খুলনা | শনিবার | ২৬ জুলাই ২০২৫ | ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

পাকিস্তানে বাঘ-সিংহ পোষার হিড়িক, কঠোর হচ্ছে সরকার

খবর প্রতিবেদন |
০৬:০১ পি.এম | ২৫ জুলাই ২০২৫


সাধারণ মানুষ কুকুর-বেড়াল এসব পুষেই থাকেন, তবে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে ‘বিগ ক্যাটস’ অর্থাৎ সিংহ, বাঘ বা চিতা পোষার চল আছে।

পাকিস্তানের অন্যতম বড় শহর লাহোরের উপকণ্ঠে একটা ফার্মহাউসের আশপাশে একটা অদ্ভুত গন্ধ পাওয়া যায়। ভেতরে প্রবেশ করলেই অবশ্য কারণটা স্পষ্ট হয়ে যায়। এখানে ২৬টি সিংহ, বাঘ আর তাদের সন্তান-সন্ততিরা থাকে। সঙ্গে থাকেন এদের মালিক ফায়াজ নামে এক ব্যক্তি।

পাকিস্তানে যারা ব্যক্তিগতভাবে বাঘ-সিংহ পোষেন, তাদের মধ্যে ফায়াজের ফার্মহাউসটাই সবথেকে বড় বলে মনে করা হয়। বছর ৩৮ বয়সি ফায়াজ গত প্রায় ১০ বছর ধরে সিংহ-শাবক আর প্রজননের জন্য সিংহ-সিংহীর জোড় বিক্রি করে থাকেন। পাকিস্তানে তিনিই সম্ভবত সবথেকে বড় সিংহ বিক্রেতা।

মূলত বাঘ, সিংহ, পাহাড়ি সিংহ, চিতা, জাগুয়ার ইত্যাদি পোষা গত কয়েক দশক ধরেই পাকিস্তানে ক্ষমতা, সামাজিক অবস্থান এমনকি রাজনৈতিক আনুগত্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। দেশটির ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ- নওয়াজ- এর নির্বাচনি প্রতীকও হলো বাঘ।

সাম্প্রতিক সময়ে টিকটক আর ইনস্টাগ্রামের মতো শর্ট-ভিডিও দেওয়ার সামাজিক মাধ্যমগুলোর প্রচলন যত বেড়েছে, ততই এ ধরনের পশু পালনের হিড়িক বেড়েছে। এখন তো বিয়ের অনুষ্ঠানেও বাঘ-সিংহ নিয়ে আসা শুরু হয়েছে।

এদিকে সপ্তাহ দুয়েক আগে লাহোরে এক গৃহপালিত সিংহের পাঁচিল টপকিয়ে পালিয়ে গিয়ে রাস্তায় এক নারী ও তার দুই সন্তানের ওপরে হামলা করার ঘটনার পরে সরকার এ ব্যাপারে কঠোর হতে শুরু করেছে। বেআইনিভাবে বাঘ-সিংহ যারা পুষছেন, তাদের বিরুদ্ধে একটা বিশেষ অভিযান শুরু করেছে সরকার। এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে ফায়াজের মতো অনেকের ওপরেই।

পাকিস্তানে বন্য প্রাণী পালন করার নিয়মটা কী?
পাকিস্তানের নতুন নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেকটি পশুর নথিভুক্তিকরণের জন্য তার মালিককে এককালীন ৫০ হাজার পাকিস্তানি টাকা দিতে হবে। এছাড়াও একটি ফার্মে সর্বাধিক দুটি প্রজাতির মাত্র ১০টি পশু রাখা যাবে।

এই নিয়ম ভঙ্গ করলে দুই লাখ পাকিস্তানি রুপি পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে এবং গুরুতর ক্ষেত্রে সাত বছর পর্যন্ত জেলও হতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে, আরেকটি খামারে অভিযান চালায় বন্যপ্রাণী অধিদপ্তর। সেখানে পাঁচটি সিংহ শাবককে খাঁচার মধ্যে মলিন অবস্থায় পাওয়া যায়। খাঁচাগুলো খালি দেখে এক কর্মকর্তা প্রশ্ন তোলেন, কিন্তু বাচ্চাগুলোর মা-বাবা কোথায়?

তদন্তে জানা যায়, মালিক আগেই পালিয়ে গেছেন এবং কেবল একজন কেয়ারটেকারকে রেখে গেছেন। যিনি বলেন, আমি মাত্র দুই সপ্তাহ আগে চাকরি নিয়েছি। পরে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।

উদ্ধার করা শাবকগুলোকে লাহোরের সরকারি চিড়িয়াখানায় স্থানান্তর করা হয়েছে এবং তারা এখন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পৃথক অবস্থায় রয়েছে।

পাকিস্তানের বন্যপ্রাণী ও পার্কস বিভাগের মহাপরিচালক মোবিন এলাহী বলেন, পাঞ্জাবে হয়তো শত শত, এমনকি হাজার হাজার অবৈধভাবে রাখা বাঘ ও সিংহ রয়েছে। তিনি ধারণা করছেন, ৩০-৪০ শতাংশ মালিক হয়তো প্রাণীগুলোর কথা প্রকাশ্যে শিকার করবেন না।

তিনি আরও বলেন, দেশে ইনব্রিডিং বা আত্মীয় প্রজননের মাত্রা এত বেশি যে অনেক প্রাণী হয়তো মারাত্মক শারীরিক সমস্যায় ভুগছে এবং তাদের প্রয়োজনে দুঃখজনকভাবে ‘ইউথানাইজ’ বা মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।

গত ডিসেম্বরে আরও একটি সিংহ লাহোরে পালিয়ে গেলে তাকে গুলি করে হত্যা করতে হয়েছিল।
সুত্র: বিবিসি বাংলা

্রিন্ট

আরও সংবদ