেন, সে সময় প্রতিবাদ করলে শরিফুলের পিতা আমাকে ধাক্কা দিতে দিতে নিচের তলায় নিয়ে আসে এবং একটি কক্ষে আটকে রাখে। তার প্রায় ১০ মিনিট পর আমার স্বামীর মৃত দেহ দ্বিতীয় তলা থেকে বের করে একটি গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তখন আমি কান্নাকাটি করতে থাকি। আমার স্বামীকে ওরা মেরে ফেলেছে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন নেছার আলীর স্ত্রী দিপালী।
দিপালী খাতুনের বড় বোন শিফালী খাতুন জানান, আমার বোন জামাইকে হত্যা করা হয়েছে। শরিফুলের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা ধার নিয়েছিল আমার বোন জামাই। সে টাকা আমি সোমবারই দিয়ে দিয়েছি। আবার কেন রাতে ঘরের মধ্যে তালা লাগিয়ে আটকে রেখে সকালে মারধর করা হলো! আমি এ হত্যার বিচার চাই।
এলাকাবাসী জানান, সরকার এন্টারপ্রাইজ নামের চাতালের মালিক আরশাদ আলী ও চাতাল ব্যবসায়ী শরিফুল পাওনা টাকার জন্য ওই শ্রমিক দম্পতিকে পার্শ্ববর্তী তালসার বাজার থেকে ধরে নিয়ে আসে। তাদের কাছে ডাকবাংলা বাজার এলাকার রহিম মুন্সি এক লাখ বিশ হাজার ও শরিফুল দেড় লক্ষ টাকা পেত। সোমবার তাদেরকে ধরে নিয়ে আসার পর শরিফুলের পাওনা টাকা ফেরত দিয়েছে নেছার আলীর পরিবার এবং রহিম মুন্সির পাওনা টাকা সময় নিয়ে পরিশোধ করলেও হবে বলে জানা যায়। শরিফুলের টাকা ফেরত দেওয়ার পরও এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা এলাকাবাসী আশা করিনি।
ডাকবাংলা চাল কল মালিক সমিতির সভাপতি আক্তার হোসেন ভান্ডারী বলেন, আমার বাজারে মোট ৯৩টি অটো ও সেমি অটোরাইচ মিল রয়েছে। শ্রমিকের কারণে মিল মালিকদের মাঝে মধ্যে খুবই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এদেরকে অগ্রিম টাকা দিয়ে চাতালে নিয়ে আসতে হয়। তবে এই শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা শুনে হাসপাতালে এসেছি।
জানতে চাইরে ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল­াহ আল মামুন বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত চলছে। প্রতিবেদন আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। 

্রিন্ট

আরও সংবদ