খুলনা | রবিবার | ১০ অগাস্ট ২০২৫ | ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে

|
১২:২১ এ.এম | ০৪ অগাস্ট ২০২৫


রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা আলোচনা শেষে মৌলিক সংস্কারের ১৯টি বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত এসেছে। এর মধ্যে ৭টি বিষয়ে সব দল একমত হয়েছে আর ১২টি বিষয়ে বিভিন্ন দলের ভিন্নমত ও মন্তব্যসহ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় অগ্রগতি, যা আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে দীর্ঘ হতাশার মাঝে কিছুটা হলেও আশাবাদের জায়গা তৈরি করে।
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান যে বৃহৎ জন-আকাক্সক্ষা তৈরি করেছে, তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো বাংলাদেশের নাগরিকেরা আর পুরোনো ব্যবস্থায় ফিরতে চান না। অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা যাতে কোনোভাবে ফিরতে না পারে, তার জন্য রাষ্ট্র, সরকার ও শাসনকাঠামোয় মৌলিক সংস্কার প্রত্যাশা করেছেন তাঁরা। জন-আকাক্সক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার প্রথম পর্যায়ে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে। এরপর আরও পাঁচটি কমিশন গঠন করা হয়। এসব কমিশন তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার পর প্রধান ছয়টি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম দফায় ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৪টি এবং ২ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৩০টি দলের সঙ্গে ২৩টি বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অতীতে এত সময় ধরে এতগুলো রাজনৈতিক দল মিলে এমন রাজনৈতিক ঐক্যপ্রচেষ্টা আর কখনোই হয়নি।
খবর জানাচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই দফা আলোচনার পর যেসব বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা নিয়ে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও এর আইনি ভিত্তি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকাটা স্বাভাবিক। আর সেই মতপার্থক্য নিরসনের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পথ হলো আলাপ-আলোচনা ও সংলাপ। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক দলগুলো খুব শিগগির এ ব্যাপারে একটা যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছাতে পারবে বলে আমরা আশা করি। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের আমলে পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। ফলে দেশের সিংহভাগ নাগরিকই দীর্ঘদিন ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত আছেন। এ অবস্থায় দেশের নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা হলো একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন, যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আবার গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করবে। ইতিমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণা করেছেন। আমরা মনে করি, তাঁর ঘোষিত সময়সীমা, অর্থাৎ আগামী ফেব্র“য়ারি-এপ্রিলের মধ্যেই দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের। নির্বাচন কমিশন সে ব্যাপারে তাদের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোরও ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে অগ্রগতি দেখাতে পেরেছে, তা ধরে রাখার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। এ ক্ষেত্রে দলগুলো তাদের প্রতিশ্র“তি কতটা বাস্তবায়ন করছে, তার ওপর দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের অনেকটাই নির্ভর করে। এই প্রচেষ্টা একটা অগ্রগতির জায়গায় নিয়ে আসার জন্য ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজসহ কমিশনের অন্য সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তাঁদের সবাইকে আমরা সাধুবাদ জানাই। 
এটা ঠিক যে একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বড় একটা বাঁধা দেশের বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। ৫ আগস্টের পর পুলিশের মনোবল ও শৃঙ্খলা অনেকটাই ভেঙে পড়েছিল। সেখান থেকে অনেকটা উত্তরণ হলেও এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেনি পুলিশ। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ও দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীরও অধিক সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ