খুলনা | বুধবার | ০৬ অগাস্ট ২০২৫ | ২১ শ্রাবণ ১৪৩২

সময়ের খবরের নিউজে টনক নড়েছে কর্তৃপক্ষের * ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা আটক * হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী চোখ বেঁধে হাতুড়ি ও প্লাস দিয়ে নির্যাতন মামলা উঠাতে দেয়া হচ্ছে হুমকি

ফুলতলায় ইসলামী ব্যাংকের ভিতর গ্রাহক নির্যাতনে তোলপাড়ের সৃষ্টি

এন আই রকি |
০১:২৯ এ.এম | ২৬ জুলাই ২০২৫


খুলনায় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ফুলতলা শাখার স্টোর রুমে গ্রাহকের চোখ ও মুখ বেঁধে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে এবং প্লাস দিয়ে নখ উঠানোর সংবাদ সময়ের খবরে প্রকাশ হওয়ার পর টনক নড়েছে  কর্তৃপক্ষের। নিউজ প্রকাশের পরপরই ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেন।   
বৃহস্পতিবার সংবাদ প্রকাশের পর পরই ব্যাংকে সকল কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। এ সময় একটি রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেন। তবে ভুক্তভোগী সাইফুল­াহ হাজেরী মামা জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ফুলতলা থানয় ব্যাংকের তিনজন কর্মকর্তাসহ ৭/৮ জনকে অজ্ঞতানামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফুলতলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জেল­াল হোসেন। তিনি শুক্রবার বলেন, ভুক্তভোগীর মামা বৃহস্পতিবার রাতে মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় ব্যাংকের কর্মকর্তা আশিকুর রহমান, মিজানুর রহমান এবং আব্দুল আল মামুনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
ভুক্তভোগী সাইফুল­াহ হাজেরী গত বৃহস্পতিবার দুপুরে জানান,  মামলা করার পর থেকে হুমকিতে আছে। মামলা উঠানোর জন্য বিভিন্ন দিক থেকে চাপ দেয়া হচ্ছে। আমাদের কাছে যে টাকা পাবে সেটা আমরা দিতে রাজি হয়েছি। আমাদের কাছ থেকে একাধিক ব্লাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্প লিখে নিয়েছে তারা। তারপরেই অমানুষিক নির্যাতন। দুইজনে বিপক্ষে মামলা করায় উল্টো আমাদেরই হুমকিতে রেখেছে তারা। এমন অবস্থায় আমরা কি করব বুঝতেছিনা। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা ও খুব ভালো হচ্ছে না। আগামীকাল এখান থেকে অন্য হাসপাতালে যাবো উন্নত চিকিৎসার জন্য। 
কি ঘটেছিল ব্যাংকে : ভুক্তভোগী সাইফুল­াহ হাজেরী বুধবার খুলনা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রতিবেদককে জানায়, মঙ্গলবার ফুলতলার ইসলামী ব্যাংক শাখায় আমাকে যেতে বলা হয়। আনুমানিক বিকেল ৪টার দিকে আমি ব্যাংকে যাই। ঐসময় আমার বাবাও ব্যাংকে ছিলেন। ব্যাংকের কর্মকর্তারা আমাকে এজেন্ট ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে বিভিন্নভাবে দোষারোপ করার চেষ্টা করে। আমি তাদের বলি আমরা যদি টাকা আত্মসাত করতাম তাহলে এভাবে চলাফেরা করতাম না। তাছাড়া আমার বাবা জমি বিক্রি করে খুব দ্রুতই এই ক্ষতিপূরণ দিবে। ইতিমধ্যে আপনারা ব্ল্যাংক চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছেন। তখন ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলে, দ্রুত টাকা পরিশোধ করতে হবে না হলে সমস্যা। পাশাপাশি আমার ব্লাঙ্ক চেকে স্বাক্ষর করতে বলে। আমি তখন আমার বাবাকে চেকবই আনার জন্য বাড়িতে পাঠায়। এই সুযোগে ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার আশিক আমার হাত ধরে ব্যাংকটির স্টোর রুমে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার সাথে সাথে আমার চোখ ও মুখ বেঁধে ফেলে ৪/৫ জন। এরপর তারা হাতুড়ি দিয়ে আমার পায়ের তালু এবং হাটুতে পেটাতে থাকে। পাশাপাশি প্লাস দিয়ে আমার নখ উঠানোর চেষ্টা করে। এরপর তারা স্ট্যাম্প, চেকসহ সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর করিয়ে রাখে।
নির্যাতনের নেপথ্যের কারণ : নগরীর খানজাহান আলী থানাধীন ইস্টার্ন গেট এলাকায় ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকের মালিক মেসার্স হাজেরী এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত¡াধিকারী এ এইচ এম শফিউল­াহ হাজেরীর ছেলে ভুক্তভোগী সাইফুল­াহ হাজেরী। চলতি মাসে এজেন্ট ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের প্রায় ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায় এজেন্ট ব্যাংকের ক্যাশ ইনচার্জ কাগজি মাহবুবুর রহমান এবং মার্কেটিং অফিসার মনিরুল গাজী। এই ঘটনার পর ব্যাংকটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে একটি টিম সেখানে আসে। পাশাপাশি দুইজন প্রিন্সিপাল অফিসার দিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়। অন্যদিকে গ্রাহকদের তাগেদা এবং ব্যাংকটির ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে ফুলতলার ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা মরিয়া হয়ে পড়ে। তারা এজেন্ট ব্যাংকটির মালিক শফিউল­াহ হাজেরীর নিকট থেকে একাধিক ব্ল্যাংক চেকসহ স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগীর বাবা এ এইচ এম শফিউল­াহ হাজেরী বলেন, গ্রাহকের টাকা পরিশোধের জন্য আমরা জমি বিক্রির কাজ শুরু করেছি। ব্যাংকের কথা অনুযায়ী চেক ও স্ট্যাম্পেও স্বাক্ষর করেছি। তারপরও আমার ছেলেকে এইভাবে ব্যাংকের ভিতর নির্যাতন করাটা ঠিক হয়নি।
ইসলামী ব্যাংকের ফুলতলা শাখা ব্যবস্থাপক আনিসুর রহমান জানান, ঘটনার সময় আমি ব্যাংকে ছিলাম না। কি হয়েছে এবং কেন হয়েছে এটা আমি পরিস্কারভাবে জানি না। যে কর্মকর্তারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ