খুলনা | বুধবার | ০৬ অগাস্ট ২০২৫ | ২১ শ্রাবণ ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমলো, স্বস্তিতে বাংলাদেশ : প্রথম দিনেই ভারতের পোশাক বাজারের শেয়ারে পতন

খবর প্রতিবেদন |
০১:১৭ এ.এম | ০২ অগাস্ট ২০২৫


বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশে নতুন এই শুল্ক হার ঘোষণা করা হয়। 
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প সরকার বাংলাদেশের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর ঘটনায় বাংলাদেশে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্বস্তি ফিরে এসেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস এটিকে ঐতিহাসিক কূটনৈতিক বিজয় বলে দাবি করেছে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা, বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ স্বস্তি প্রকাশ করেছে। অনেকে বাণিজ্য উপদেষ্টাকে প্রশংসা করেছেন। এর ফলে ভারতের রপ্তানি আয় কমে যাবে এবং চীন-ভিয়েতনাম-মায়ানমারসহ বিভিন্ন দেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা এখন বাংলাদেশে আসবে এমনটি মনে করছেন, বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার কম হওয়ায় প্রথম দিনেই ভারতের পোশাক বাজারের শেয়ারের পতন শুরু হয়েছে।
এর আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সংস্থা 'ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর)' এর মধ্যে চূড়ান্ত দফার আলোচনা হয়।  
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমানোর কথা জানানো হয়েছে।
বার্তায় বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক চুক্তি চূড়ান্ত করার আগ মুহূর্তে ৩১ জুলাই বৃহস্পতিবার ৭০টি দেশের আমদানি পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত নতুন শুল্কহার ঘোষণা করেছেন। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য ১ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
বার্তায় উলে­খ করা হয়-এই চুক্তিগুলো শুধু শুল্ক সমন্বয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে এমন অভ্যন্তরীণ নীতিগত সংস্কারও এর অন্তর্ভুক্ত। এগুলো অর্থনৈতিক এবং জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত উদ্বেগের দিকগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে। আলোচনার অংশ হিসেবে, দেশগুলোকে মার্কিন পণ্য কেনার বিষয়ে স্পষ্ট প্রতিশ্র“তি দিতে বলা হয়েছিল, যাতে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসে।  
বিষয়গুলোর পরিধি বিবেচনা করলে, আলোচনা প্রক্রিয়া জটিল এবং সময়সাপেক্ষ ছিল। শুল্ক ছাড় শুধুমাত্র মার্কিন রপ্তানির ওপর শুল্ক কমানোর সাথে যুক্ত ছিল না; বরং একটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অশুল্ক বাধা দূর করতে কতটা প্রস্তুত, বাণিজ্য ভারসাম্য এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ মোকাবেলা করতে কতটা আন্তরিক-সেটার ওপরও নির্ভর করেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে স্পষ্টভাবে উলে­খ করা হয়েছে, প্রতিটি দেশের শুল্কহার নির্ধারিত হয়েছে এসব বিষয়ে তাদের প্রতিশ্র“তির গভীরতার ভিত্তিতে।
প্রেস উইং ওই বার্তায় উলে­খ করে, বাংলাদেশ ২০ শতাংশ শুল্কহার পেয়েছে, যা তার মূল পোশাক খাতের প্রতিযোগীদের (যেমন শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়া, যারা ১৯ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক পেয়েছে) অনুরূপ। এর ফলে, পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের আপেক্ষিক প্রতিযোগিতা অক্ষুণ্ন থাকছে। অপরদিকে, ভারত একটি বিস্তৃত চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় ২৫ শতাংশ শুল্ক পেয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান আলোচক ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেন, আমরা অত্যন্ত সতর্কভাবে আলোচনা করেছি, যাতে আমাদের প্রতিশ্র“তি আমাদের জাতীয় স্বার্থ ও সক্ষমতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। আমাদের পোশাক শিল্পকে রক্ষা করাই ছিল আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার, তবে আমরা মার্কিন কৃষিপণ্য কেনার প্রতিশ্র“তির দিকেও মনোযোগ দিয়েছি। এটি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপ্রধান রাজ্যগুলোর সঙ্গে সৌহার্দ্য তৈরি করবে।
খলিলুর রহমান আরো বলেন, আজ আমরা একটি সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক এড়াতে সক্ষম হয়েছি। এটি আমাদের পোশাক খাত এবং এর ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষের জন্য সুখবর। আমরা আমাদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা অক্ষুণ্ন রেখেছি এবং বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে প্রবেশের নতুন সুযোগ তৈরি করতে পেরেছি।
ভারতের পোশাক বাজারের শেয়ারে দরপতন : এদিকে বাংলাদেশের পণ্যে পারস্পরিক শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই শুক্রবার ভারতের পোশাক বাজারের শেয়ারে দরপতন হয়েছে।
গত ৮ জুলাই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চিঠি পাঠান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই সময় তিনি জানান, ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তবে আলাপ আলোচনার পর তিনি এ শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছেন।
অপর দিকে ভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যা শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছে।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। ভারত দীর্ঘদিন ধরেই এ বাজারটি ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রযুক্তি ও শ্রমের সহজলভ্যতার কারণে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। তবে গত মাসে যখন বাংলাদেশের ওপর ট্রাম্প ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন তখন ভারতের বাজার বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে যায়। ওই সময় দেশটির পোশাকের বাজারের শেয়ারের দামও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু নতুন শুল্ক ঘোষণার পর পাল্টে যেতে থাকে চিত্র।
বাংলাদেশের ওপর শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পরই ভারতের কেপিআর মিলসের শেয়ার ৫ শতাংশ, ওয়েলসপুন লিভিংয়ের শেয়ার ২ শতাংশ, অলোক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার ০ দশমিক ৮ শতাংশ, পিয়ার্ল গ্লোবালের শেয়ার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ, গোক‚লদাস এক্সপোর্টের শেয়ার ২ দশমিক ৬ শতাংশ, কিটেক্স গার্মেন্টসের শেয়ার ৩ দশমিক ২১ শতাংশ এবং বর্ধমান টেক্সটাইলের শেয়ার ২ দশমিক ৮ শতাংশ কমে যায়।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তান বাণিজ্য চুক্তি করেছে। এরফলে দেশটির পণ্যে ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে দেশটি। যেখানে গত এপ্রিলে আরোপ করা হয়েছিল ২৯ শতাংশ শুল্ক। এছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথভাবে তেল অন্বেষণেও চুক্তিবদ্ধ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে শুল্কে যে সর্বশেষ পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্র এনেছে এতে দেখা গেছে, ৫০টিরও বেশি দেশের শুল্ক আগের তুলনায় কমানো হয়েছে। যার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো রয়েছে। এই অঞ্চলের মধ্যে শুধুমাত্র ব্যতিক্রম ভারত। যেখানে দেশটির ওপর পূর্বে ঘোষিত ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে।
সূত্র: আপস্টক্স

্রিন্ট

আরও সংবদ