খুলনা | রবিবার | ২৭ জুলাই ২০২৫ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

গোপালগঞ্জে সংঘর্ষ

আরেকটি হত্যা মামলা, ১২ মামলায় আসামি ১০১৩৭, গ্রেফতার ৩১৪ বিজিবি প্রত্যাহার

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি |
০১:২১ এ.এম | ২৭ জুলাই ২০২৫


গোপালগঞ্জে এসসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা ও সমাবেশ’ ঘিরে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় মারা যাওয়া রমজান মুন্সীর (৩২) ভাই জামাল মুন্সী বাদী হয়ে শনিবার গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতদের আসামি করা হলেও সংখ্যা উলে­খ করা হয়নি।
গোপালগগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মির মোঃ সাজেদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এ নিয়ে সহিংসতার ঘটনায় ৫টি হত্যাসহ মোট ১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে ১০ হাজার ১৩৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৬৮৭ জনের নাম উলে­খ করা হয়েছে। আর ৯ হাজার ৪৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।  এসব মামলায় শনিবার পর্যন্ত ৩১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান ওসি।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই এনসিপির সমাবেশ ঘিরে গোপালগঞ্জ শহরে যানজট ছিল। তাই রিকশাচালক রমজান মুন্সি (৩২) ব্যাটারিচালিত রিকশা গ্যারেজে রেখে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেন। শহরের লঞ্চঘাটের সামনে এসে দাঁড়ান। সেখানে অজ্ঞাতনামা কয়েক হাজার লোক লাঠিসোটা, ঢাল-সুড়কি, রামদা, ট্যাটাসহ দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মিছিল করতে করতে এনসিপির পৌরপার্কের সমাবেশস্থলের দিকে দৌড়ে যেতে থাকেন। লোকজন লঞ্চঘাট এলাকার দোকানপাট ভাঙচুর ও পুলিশ বক্সে আগুন দেয়। এ সময় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিলে তারাও ধাওয়া দিয়ে যৌথবাহিনীর সদস্যদের ওপর আক্রমণ করে। এ সময় রমজান লঞ্চঘাটের ফলপট্টিতে অবস্থান নেন। 
এক পর্যায়ে অজ্ঞাত দুস্কৃতকারীরা যৌথবাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। যৌথবাহিনীর সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছুড়ে। এ সময় রমজান নিরাপদে চৌরঙ্গী সিনেমা হলের গলিতে অবস্থান নেন। বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে সিনেমা হলের সামনে দাঁড়ানো অবস্থায় রমজানের বুকের ডান পাজরে গুলি লাগে। সেখানে তিনি লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রমজান মুন্সি বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দিবাগত রাত ১টা ৪৫ মিনিটে মারা যান। 
এদিকে শনিবার গোপালগঞ্জ থেকে বিজিবি প্রত্যাহার করা হয়েছে। সকালে বিজিবি সদস্যরা  যশোরের উদ্দ্যেশ্যে গোপালগঞ্জ ত্যাগ করেন। গত ১৭ জুলাই গোপালগঞ্জে ১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় তারা গতকাল কর্মস্থলে ফিরে গেছেন।
১১ মামলার তথ্য : এর আগে গত ১৯ জুলাই রাতে নিহত ৪ যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় ৪টি হত্যা মামলা দায়ের করে। এসব মামলায় অজ্ঞাত ৫ হাজার ৪০০ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া গোপালগঞ্জ সদর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে ২টি ও জেলা কারাগারে হামলার ঘটনায় একটি মামলা করা হয়। অন্যদিকে, বিশেষ ক্ষমতা আইনে কাশিয়ানী থানায় দুইটি, কোটালীপাড়া থানায় একটি ও টুঙ্গিপাড়া থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। এ ঘটনায় ২ জনকে নতুনভাবে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে শনিবার দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মোট ৩১৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ৫ ঘণ্টার হামলা-সহিংসতায় ৪ জনের মৃত্যু হয়। পরদিন ১৭ জুলাই গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। সেদিন বিকেলে (বুধবার) শহরে ১১৪ ধারা ও রাত ৮টা থেকে পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত কারফিউর সময়সীমা বাড়ানো হয়। এরপর একাধিকবার কারফিউর সময় বাড়ানো হয়। গত রোববার (২০ জুলাই) কারফিউ ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেয় জেলা প্রশাসন। তারপর থেকে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। জেলার জীবনযাত্রাও অনকেটা স্বাভাবিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা চলছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। সব রুটে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক। গত ৩ দিনে এ সংক্রান্ত মামলায় মাত্র ২ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এ কারণে জেলাব্যাপী গ্রেফতার আতঙ্কও কমে এসেছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ