খুলনা | বুধবার | ২৩ জুলাই ২০২৫ | ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

নিহত বেড়ে ৩১, আহত ১৬৫ : নিহতের অধিকাংশই শিশু, ২০ জনের মরদেহ হস্তান্তর

ফুলকুঁড়িদের কবর আর শোক ও বিক্ষোভে দেশ

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩৫ এ.এম | ২৩ জুলাই ২০২৫


আগুন পুড়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে যারা; মিলেছে যাদের মৃত্যুর ছাড়পত্র; সেইসব না ফোটা ফুলকুঁড়িদের অঙ্গার নিথর দেহ নিয়ে বাবা-মা ও স্বজন-পরিজন ফিরেছে ঘরে; শুইয়ে দিয়েছে শান্ত কবরের কোমল মাটিতে। তাদের বিদায়ে কেঁদেছে গ্রাম-শহর, শোকে ঢুকরে উঠেছে জাতির হৃদয়। এমন দিনে দায়-দোষ ও গড়িমসির হিসাব-নিকাশের প্রশ্ন নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখেছে দেশ। গুজব হানা দিয়েছে ডানা মেলে অসহ্য ভাবে। আর করণীয় খুঁজতে দৌড়-ঝাঁপে রয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ হয়ে উঠে প্রশ্ন-উত্তরে বিমর্ষ-বিহŸল এক দেশ। ঢাকার বড় বড় হাসপাতালের বিছানায় কাতর কাঁচা প্রাণের বাঁচার আকুতির মধ্যে সর্বশেষ খবরের দৌড়ে মিলেছে একেকটি বেদনার ঘোষণা। যারা এক দিন আগেও ছিল অমিত সম্ভাবনার কুঁড়ি, তারা আগুনে ছাই হয়ে না ফোটা ফুলের গল্প হয়ে গেছে। আর চামড়া পোড়ার যন্ত্রণা নিয়ে ছটফট করা শিশুদের জন্য দোয়া করছে দেশ; তাদের জীবিত ফেরার অপেক্ষায় সবাই।
জাতীয় শোক দিবসে অর্ধনমিত রাখা হয় জাতীয় পতাকা। নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থ্যতা কামনায় সরকারি আধাসরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দপ্তর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দিরে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়।
রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত ও অন্তত ১৬৫ জন আহত হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা সোয়া ২টায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আহতদের বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার ও এ্যাম্বুলেন্সের সহায়তায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)সহ নিকটস্থ বিভিন্ন হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে।
আহতদের মধ্যে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৮ জন, বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪৬ জন, ঢাকা মেডিকেলে ৩ জন, ঢাকা সিএমএইচ-এ ২৮ জন, উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতাল ও কার্ডিয়াক সেন্টারে ১৩ জন, উত্তরা আধুনিক হসপিটালে ৬০ জন, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে এক জন, শহিদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক জন, ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালে দুই জন ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে তিন জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানায় আইএসপিআর।
নিহতদের মধ্যে ১০ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে, এক জন ঢাকা মেডিকেলে, ১৬ জন ঢাকা সিএমএইচ-এ, দুইজন উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতাল ও কার্ডিয়াক সেন্টারে, এক জন উত্তরা আধুনিক হসপিটালে এবং এক জন ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা গেছেন বলে জানায় আইএসপিআর।
এর আগে সকালে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ২৭ জন নিহত হওয়ার তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সায়েদুর রহমান। তিনি জানান, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছাড়া বাকি সবাই শিশু। প্রাপ্ত বয়স্কদের একজন পাইলট তৌকির ইসলাম ও একজন শিক্ষক মাহরীন চৌধুরী। এছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৭৮ জন।
অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সায়েদুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে ভর্তি আছে ৪২ জন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ২৮ জন। সেখানে সব মিলিয়ে ১৫ জনের মরদেহ ছিল। 
তিনি বলেন, ৬ জনের মরদেহের পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। তাদের ডিএনএ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন মারা গেছেন। সেখানে তিনজন এখন ভর্তি আছে, যাদের দুইজন আইসিইউতে আছে। এছাড়া ইউনাইটেড হাসপাতালে একজনের মরদেহ আনা হয়েছে। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ২৭ জন, হাসপাতালে ভর্তি আছে ৭৮ জন। 
তিনি আরও বলেন, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি থাকা আহতদের মধ্যে পাঁচজন আইসিইউতে আছে। তাদের মধ্যে দুইজনকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। এ পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 
‘আমাদের এ হাসপাতালের সঙ্গে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা আছে। তার ভিত্তিতে কারিগরি সহায়তার জন্য বাংলাদেশ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আহতদের কেইস সামারি তাদের পাঠানো হয়েছে। এই মুহূর্তে সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সেই হাসপাতালে উপস্থিত আছেন। সেই হাসপাতালের চিকিৎসকরা কেইস স্টাডি দেখে যদি মনে করেন কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঠাবেন অথবা তাদের পরামর্শ অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
রক্তদাতাদের হাসপাতালে ভিড় না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এখন ১০০ জনেরও কম রক্তদাতা প্রয়োজন। তাই নেগেটিভ গ্র“পের রক্তদাতা ছাড়া অন্যরা ভিড় করবেন না। আমাদের ব্যবস্থাপনা করতে অসুবিধা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে ১০ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে ৮ জন, ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে একজন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে একজনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
কোন হাসপাতালে কারা ভর্তি আছেন তাদের নামের তালিকা পাবলিক ডোমেইনে দেওয়া আছে, স্বজনদের অনুরোধ করব তারা যেন তা জানার চেষ্টা করেন, বলেন ডাঃ সাইদুর।
আইএসপিআর জানায়, এই অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গভীর ভাবে মর্মাহত। হতাহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও সার্বিক সহায়তায় তারা তৎপর রয়েছে।
বিমান বাহিনী প্রধান সরকারি সফরে বিদেশ থাকায় তার অনুপস্থিতিতে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন), বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন।
এছাড়া সেনাপ্রধান, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সামরিক বাহিনী এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব এবং ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে বলে আইএসপিআর জানায়।
আইএসপিআর জানায়, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে বিমান বাহিনীর একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত সোমবার বেলা ১টা ৬ মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলাস্থ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এ কে খন্দকার ঘাঁটি থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে উড্ডয়নের পরপরই বিমানটি যান্ত্রিক ত্র“টির মুখে পড়ে (যার বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষে জানানো হবে)।
বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোঃ তৌকির ইসলাম বিমানটিকে জনবহুল এলাকা থেকে দূরে নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটি উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকার মাইলস্টোন স্কুল এ্যান্ড কলেজের একটি দোতলা ভবনে বিধ্বস্ত হয়।

্রিন্ট

আরও সংবদ