খুলনা | বুধবার | ০৬ অগাস্ট ২০২৫ | ২১ শ্রাবণ ১৪৩২

সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইসি’র তোড়জোড় # সীমানা পরিবর্তন আসছে ৩৯ সংসদীয় আসনে # ভোটকেন্দ্র সংস্কারের চাহিদা চেয়ে স্কুলগুলোতে চিঠি

আসন কমছে বাগেরহাটের, বাড়ছে গাজীপুরের

খবর প্রতিবেদন |
০১:০৬ এ.এম | ৩১ জুলাই ২০২৫


আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। বুধবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আসন ভিত্তিক জনসংখ্যা অনুপাতের ভিত্তিতে আসন বিন্যাসের কবলে পড়েছে বৃহত্তর খুলনার জেলা বাগেরহাট। সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী সবচেয়ে কম জনসংখ্যা হলো বাগেরহাট। আর সব চেয়ে বেশি গাজীপুর। তাই কপাল পুড়ছে বাগেরহাটের। বুধবার নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, গাজীপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছেন। এজন্য গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে সীমানা নির্ধারণ কারিগরি কমিটি। এছাড়া বাগেরহাটে ভোটার সংখ্যা কম হওয়ায় এ জেলা থেকে একটি আসন কমানোর জন্য প্রস্তাব দিয়েছে কমিটি। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। 
তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি যেই আসনে ভোটার সেখানে একটি আসন বাড়ানোর জন্য বলেছে কারিগরি কমিটি। এছাড়া সবচেয়ে কম ভোটার যেই আসনে, সেখান থেকে একটি আসন কমানোর বিষয়ে প্রস্তাব করেছে কমিটি। 
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল বলেন, সীমানা পুনঃনির্ধারণ আইন ২০২১ এর ২১/৬ ধারায় বলা হয়েছে সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং আদমশুমারি এ তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে এই সীমানাটা নির্ধারণ করতে হবে। তবে আদমশুমারি ২০২২ অনুযায়ী কিছু বিষয় আছে একটু অসামঞ্জস্যপূর্ণ। আমাদের কাছে রয়েছে হালনাগাদ ভোটার সংখ্যা।
এছাড়া আমাদের ভোটার তালিকা ভিত্তিতে, ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে কমিটি এভারেজ আসনভিত্তিক ভোটার সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন। সেটি হলো ৪ লাখ ২০ হাজার সামথিং, অর্থাৎ ৩০০ আসনের এবার ভোটার সংখ্যা হলো ৪ লাখ ২০ হাজার। তারা ভোটারের সংখ্যার ভিত্তিতে একটা গ্রেডিং করেছেন, সেটি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ভোটার কোন জেলায় এবং সবচেয়ে কম ভোটার কোন জেলায়। কারিগরি কমিটি ফাইন্ড আউট করেছেন, সবচেয়ে বেশি ভোটার যে জেলায় সেই জেলায় একটি আসন তারা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন এবং সর্বনিম্ন ভোটার যে জেলায় সেই জেলায় একটি আসন কমানোর প্রস্তাব করেছেন।
তিনি বলেন, টেকনিক্যাল কমিটির তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ভোটার হচ্ছে গাজীপুর। আর বাগেরহাট জেলায় সবচেয়ে কম। মানে বিশেষায়িত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী তারা ভোটার সংখ্যা এবং জনসংখ্যা এনালাইসিস করে তাদের প্রস্তাব হচ্ছে যে বাগেরহাট একটি আসন কমবে, গাজীপুরে জনসংখ্যা ও ভোটারের সংখ্যার ভিত্তিতে একটি আসন বৃদ্ধি পাবে।
ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আমরা ৬৪ জেলার গড় ভোটার সংখ্যা নির্ধারণ করছি। সেটি হচ্ছে ৪ লাখ ২০ হাজার ধরলে এটার ওপরে আছে কিছু, নিচে আছে কিছু। দেখা গেছে ৪ লাখ ২০ হাজার এর ওপরের যেই আসনগুলো বা জেলাগুলো সেগুলোতে যদি একটা আসন আমরা বাড়াই শুধুমাত্র গাজীপুর জেলায় এই এভারেজের ওপরে থাকে। আর বাকিগুলো এভারেজের নিচে চলে আসে। যার কারণে বাকিগুলোর বাড়ানোর যে প্রস্তাব সেটি তারা দেয়নি আর এভারেজের নিচে যে কয়টা আছে শুধুমাত্র দেখা গেছে, বাগেরহাটেরটা কমাই তাহলে মোটামুটি ভাবে এভারেজের কাছাকাছি থাকে।
আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। শিগগিরই গেজেট প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।
তিনি জানান, এ সংক্রান্ত দাবি-আপত্তি গ্রহণ করা হবে ১০ আগস্ট পর্যন্ত। পরে আসনভিত্তিক শুনানি শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, সিলেটসহ বিভিন্ন সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্র্নিধারণে টেকনিক্যাল কমিটি ৪২টি আসনে ছোট-বড় সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন এসব প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে তিনি বলেন, সীমানা পুনঃনির্ধারণের গেজেট প্রকাশের অনুমতি দিয়েছে ইসি। আগামীকালের মধ্যে প্রকাশ হবে।
তিনি বলেন, সীমানা নির্ধারণে ইসি ১৬ জুলাই ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করেছিল। তারা ভোটারের সংখ্যা অনুযায়ী গ্রেডিং করেছেন। ১, ২, ৩ আসন বিশিষ্ট জেলাকে ভাঙার সুযোগ নেই। এসব জেলার সীমানা বাড়ানো বা কমানোর বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। ২৫০ এর কাছাকাছি জেলার সীমানা পুনঃনির্ধারণে আবেদন ছিল না। তাই এসব জায়গায় পরিবর্তন করা হয়নি। 
নির্বাচন কমিশনার বলেন, সংবিধানের ১১৯-১২৪ ধারা অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনে সীমানা নির্ধারণ করার দায়িত্ব কমিশনের। এই সীমানা নির্ধারণে কিছু বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ নেওয়া হয়। একটা বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করা হয়। নানা বিষয় গুরুত্ব দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ২০২২ সালের জনশুমারির কিছু তথ্য নেওয়া হয়।
সীমানা পরিবর্তন আসছে ৩৯ সংসদীয় আসনে : সংসদীয় আসনের জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যাসহ সামগ্রিক বিষয় সামনে রেখে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ৩৯টির সীমানায় পরিবর্তন আসছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। বুধবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।  
ইসি আনোয়ারুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষায়িত কারিগরি কমিটি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনরায় নির্ধারণে সুপারিশ জমা দিয়েছে। সংসদীয় ৩০০ আসনের মধ্যে ৩৯টির সীমানা পরিবর্তন হচ্ছে। গাজীপুরে একটি আসন বাড়ছে এবং বাগেরহাটে একটি আসন কমছে।
তিনি বলেন, সীমানা পুনঃনির্ধারণ আইনে বলা হয়েছে সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ব্যবস্থা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং আদমশুমারি, এ তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে। তবে আদমশুমারি ২০২২ অনুযায়ী কিছু বিষয় আছে একটু অসামঞ্জস্যপূর্ণ। আমাদের কাছে আছে হালনাগাদ করা ভোটার সংখ্যা। এ ছাড়া, আমাদের ভোটার তালিকা ও সংখ্যার ভিত্তিতে কমিটি এভারেজ আসনভিত্তিক ভোটার সংখ্যা নির্ধারণ করেছে। সেটি হলো প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার।
তিনি আরও বলেন, উনারা ভোটারের সংখ্যার ভিত্তিতে একটা গ্রেডিং করেছেন, সেটি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ভোটার কোন জেলায় এবং সবচেয়ে কম ভোটার কোন জেলায়। কারিগরি কমিটি ফাইন্ড আউট করেছেন যে, সবচেয়ে বেশি ভোটার যে জেলায় সেই জেলায় একটি আসন উনারা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন এবং সর্বনিম্ন ভোটার যে জেলায় সেই জেলায় একটি আসন কমানোর প্রস্তাব করেছে। সেই আলোকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
যে ৩৯ আসনের সীমানা পরিবর্তন আসছে, তা হলো পঞ্চগড়-১, ২; রংপুর-৩; সিরাজগঞ্জ-১, ২; সাতক্ষীরা-৩, ৪; শরীয়তপুর-২, ৩; ঢাকা-২, ৩, ৭, ১০, ১৪, ১৯; গাজীপুর-১, ২, ৩, ৫, ৬; নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪, ৫; সিলেট-১, ৩; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, ৩; কুমিল­া ১, ২, ১০, ১১; নোয়াখালী ১, ২, ৪, ৫; চট্টগ্রাম-৭, ৮ ও বাগেরহাট-২, ৩ আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়েছে।
ভোটকেন্দ্র সংস্কারের চাহিদা চেয়ে প্রাইমারি স্কুলগুলোতে চিঠি : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে, এমন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কারের লক্ষ্যে চাহিদা চেয়ে চিঠি দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মিরাজুল ইসলাম উকিলের সই করা চিঠিতে মঙ্গলবার এ তথ্য জানানো হয়। সকল জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।  
উলে­খ্য, এই কার্যক্রমের জন্য আর্থিক বরাদ্দ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের রাজস্ব খাতের পরিচালন বাজেটের আওতায় দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৩ সালের ২০ মে জারি করা পরিপত্রের ক্ষুদ্র মেরামত সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।
পরিপত্রে নির্ধারিত ছকে জেলার সকল উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিস হতে তথ্য সংগ্রহ ও একত্রিত করে আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে হার্ডকপি (মূলকপি) এবং সফট কপি ([email protected],[email protected])  ই-মেইলে পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) বরাবর পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
তবে যেসব ভোটকেন্দ্রে (বিদ্যালয়ে) এ মুহূর্তে মেরামত/সংস্কারের প্রয়োজন নেই, সেসব বিদ্যালয়ের চাহিদা না পাঠানোর জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৪৪ হাজার ভোটকেন্দ্র ছিল। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছিল ৪০ হাজারেরও বেশি এবং ভোটকক্ষ ছিল ২ লাখের বেশি। দশম সংসদ নির্বাচনে ৩৭ হাজার ৭০৭টি কেন্দ্র ও ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮টি ভোটকক্ষ এবং নবম সংসদ নির্বাচনে ৩৫ হাজার ২৬৩টি কেন্দ্র ও ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৭৭টি ভোটকক্ষ ছিল।

্রিন্ট

আরও সংবদ