খুলনা | শনিবার | ২৬ জুলাই ২০২৫ | ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনা

ইউনিফর্ম খুলে মরদেহ ঢেকে দেন সেনা কর্মকর্তা, জানালেন সেদিনের অভিজ্ঞতা

খবর প্রতিবেদন |
০১:৫২ এ.এম | ২৫ জুলাই ২০২৫


রাজধানীর উত্তরায় দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল এ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার পরপরই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দুর্ঘটনার ভয়াবহতা, আগুনের তীব্রতা আর হতাহতদের হৃদয়বিদারক চিত্রের মাঝেও সেনা সদস্যরা দেখিয়েছেন ব্যতিক্রমী মানবিকতা ও পেশাদারত্ব।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে এসে সেনাবাহিনীর ৪৩ রেজিমেন্টের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার মেজর মেহেদী বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর আমরা যখন ঘটনাস্থলে আছি, তখন দেখি বিমান বিধ্বস্তে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির সামনে এক মা ও এক ছেলে বীভৎস অবস্থায় পড়ে আছে। তখন আমাদের গর্বের পোশাক খুলে মরদেহগুলো ঢেকে দিই।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পরপরই আমরা প্রথম রেসপন্স টিম হিসেবে ঘটনাস্থলে প্রবেশ করি। স্পটে প্রবেশের পর দু’টি মরদেহ দেখতে পাই-সম্ভবত একজন মা ও তার ছেলে। দৃশ্যটি এতটাই হৃদয়বিদারক ছিল যে সঙ্গে সঙ্গে আমি ও আমার সহকারী সৈনিক আশিক আমাদের গর্বের ইউনিফর্ম খুলে মরদেহ দু’টি ঢেকে দেই। আমাদের পোশাকের চেয়ে ওই মা-ছেলের মরদেহের সম্মান আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল।’
মেজর মেহেদী বলেন, ঘটনার দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই সেনাবাহিনীর দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। কারণ, বিধ্বস্তস্থলের একদম কাছেই আমাদের অস্থায়ী আর্মি ক্যাম্প ছিল।
তিনি বলেন, ‘বিমানটি যেখানে বিধ্বস্ত হয় সেখানে প্রবল আগুন জ্বলছিল। সেই অবস্থায় আমরা ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পাই, একটি শ্রেণিকক্ষে আগুন জ্বলছে এবং তার সামনেই পড়ে আছে দু’টি মরদেহ। ভয়াবহ আগুনের মধ্যেও আমরা ভেতরে প্রবেশ করি এবং উদ্ধারকাজ শুরু করি। আমাদের উদ্ধার তৎপরতায় হতাহত অনেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, স্টাফ ও অভিভাবকদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। এখনো অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।’
উদ্ধার কার্যক্রমে সেনাবাহিনীর পাশে মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীরাও  দাঁড়িয়েছিল জানিয়ে মেজর মেহেদী বলেন, ‘এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থী আমাদের সঙ্গে উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। তাদের সাহস ও সহযোগিতা আমাদের কাজকে আরও সহজ করেছে। আমরা কৃতজ্ঞ।’
সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, উদ্ধার অভিযানের সময় সেনাবাহিনীর ২৫ জন সদস্য আহত হন, তবে গুরুতর কেউ নন। তারা বর্তমানে ঢাকার সিএমএইচে চিকিৎসাধীন। দুর্ঘটনার ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের বের করতে ভবনের গ্রিল ভেঙে একটি স্লাইডিং পদ্ধতি ব্যবহার করে উদ্ধারকাজ চালানো হয়েছিল। পরে আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছিল। 
নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হওয়ায় বিষয়ে মেজর মেহেদী বলেন, ‘উদ্ধার অভিযান চালানোর সময় যে যার মতো করে হতাহতদের উদ্ধার করেছিল। ফলে সঠিক সংখ্যা আমাদের কাছে নেই। এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য দিতে পারবে মাইলস্টোন স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলো।’

্রিন্ট

আরও সংবদ