খুলনা | শনিবার | ২৬ জুলাই ২০২৫ | ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

মাইলস্টোন স্কুল ট্র্যাজেডি সরকারের ব্যর্থতা ও সমন্বয়হীনতার বড় দৃষ্টান্ত

|
১২:১৪ এ.এম | ২৪ জুলাই ২০২৫


রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল ভবনে বিমান ভেঙে পড়ার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। এটি আমাদের জাতীয় জীবনের বড় একটি ট্র্যাজেডির দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। একসঙ্গে এত শিশুর (এ পর্যন্ত মৃত ৩২ জনের অধিকাংশই শিশু) মৃত্যু বাংলাদেশ খুব বেশি দেখেনি। এই ক্ষত অমোচনীয়, এই ক্ষতি অপূরণীয়। গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয়ভাবেও পালিত হয়েছে শোক। কিন্তু বিমান দুর্ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেওয়া এবং ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকার সমন্বয়হীনতা ও ব্যর্থতার যে নজির স্থাপন করেছে, সেটা এককথায় অগ্রহণযোগ্য।
মাইলস্টোন স্কুল ট্র্যাজেডিতে পুরো দেশ শোকে স্তব্ধ। শুরুতে সম্মিলিত যে উদ্ধার প্রচেষ্টা ও আহতদের রক্ত দিতে মানুষের স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসার দৃষ্টান্ত আমাদের সমাজে বহুদিন প্রেরণা হয়ে থাকবে। কিন্তু বড় কোনো দুর্ঘটনা সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় সক্ষমতা ও ব্যবস্থাপনা যে কতটা ভঙ্গুর, সেটা আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বিমান দুর্ঘটনাটি। ঘটনার গুরুত্ব যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে না পেরে উপদেষ্টাদের কেউ কেউ সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি করায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা প্রথম দিন দেখা যায়নি, যা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। চলমান উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত নিতে মাঝরাত গড়িয়ে যাওয়ায় শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষাসচিবের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভের জন্ম হয়, তা বিক্ষোভ পর্যন্ত গড়ায়। সচিবালয়ে বিক্ষোভের জেরে শিক্ষাসচিবকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে অর্থ সহযোগিতার আহŸান জানিয়ে পোস্ট দিয়ে সেটা সরিয়ে নেওয়া হয়। এটা একটা খারাপ নজির হিসেবে থেকে যাবে।
মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাউকে কাউকে মারধর এবং হেনস্তা করার ঘটনাও ঘটেছে, যা চূড়ান্তভাবে নিন্দনীয়। চোখের সামনে সহপাঠী হারানোর বেদনা শিক্ষার্থীদের কতটা ট্রমাগ্রস্ত করতে পারে, সেটা সহজেই বোধগম্য। ফলে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইন উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টার বৈঠকের পর আইন উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু এতেও শিক্ষার্থীদের শান্ত করা যায়নি। আমরা মনে করি, সরকারের দিক থেকে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ের যে ঘাটতি, সেখান থেকেই হতাহতের সংখ্যা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হতে পেরেছে।
প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার বিষয়টি স্বাভাবিক। কিন্তু জনাকীর্ণ এলাকায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এত প্রাণহানির ঘটনা নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের নীতিনির্ধারকেরা কতটা উদাসীন, সেই বিষয়টিকেই সামনে নিয়ে আসে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো রাজনৈতিক দলগুলো হাসপাতালে যেভাবে দল ধরে আহতদের দেখতে গেছে, সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অগ্নিদগ্ধ রোগীরা এমনিতেই উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকেন। সেখানে দল ধরে তাঁদের দেখতে যাওয়ার এই রাজনৈতিক প্রদর্শনপ্রবণতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্রে জানা যাচ্ছে, মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে এ পর্যন্ত ৩১ জন নিহত হয়েছেন, যাঁদের অধিকাংশই শিশু। আহত হয়েছেন ১৬৫ জন। আহতদের একটা উলে­খযোগ্য অংশ অগ্নিদগ্ধ। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও বেসরকারি হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে চিকিৎসা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
আমরা মনে করি, শুধু নির্দেশনা দেওয়াটাই সবকিছু নয়। কেননা অগ্নিদগ্ধ অনেক রোগীর দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে সরকারকে ট্রাস্ট গঠন করে আহতদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা ঠিক যে যাঁরা নিহত হয়েছেন, সেই ক্ষতি কোনো কিছুর বিনিময়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু নাগরিকের জীবনের প্রতি রাষ্ট্র ও সরকার যে দায়বদ্ধ, সেই অঙ্গীকার থেকেই নিহত পরিবারগুলোকে যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া প্রয়োজন। স্কুলটির শিক্ষার্থীরা যে ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছে, তা দূর করারও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ