খুলনা | বুধবার | ০৬ অগাস্ট ২০২৫ | ২১ শ্রাবণ ১৪৩২

বিকৃত ৬ লাশ শনাক্তে ১১ জনের ডিএনএ সংগ্রহ : আহত ১৩ জন হাসপাতাল ছেড়েছেন নতুন ভর্তি ১ : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

বার্ন ইনস্টিটিউটে ৮ শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক, চিকিৎসাধীন ৪৪

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩৭ এ.এম | ২৪ জুলাই ২০২৫


রাজধানী ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল এ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আহত শিশুদের মধ্যে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ৮ জনের অবস্থা ‘ক্রিটিক্যাল’ বা আশঙ্কাজনক। তারা সবাই শিশু এবং বর্তমানে তাদের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডাঃ নাসির উদ্দিন।
বুধবার বিকেলে বার্ন ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডাঃ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সিঙ্গাপুর থেকে আসা এক বিশেষজ্ঞ কনসালট্যান্টের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা দগ্ধ শিশুদের শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছি-ক্রিটিক্যাল, সিভিয়ার ও ইন্টারমিডিয়েট। ভর্তিদের মধ্যে ৮ জনের অবস্থা ক্রিটিক্যাল বা আশঙ্কাজনক, ১৩ জনের অবস্থা সিভিয়ার বা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত এবং ২৩ জনের অবস্থা ইন্টারমিডিয়েট।’
ডাঃ নাসির আরও বলেন, ‘এ ধরনের দগ্ধ রোগীদের শারীরিক অবস্থা প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় পরিবর্তন হয়। তাই এখনই কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাওয়া সম্ভব নয়। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।’ তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘চিকিৎসা সরঞ্জামের কোনো ঘাটতি নেই এবং আপাতত রক্তেরও প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বার্ন ইনস্টিটিউটের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড নেতৃত্বে প্রতি ঘণ্টায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে। তবে অধিকাংশের অবস্থাই এখনো আশঙ্কাজনক বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা।
প্রসঙ্গত, দুর্ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ১১ শিশু মৃত্যুবরণ করেছে বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন মোট ৪৪ জন, যাদের মধ্যে ৩৭ জনই শিশু।
বিকৃত ৬ লাশ শনাক্তে ১১ জনের ডিএনএ সংগ্রহ : উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল এ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বিকৃত হয়ে যাওয়া ৬ লাশ (দেহাবশেষ) শনাক্তে ১১ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বুধবার (বিকেল পর্যন্ত এই নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তথ্যটি নিশ্চিত করেন সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) শম্পা ইয়াসমিন।
শম্পা ইয়াসমিন জানান, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে থাকা ছয় মরদেহ থেকে ১১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর বিপরীতে সিআইডিতে এসে এখন পর্যন্ত ১১ জন দাবিদার তাদের রক্তের নমুনা দিয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে এক পরিবারের একাধিক ব্যক্তিও রয়েছেন।
এদিকে, এক তথ্য বিবরণীতে এই ঘটনায় নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যদের মালিবাগে সিআইডি ভবনে ডিএনএ ম্যাচিংয়ের জন্য নমুনা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে সরকার।
এতে বলা হয়, উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের প্রকাশিত তালিকায় যাদের সন্তান বা স্বজনের নাম নেই, সেসব পরিবারের সদস্যদের মালিবাগে সিআইডি ভবনে ডিএনএ ম্যাচিংয়ের জন্য নমুনা প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী ডাঃ মোঃ সায়েদুর রহমান এ অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিবরণীতে আরও বলা হয়, সিএমএইচের মর্গে রাখা ৬টি মরদেহ এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের তত্ত¡াবধানে ইতোমধ্যে মরদেহগুলোর ডিএনএ এ্যানালাইসিসের (প্রোফাইলিং) জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যা সিআইডির ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ প্রোফাইলিং করা হবে। নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যদের নমুনা পাওয়া গেলে সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই ডিএনএ ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করা হবে।
আহত ১৩ জন হাসপাতাল ছেড়েছেন, নতুন ভর্তি ১ : উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টা পর্যন্ত ২৯ জন মারা গেছেন এবং বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৫৭ জন। এদিন ১১ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন এবং একজন নতুন করে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডাঃ আবু হাসান মোঃ মঈনুল আহসান এতে সই করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইএসপিআর এর সঙ্গে সমন্বয় করেই এই তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে। 
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হালানাগাদ তথ্য বলছে, জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৪৫ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ৯ জন, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে একজন, শহিদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একজন এবং হিউম্যান এইড রিসার্চ ল্যাব এ্যান্ড হাসপাতালে একজন চিকিৎসাধীন আছেন।
তথ্য বলছে, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে ১২ জন এবং উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে একজন ছাড়া পেয়েছেন। আর জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নতুন করে একজন ভর্তি হয়েছেন।   
আর নিহতদের মধ্যে ১১ জন জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে, ১৫ জন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ), একজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, একজন লুবানা জেনারেল হাসপাতালে এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে একজন মারা গেছেন। 

্রিন্ট

আরও সংবদ