খুলনা | রবিবার | ১০ অগাস্ট ২০২৫ | ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২

বিচারের কাঠগড়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ন্যায়বিচারের নতুন অধ্যায়

|
১২:০৩ এ.এম | ০৭ অগাস্ট ২০২৫


আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ চারজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হওয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। গণ-আন্দোলনে সহিংস দমন-পীড়ন এবং হাজারো নাগরিকের প্রাণহানির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রীয় জবাবদিহির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।
এ ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূতির প্রাক্কালে এই বিচার শুরু হওয়ায় এটি শুধু একটি আইনি প্রক্রিয়া নয়, বরং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার একটি প্রতীকী পদক্ষেপ। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী খোকন চন্দ্র বর্মণের হৃদয়বিদারক জবানবন্দি জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকালে দমন-পীড়ন ও নৃশংসতার এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। একজন সাধারণ ড্রাইভার হিসেবে তাঁর ওপর চালানো নির্মম নির্যাতন, এক চোখ হারানো এবং মুখমণ্ডলের বিকৃত হওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে যে তৎকালীন সরকার প্রতিবাদ দমনে কতটা মরিয়া ছিল। তাঁর সাক্ষ্য শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতির বিবরণ নয়, বরং হাজার হাজার পঙ্গু ও নিহতদের হয়ে রাষ্ট্রের কাছে ন্যায়বিচার চাওয়ার এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। এ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যেও তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক নিপীড়ন, খুন ও গুমের সংস্কৃতির তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে।
এই বিচার শুধু শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল­াহ আল মামুন এবং শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে নয়। এই বিচার একটি ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে। প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে এই বিচার প্রক্রিয়া কোনো ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশ নয়। এটি একটি জাতির আকাক্সক্ষা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘কোনো ব্যক্তি যত উঁচু পদেই আসীন হোক কিংবা তার ছায়া যতই দীর্ঘ হোক না কেন, সে আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’ এই বাক্যটি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় পরিবর্তনের দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে ক্ষমতাধরদেরও আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়। খোকনের মতো অসংখ্য মানুষ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে গুলিতে নিহত বা পঙ্গু হয়েছেন। তাঁর মুখের ক্ষতবিক্ষত অবয়ব আজ রাষ্ট্রের ব্যর্থতার সাক্ষ্য বহন করছে। ট্রাইব্যুনালের সামনে উপস্থাপিত ভিডিও ফুটেজ, চিকিৎসার বিবরণ এবং প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ইতিহাসের নির্মম অধ্যায় উন্মোচন করছে।
দেশের জনগণ আশা করে যে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুয়ছেন এবং যাঁরা রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তাঁরা সবাই ন্যায়বিচার পাবেন। এই বিচার যেন অতীত রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয়। ট্রাইব্যুনালের উচিত হবে, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা, যাতে ভবিষ্যতে কোনো সরকারই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে জনগণের ওপর এমন নির্মম দমন-পীড়ন চালানোর সাহস না করে। এই বিচার প্রক্রিয়া বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি করেছে। যেখানে আইনের শাসন, জবাবদিহি এবং মানবাধিকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ