খুলনা | শনিবার | ২৬ জুলাই ২০২৫ | ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

থাইল্যান্ডে ৩ প্রদেশের সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা : বাংলাদেশিদের দূতাবাসের সতর্কবার্তা

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার গোলাগুলি, সীমান্ত বন্ধ সংঘর্ষে নিহত ১২, অধিকাংশই বেসামরিক

খবর প্রতিবেদন |
০১:৪২ এ.এম | ২৫ জুলাই ২০২৫


কম্বোডিয়ার সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনায় থাইল্যান্ডের ১২ নাগরিক নিহত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই বেসমারিক। থাই সীমান্তবর্তী প্রদেশ বান নাম ইয়েনের একটি সামরিক স্থাপনা এবং বেসামরিক এলাকায় অবস্থিত একটি হাসপাতালে বিস্ফোরক রকেট হামলা চালিয়েছে কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী। এক বিবৃতিতে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে এ তথ্য। দেশটির এক সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, কম্বোডিয়া সেনাবাহিনীর ছোড়া রকেটগুলো ছিল বিএম ২১ ঘরানার বিস্ফোরক রকেট। এর জেরে কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করেছে থাই সরকার। ফিরে আসতে বলা হয়েছে, কম্বোডিয়ায় বসবাসকারী থাই নাগরিকদের।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুই দেশই পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণে জড়িয়েছে। ফলে তিন প্রদেশের সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে থাইল্যান্ড।  হামলার পর কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে। থাইল্যান্ডের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, সুরিন প্রদেশের ফানম ডং রাক জেলার সীমান্তের কাছে স্কুল বন্ধ থাকবে। স্থানীয় গণমাধ্যম সিসাকেট এবং বুড়িরামেও স্কুল বন্ধের খবর দিয়েছে।
কে কম্বোডিয়া জানিয়েছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সরিয়ে নিয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা যে কোনো আক্রমণ মোকাবিলায় প্রস্তুত।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ওই গোলাগুলি হয় থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সেনাদের মধ্যে। থাই প্রশাসন জানিয়েছে, এতে অন্তত ১১ জন বেসামরিক এবং একজন সেনা নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশুও আছে।
একজন সরকারি কর্মকর্তার বরাতে থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় স¤প্রচারমাধ্যম থাই পিবিএস জানিয়েছে, কম্বোডিয়া বৃহস্পতিবার সকালে থাইল্যান্ডের একটি গ্রামের মাঝখানে দু’টি বিএম-২১ রকেট নিক্ষেপ করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে সুরিন প্রদেশের কব চুয়াং জেলায়। নিরাপত্তার কারণে ৮৬টি গ্রামের ৩০ থেকে ৪০ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। 
কম্বোডিয়া অভিযোগ করেছে, এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে থাই সেনাবাহিনী কম্বোডিয়ান সামরিক অবস্থানে নৃশংস হামলা চালিয়েছে। এর জবাবে কম্বোডিয়াও থাইল্যান্ডের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নিম্নস্তরে নামিয়ে এনেছে।
কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী বান দান জেলার বাসিন্দা সুতিয়ান ফিউচান বলেন, এলাকাবাসী ইতোমধ্যেই সরে যেতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি সত্যিই গুরুতর। 
থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য এবং পররাষ্ট্র উভয় মন্ত্রণালয় থেকে এ হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে এবং সেই সঙ্গে বেসামরিক এলাকায় হামলা করা থেকে বিরত থাকতে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সোমসাক থেপসুথিন বলেছেন, বৃহস্পতিবারের সহিংসতায় ১১ জন থাই বেসামরিক নাগরিক এবং একজন সৈন্য নিহত হয়েছে। থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৮ বছর বয়সী শিশুও রয়েছে। অন্তত ৩টি এলাকায় কম্বোডিয়ার গোলাবর্ষণের শিকার হয়।
এদিকে কম্বোডিয়ার ছোড়া রকেট হামলায় বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে সীমান্তের ওপারে আঘাত হেনেছে থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনী।
থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনীর বিবৃতি : থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী একটি বিবৃতি প্রকাশ করে ‘কম্বোডিয়ানদের অস্ত্র ব্যবহারের কর্মকাণ্ড’ বর্ণনা করেছে।
বিবৃতি বলা করা হয়েছে, সিসাকেট প্রদেশের কান্থারালাক জেলার বান ফুয়েতে একটি পেট্রোল পাম্পের আশেপাশের এলাকায় হামলায় ৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং দু’জন আহত হয়েছেন।
থাই সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, সুরিন প্রদেশের কাপ চোয়েং জেলার বান চোরোক এলাকায় ৮ বছর বয়সী এক বালকসহ দুই বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং দুই জন আহত হয়েছে। উবোন রাতচাথানি প্রদেশের নাম ইউয়েন জেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় একজন নিহত এবং একজন আহত হয়েছেন। এছাড়া বুরিরাম প্রদেশের বান ক্রুয়াদ জেলায় একজন আহত হয়েছেন।
বিবৃতিতে জানানো হয়, আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় হামলার ফলে বাসস্থান এবং কৃষিজ গবাদি পশুর ক্ষতি হয়েছে। সেনাবাহিনী ‘সহিংস কর্মকাণ্ডের’ নিন্দা জানিয়েছে এবং থাইল্যান্ডের সার্বভৌমত্ব ও নাগরিকদের রক্ষার জন্য তাদের প্রস্তুতির ওপর জোর দিয়েছে। আল জাজিরা লাইভ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
বাংলাদেশিদের দূতাবাসের সতর্কবার্তা : থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে ব্যাংককে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস। বৃহস্পতিবার বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই পরামর্শ দেয় দূতাবাস।
বাংলাদেশ দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্তে ভ্রমণ বা বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদ অবস্থানে থাকতে বা সরে যেতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোন তথ্য বা মত প্রকাশ করার ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও বাংলাদেশি নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজনে +৬৬৮১৮৭০৮৪৪৩ নাম্বারে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
উলে­খ্য, সীমান্ত নিয়ে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার বিরোধের ইতিহাস বেশ পুরোনো। ফরাসি শাসনামলে কম্বোডিয়ার সীমানা নির্ধারণের সময় থেকে এই বিরোধের শুরু। ২০০৮ সালে বিরোধপূর্ণ অঞ্চলের একটি মন্দিরকে কম্বোডিয়া ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে নিবন্ধনের চেষ্টা করলে থাইল্যান্ড প্রতিবাদ জানায়। তখনই সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। যেটির জেরে বিভিন্ন সময় দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের সেনা ও বেসামরিক লোকজন প্রাণ হারিয়েছেন।
এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল বা পান্না ত্রিভুজ নামের একটি এলাকা নিয়ে বেশ কয়েক দশক ধরে দ্ব›দ্ব চলছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে। থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সীমানা মিলিত হয়েছে পান্না ত্রিভুজে এবং থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া উভয়েই এ ভূখণ্ডকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে। পান্না ত্রিভুজে বেশ কয়েকটি প্রাচীন মন্দির রয়েছে।
কয়েক দশক ধরে সীমান্ত সংঘাতের পর ১৫ বছর আগে যুদ্ধবিরতিতে গিয়েছিল দুই দেশ। কিন্তু গত মে মাসে কম্বোডিয়ার এক সেনা থাই সীমান্তের কাছে নিহত হওয়ার পর ফের উসকে ওঠে উত্তেজনা।
গতকাল বুধবার কম্বোডিয়া সীমান্তের কাছে ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরণে এক থাই সেনা গুরুতর আহত হন। তারপর বৃহস্পতিবার সকালে কম্বোডিয়ার দুই সেনা স্থাপনায় বিমান অভিযান চালায় থাইল্যান্ড।
সেই হামলার জবাবে এই রকেট হামলা চালিয়েছে কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী। থাই বিমান হামলার পর কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রালয় এক বিবৃতিতে বলেছিল, এই অভিযানের ‘সমুচিত’ জবাব দেবে কম্বোডিয়া। 
সূত্র : আলজাজিরা, বিবিসি, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান।

্রিন্ট

আরও সংবদ