খুলনা | রবিবার | ২৭ জুলাই ২০২৫ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

নিজেদের মাঠে ‘নিষিদ্ধ’ হতে যাচ্ছে কোহলির বেঙ্গালুরু

ক্রীড়া প্রতিবেদক |
১১:৫৬ পি.এম | ২৫ জুলাই ২০২৫


বিপদ যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর। গত ৪ জুন আইপিএলের শিরোপা উৎসবের সময় স্টেডিয়ামের বাইরে পদদলিত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু ও অন্তত ৭০ জন আহত হওয়ার ঘটনায় ফ্যাঞ্চাইজিটিকেই দায়ী করেছে ভারতের কর্ণাটক রাজ্য সরকার। গ্রেফতার করা হয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজির বিপণন প্রধান নিখিল সোসালেকে। এমনকি দলটির সবচেয়ে বড় তারকা বিরাট কোহলির বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিসিআই) মালিকপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।
প্রথমবারের মতো আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকে দুঃসময় পার করতে থাকা বেঙ্গালুরু এবার পেল আরেকটি দুঃসংবাদ। কোহলিদের ঘরের মাঠ এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামকে বড় ইভেন্ট আয়োজনের জন্য অনুপযুক্ত ঘোষণা করে সেখানে ম্যাচ আয়োজন বন্ধের সুপারিশ করেছে বিচারপতি জন মাইকেল কুনিয়ার নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিশন। কর্ণাটক সরকার যদি কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়, তাহলে ২০২৬ আইপিএলে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে খেলতে পারবেন না কোহলিরা।
কর্ণাটক থেকে প্রকাশিত দৈনিক ডেকান হেরাল্ড জানিয়েছে, তদন্ত কমিশন এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের নকশা ও কাঠামো গণজমায়েতের জন্য অনুপযুক্ত ও অনিরাপদ।
স্থানীয় পুলিশ অনুমতি না দিলেও সেদিন বেঙ্গালুরু শহরের বিধান সৌধ থেকে ‘ভিক্টরি প্যারেড’ করতে করতেই চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পৌঁছান কোহলি, রজত পাতিদার, ক্রুনাল পান্ডিয়া, ফিল সল্টরা।
ওই দিন সকালেই ফ্র্যাঞ্চাইজিটি তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেজগুলোতে কোহলিকে দিয়ে প্রচার চালায়। ভিডিও পোস্টে কোহলি ভক্ত–সমর্থকদের শিরোপা উৎসবে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
ডেকান হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৩২ হাজার হলেও কোহলির আমন্ত্রণে স্টেডিয়াম এলাকায় হাজির হন প্রায় ৩ লাখ মানুষ, যা প্রত্যাশার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।
তদন্ত কমিশন বলেছে, ভবিষ্যতে যেকোনো ভেন্যুকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলতে হবে। এ জন্য তারা কয়েকটি প্রয়োজনীয় বিষয় তালিকাভুক্ত করেছে। সেগুলো হলো-
১. স্টেডিয়াম এলাকায় দর্শকদের চলাচলের জন্য মূল সড়ক থেকে আলাদা পথ নির্মাণ করতে হবে যেন সবাই সারিবদ্ধ ও সুশৃঙ্খলভাবে আসা-যাওয়া করতে পারেন। ২.  প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য পর্যাপ্ত গেট থাকতে হবে। ৩. সমন্বিত গণপরিবহন প্রবেশাধিকার পয়েন্ট ও পর্যটন কেন্দ্র থাকতে হবে। ৪.  উপচে পড়া দর্শকদের সামাল দিতে পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা ও গাড়ি সহজেই বের হওয়ার মতো অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে।
কমিশন তাদের প্রতিবেদনে উলে­খ করেছে, এ ধরনের অবকাঠামোগত পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান স্থানে (এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে) বিপুল জনসমাগমের ইভেন্ট আয়োজন অব্যাহত রাখা জননিরাপত্তা, নগরে চলাফেরা এবং জরুরি প্রস্তুতির জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে।
৩২.৭৯ একর জমির ওপর নির্মিত এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ১৯৭৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়ে আসছে। এই মাঠে আইপিএলের দু’টি ফাইনালসহ (২০১৪ ও ২০১৬ সালে) ম্যাচ হয়েছে ১০০টি। স্টেডিয়ামটি পরিচালনার দায়িত্বে আছে কর্ণাটক রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা (কেএসসিএ)। তবে স্টেডিয়ামটির মালিকানা কর্ণাটক রাজ্যের গণপূর্ত বিভাগের। তারা ১৯৯৯ সালের জুলাইয়ে ৯৯ বছরের জন্য কেএসসিএকে স্টেডিয়াম ইজারা দেয়।
কমিশন আরও বলেছে, স্টেডিয়ামের গেটগুলো সরাসরি ফুটপাতের সঙ্গে সংযুক্ত এবং এই পথ মোটেও প্রশস্ত নয়। মাত্রাতিরিক্ত জনসমাগম হওয়ায় সেদিন ফুটপাতের পাশাপাশি মূল সড়কেও সমর্থকদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়েছিল, যা পথচারী ও যানবাহনের চলাচল বাধাগ্রস্ত করেছিল।
এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সেদিন মাত্র ৭৯ জন পুলিশকে মোতায়েন করা হয়েছিল। দর্শকেরা হুড়োহুড়িতে পদদলিত হওয়ার সময় পুলিশ সদস্যদের অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। নিরাপত্তার অভাবে দুষ্কৃতিকারীরা ভিড়ে মিশে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল, যা ঝুঁকি বাড়িয়েছিল।
বিচারপতি জন মাইকেল কুনিয়ার প্যানেল কেএসসিএর প্রধান রঘুরাম ভাট, সাবেক সচিব এ শঙ্কর, সাবেক কোষাধ্যক্ষ ইএস জয়রাম, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর সহ-সভাপতি রাজেশ মেনন, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ডিএনএ এন্টারটেইনমেন্ট নেটওয়ার্কসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভেঙ্কট বর্ধন, কোম্পানিটির সহসভাপতি সুনীল মাথুর, পুলিশ কর্মকর্তা বি দয়ানন্দ, বিকাশ কুমার, শেখর টেক্কান্নাভার, সি বালাকৃষ্ণ এবং এ কে গিরিশের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, কর্ণাটক সরকার মন্ত্রিসভার পরবর্তী বৈঠকেই সুপারিশগুলো নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ