খুলনা | শনিবার | ২৬ জুলাই ২০২৫ | ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

‘৫৪ ধারায় গ্রেফতারের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন’ : ‘কাউকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পরিচয়পত্র দেখানো বাধ্যতামূলক’

কাউকে গ্রেফতার করলে ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারকে জানাতে হবে

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩৫ এ.এম | ২৫ জুলাই ২০২৫


ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এখন এটি কার্যকর হলে কাউকে গ্রেফতার করে থানায় নেওয়ার সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির পরিবার, বন্ধু বা আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানাতে হবে। কোনো অবস্থায় এ সময় ১২ ঘণ্টার বেশি নেওয়া যাবে না।
কোনো নাগরিককে গ্রেফতারের আগে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্য বা সংস্থার কর্মকর্তা পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবেন বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। ফৌজদারি কার্যবিধির সা¤প্রতিক সংশোধনের মাধ্যমে এই বিধান যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘ফৌজদারি কার্যবিধি (দ্বিতীয় সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এ সময় অন্যান্য কিছু সিদ্ধান্ত জানান স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
উলে­খ্য, বর্তমানে বাংলাদেশ সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করতে হয়। অন্যদিকে কাউকে গ্রেফতার করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পরিবার ও স্বজনদের জানাতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে।
ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের জানানোর সময় আদালতের রায় এবং বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শের কথা উলে­খ করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন এই সংশোধনী কার্যকর হওয়ার পর থেকে যে পুলিশ সদস্য গ্রেফতার করতে যাবেন, তাঁর যথাযথ পরিচিতি থাকতে হবে, নেমপ্লেট থাকতে হবে, আইডি কার্ড থাকতে হবে। যে ব্যক্তি গ্রেফতার হচ্ছেন, তিনি চাহিবামাত্র তাঁকে পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। এটি বাধ্যতামূলক। এরপর তাঁকে যখন থানায় নিয়ে আসা হবে, তখন যত দ্রুত সম্ভব গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির পরিবার, বন্ধু বা আইনজীবীকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানাতে হবে কী কারণে, কোন মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে এবং গ্রেফতার ব্যক্তি এখানে আছেন। এটি করতে কোনো অবস্থাতেই ১২ ঘণ্টার বেশি সময় নেওয়া যাবে না। এর মধ্যে জানাতেই হবে।
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তির শরীরে যদি কোনো আঘাতের চিহ্ন থাকে, তিনি যদি বলেন অসুস্থ বোধ করছেন, তাহলে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসাসুবিধা দিতে হবে।
যে পুলিশ সদস্য গ্রেফতার করতে যাবেন, তাঁর যথাযথ পরিচিতি থাকতে হবে। নেমপ্লেট থাকতে হবে, আইডি কার্ড থাকতে হবে। যে ব্যক্তি গ্রেফতার হচ্ছেন, তিনি চাহিবামাত্র তাঁকে পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। এটি বাধ্যতামূলক।
সংশোধনী অনুযায়ী প্রতিটি গ্রেফতারের ক্ষেত্রে বিস্তারিত লিখিত তথ্য থাকতে হবে। কাকে, কেন, কী অভিযোগে, কোন আইনে, পরিবারের কার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, কে গ্রেফতার করেছে,এসব বিস্তারিত লিখিত থাকতে হবে। যে সংস্থাই গ্রেফতার করুক, তাদের সংশ্লিষ্ট অফিসে সব তথ্য থাকতে হবে। এ ছাড়া নিয়মিতভাবে পুলিশ সদর দপ্তর, প্রতিটি পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও থানায় গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা থাকবে।
৫৪ ধারায় গ্রেফতারের বিষয়ে উলে­খযোগ্য পরিবর্তন : ৫৪ ধারায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেফতারের বিষয়ে উলে­খযোগ্য পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, যদি সন্দেহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে যিনি গ্রেফতার করবেন, তাঁকে নিশ্চিত হতে হবে যে তাঁর সামনে অপরাধ ঘটেছে এবং বিশ্বাস করার কারণ আছে যে তিনিই (সন্দেহভাজন) অপরাধটি করেছেন। ৫৪ ধারায় কেন গ্রেফতার করা হলো, তা লিখিত ভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। এখানে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হবে, কেন তাঁর (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য) মনে হলো এই লোক অপরাধ করেছেন। এটি আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে। আর আমলযোগ্য নয় এমন অপরাধের ক্ষেত্রেও এটা করতে হবে। একই সঙ্গে তাঁকে সন্তুষ্ট হতে হবে যে গ্রেফতার না করলে লোকটি পালিয়ে যেতে পারেন। এ দু’টি শর্ত পূরণ হলে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা যাবে। এ ছাড়া অনলাইনে বেইল বন্ড সাবমিট এবং ডিজিটাল সমনের ব্যবস্থা রাখার বিধানও রাখা হয়েছে সংশোধনীতে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই আইন যদি সঠিকভাবে প্রতিপালন করা যায়, তাহলে ইচ্ছামতো মানুষকে গ্রেফতার করে হয়রানি, গ্রেফতার করে অস্বীকার করা, মানুষকে গুম করা, সেগুলো বন্ধের ক্ষেত্রে এটি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কিছু ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করেছি। এখন থেকে কাউকে গ্রেফতার করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা সংস্থার পরিচয় স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। চাহিবামাত্র অবশ্যই আইডি কার্ড প্রদর্শন করতে হবে। এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’
গ্রেফতারের পর ব্যক্তি কী কারণে আটক হলেন, কোন ধারায় মামলা করা হয়েছে-এসব তথ্য লিখিতভাবে সংরক্ষণ করার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে বলে উেেল­খ করেন আইন উপদেষ্টা। 
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি গ্রেফতারের ক্ষেত্রে একটি মেমোরেন্ডাম প্রস্তুত করতে হবে, যাতে আইনি ভিত্তি, গ্রেফতারের কারণ, সময় এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পরিচয় পরিষ্কারভাবে লেখা থাকবে। এটাই হবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রথম ধাপ।’
আইন উপদেষ্টা আরও জানান, ‘গ্রেফতার পদ্ধতির এই সংস্কার নাগরিক অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সংশোধিত এই বিধান যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করবে।’

্রিন্ট

আরও সংবদ