খুলনা | শুক্রবার | ২৫ জুলাই ২০২৫ | ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

সংকট কাটাতে উদ্যোগ নিন

|
১২:৪১ এ.এম | ২৩ জুলাই ২০২৫


দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা চরম শঙ্কা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যের সংকটজনক অবস্থায় তাঁরা কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না। দেশের অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও মূল্যস্ফীতি, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, ঋণের উচ্চ সুদহার, টাকার অবমূল্যায়ন, ডলার সংকট এবং দ্রব্যমূল্যের লাগামছাড়া ঊর্ধ্বগতি ব্যবসার খরচ ক্রমেই বাড়িয়ে চলেছে। আর রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগ করতেও সাহস পাচ্ছেন না।
আইন-শৃঙ্খলার অবনতিও দুর্ভাবনার কারণ হচ্ছে। চলমান অস্থিরতায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের বিক্রিতে ধস নেমেছে। লোকসানের মুখে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেকগুলো বন্ধ হওয়ার পথে।
ফলে চাকরি হারাচ্ছেন কর্মীরা। চলমান সংকটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে মার্কিন শুল্কনীতি। আগামী ১ আগস্ট থেকে মার্কিন বাজারে পণ্য রপ্তানিতে ৩৫ শতাংশ (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) শুল্ক আরোপিত হবে। এর ফলে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানাগুলোকে নিশ্চিতভাবেই বড় ধরনের বিপর্যয় মোকাবেলা করতে হবে।
পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএর নেতাদের মতে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। একের পর এক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে মন্দা ও চাহিদা হ্রাস বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ উলে­খ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ট্রেড গ্র“পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে এমনিতেই তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজারে মন্দা থাকে। এ সময় মার্কিন ৩৫ শতাংশ শুল্কে দেশটির বাজারের ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
ফলে কোনো কোনো ক্রেতা কার্যাদেশ স্থগিত বা বিলম্বিত করছেন। ক্রেতাদের এমন আচরণে স্থানীয় রপ্তানিকারকরা শঙ্কায় পড়েছেন।’ ব্যবসায় মন্দা এবং বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানিও বহুলাংশে কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্টের (বিওপি) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে জানা যায়, বিগত অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে মূলধনী যন্ত্রের আমদানি কমেছে ১৯.৬ শতাংশ। এতে হয়তো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বাড়তে পারে, কিন্তু দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগে যে ধস নামছে, তা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও এক অশনিসংকেত। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন শিল্প ও বণিক সমিতির ফেডারেশন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্টের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত না হওয়ায় দেশের বিনিয়োগে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। এ সময় কলকারখানা বন্ধ হয়েছে; বেকার হয়েছে কয়েক লাখ শ্রমিক।’ তিনি আরো বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীল সরকার না হলে ব্যবসা ও বিনিয়োগে স্থিতিশীলতা আসবে না।
শিল্প ও বিনিয়োগের এমন দূরবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে তা দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দেবে। বেকারত্ব বড় ধরনের সামাজিক সমস্যার কারণ হবে। অর্থনীতির এই পতন ঠেকাতে হবে। আর এ জন্য শিল্প সুরক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে, অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ