খুলনা | বুধবার | ০৬ অগাস্ট ২০২৫ | ২১ শ্রাবণ ১৪৩২

‘আর কেউ যাতে রাষ্ট্রকে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলতে না পারে’

নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নিতে চায়, তার পরিণতি হাসিনার মতো হবে: জোনায়েদ সাকি

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০২:২৭ এ.এম | ২৯ জুলাই ২০২৫


গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আর কেউ যাতে বাংলাদেশে রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানসমূহকে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলতে না পারে। সোমবার বিকেলে খুলনার শিববাড়ী মোড়ে আয়োজিত জুলাই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই কথা বলেন তিনি।  
জোনায়েদ সাকি বলেন, নির্বাচন দিলে হেরে যাবে এই ভয়ে তারা পুরো ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চেয়েছিল। কেন একজন ব্যক্তি চাইলেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে পারে? কেউ একজন চাইল আর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখল বছরের পর বছর, একটার পর একটা তামাশার নির্বাচন করে সে টিকে গেল! এর কারণ, সে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাটাকে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেছিল। আমাদের দেশে যতগুলো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আছে- পুলিশ, প্রশাসন, আইন-কানুন, সংবিধান, সেনাবাহিনী- সবকিছু পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেছিল। এভাবে পকেটে ঢুকিয়ে, জনগণের ওপর স্টিমরোলার চালিয়ে, ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল তারা। দেশ উজাড় করে দিয়ে বিদেশীদের পায়ে ধরে ক্ষমতা রক্ষা করতে চেয়েছিল তারা। এজন্য আমাদের আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে হবে, একইসাথে রাষ্ট্রকে যে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলা যায়- সেটা বাতিল করতে হবে। আর কেউ যাতে বাংলাদেশে রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানসমূহকে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলতে না পারে। আমরা সেই কারণে লড়াই করেছি। যখন আমরা যুগপৎ লড়াই করেছি, তখনই আমরা এই প্রশ্নটা এনেছিলাম।
জোনায়েদ সাকি বলেন, এই ব্যবস্থা তারা করতে পারে কারণ, আমাদের সংবিধানে ক্ষমতার কোনো ভারসাম্য নাই। ওখানে চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স নাই। কেউ কাউকে জবাবদিহি করতে পারে না। সব ক্ষমতা কেবল একজন ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত। যে-ই প্রধানমন্ত্রী হোক, পুরো রাষ্ট্র তার পকেটে। এইরকম ক্ষমতা আছে বলেই তারা আমাদের ওপর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে পেরেছে। সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। শেখ হাসিনা এই ব্যবস্থার চূড়ান্ত নগ্ন চেহারাটা আমাদের সামনে দেখিয়েছে। যার পরিণতিও সে দেখেছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আর কেউ যদি আমাদের দেশের নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নিতে চায়, তার পরিণতি শেখ হাসিনার মতো হবে। দেশ ছেড়ে পালাতে হবে।  
বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনের কথা উলে­খ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, আমাদের দেশের সমস্ত জনগণের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছিল শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসন। আমরা সেটা থেকে মুক্তি পেয়েছি, সেটা আমাদের গণঅভ্যুত্থানের অর্জন। কিন্তু এবারের লড়াইয়ে শুধু এতটুকু অর্জনের জন্যই আমাদের সন্তানরা, আমাদের নাগরিকরা এভাবে আত্মাহুতি দেন নাই, এভাবে শহীদ হন নাই। হাজার হাজার তরুণ আহত হয়ে পঙ্গুত্বের চিহ্ন বহন করে চলেছে।
তিনি বলেন, আগের শাসকরা বিভেদের সংস্কৃতি চালু করেছিল। বাঙালি বনাম মুসলমান। তারা যেভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে চাপিয়েছে তাতে তারা ঘৃণা ছড়িয়েছে। এখন যেখানে আমাদের ঘৃণার বদলের মিলনের সংস্কৃতি দরকার, জনমানুষের সংস্কৃতি দরকার, সেখানে আবারও আরেক দল পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে আসছেন, আবারও তারা বিভেদের রাজনীতি নিয়ে আসছেন। এখানে বিভিন্ন পরিচয়ের মানুষ আছে, কিন্তু সবার একটা পরিচয় নিশ্চিত আছে, সবাই বাংলাদেশের নাগরিক, এবং নাগরিক মর্যাদাই হচ্ছে প্রধান। 
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পাটকল চালু করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়।
সমাবেশের আগে “বন্ধকৃত ২৬টি পাটকল-নিউজপ্রিন্ট-হার্ডবোর্ড মিলসহ খুলনার সকল শিল্পকারখানা চালু করতে হবে” এই দাবি নিয়ে পদযাত্রায় অংশ নেন দলের নেতাকর্মীরা। পদযাত্রাটি খুলনার খালিশপুর থেকে শিববাড়ী পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।
গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলার সভাপতি মুনীর চৌধুরী সোহেলের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন গণসংহতি আন্দোলন রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য দেওয়ান আব্দুর রশীদ নীলু ও মোঃ অলিয়ার রহমান শেখ। বক্তা করেন দলের খালিশপুর উপজেলা আহবায়ক মোশাররফ হোসেন, জেএসডির খুলনা মহানগরের সভাপতি খান লোকমান হাকিম, ভাসানী অনুসারী পরিষদ মহানগরের সভাপতি শেখ আবদুল হালিম, গণসংহতি আন্দোলন অভয়নগর উপজেলার সদস্য সচিব সামস সারফিন সামন, খালিশপুর দৌলতপুর জুটমিল যৌথ কারখানা কমিটির নেতা মনির হোসেন মনি, প্লাটিনাম জুটমিলের শ্রমিকনেতা নূরুল ইসলাম, দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সভাপতি নূর মোহাম্মদ, হার্ডবোর্ড মিলের শ্রমিক নেতা মোঃ জহিরুল ইসলাম জব্বার, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সহ সভাপতি সহ সভাপতি মিজানুর রহমান বাবুসহ বিভিন্ন বন্ধুপ্রতীম সংগঠন ও দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

 

্রিন্ট

আরও সংবদ