খুলনা | রবিবার | ১০ অগাস্ট ২০২৫ | ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২

শোকজের জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহ

দলের উচিত ছিল আমাদের পক্ষে দাঁড়ানো

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩১ এ.এম | ০৮ অগাস্ট ২০২৫


জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, দলের উচিত ছিল গোয়েন্দা সংস্থা ও অসৎ মিডিয়ার বিরুদ্ধে দৃঢ় ব্যবস্থা নেওয়া। তার পরিবর্তে এমন ভাষায় আমাদের বিরুদ্ধে শোকজ প্রকাশ করেছে। যা মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্রতত্ত¡কে উসকে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার কক্সবাজারকাণ্ডে শোকজ নোটিশের জবাবে এমন ক্ষোভ উগড়ে দেন হাসনাত আবদুল্লাহ। ফেসবুকে নিজের আইডিতে শোকজের জবাবের বিষয়টি শেয়ারও করেন তিনি।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে রাষ্ট্রীয় উদ্যাপনে যোগ না দিয়ে কক্সবাজারে ঘুরতে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ পাঁচ নেতা। এতে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে একান্ত বৈঠকের অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। যদিও এটাকে গুজব বলে জানিয়েছেন তারা।
তবে, দলের অনুমতি না নেওয়ায় পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে এনসিপি। গতকাল দলের আহবায়ক ও সদস্য সচিব স্বাক্ষরিত পাঠানো নোটিশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের সফরের কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে। আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই শোকজের জবাব দিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানুষ জীবন দিয়েছিল নতুন বাংলাদেশের জন্য। এমন একটি রাষ্ট্র গঠনের আশায়, যেখানে কোনো স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না এবং প্রতিটি নাগরিক মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবেন। এই আকাক্সক্ষা পূরণের লক্ষ্যেই এই সরকার গঠিত হয়েছিল। সরকারের উচিত ছিল এমন একটি ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা, যা সেই মানুষগুলোর আকাক্সক্ষাকে প্রতিনিধিত্ব করবে।  
কিন্তু আমি এবং অনেকেই ব্যথিত হই, যখন দেখি যে এই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময় সেই মানুষদের কথা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে, যারা অভ্যুত্থানের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন। শহিদ পরিবার, আহত এবং নেতৃত্বদানকারীদের অনেকেই মতামত প্রদানের সুযোগ পাননি, এমনকি অন্তর্ভুক্তির ন্যূনতম সম্মান টুকুও পাননি।
৪ আগস্ট রাতে প্রথমে আমি আহবায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। তাকে না পেয়ে পরবর্তীতে দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীকে অবহিত করি যে আমি আমার স্কুলবন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের জন্য ভ্রমণে যাচ্ছি। যেহেতু তিনি সে সময় অফিসে আহবায়কের সাথে ছিলেন, আমি তাকে অনুরোধ করি যাতে তিনি আহবায়ককে বিষয়টি জানান। তিনি আমাকে জানান যে তিনি তা করবেন। প্রায় ৩০ মিনিট পর নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী আমাকে নিশ্চিত করেন যে তিনি আহবায়ককে বিষয়টি জানিয়েছেন এবং আহবায়ক এতে সম্মতি প্রদান করেছেন। পরবর্তীতে আমার সঙ্গে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, সস্ত্রীক সারজিস আলম ও তাসনিম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি যুক্ত হন।
কিন্তু এরপর যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিমানবন্দর থেকে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের ছবি ও ভিডিও করে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা মিডিয়ার হাতে তুলে দিয়েছে। কিছু মিডিয়া সেখানে ক্রাইম মুভির মিউজিক জুড়ে দিয়ে ইচ্ছেমতো মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর অভিযোগসহ সেইসব উপস্থাপন করেছে।
কিছু মিডিয়া ও গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপকে অপরাধপ্রবণ এবং সন্দেহজনক হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এমনকি গুজব ছড়ানো হয়েছে যে আমরা পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠকে যাচ্ছি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করতে। অথচ তিনি তখন বাংলাদেশেই ছিলেন না।
রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এই প্রবণতা, যেখানে কাউকে টার্গেট করে রাষ্ট্রদ্রোহী বানিয়ে ফেলা যায়, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চলতে পারে না। গোয়েন্দা সংস্থা ও মিডিয়ার এই সম্মিলিত ‘ডিমোনাইজেশন’ টেকনিক আজকে আমাদের টার্গেট করেছে। ভবিষ্যতে অন্য যে কাউকে করতে পারে। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক ব্যাপার হলো, গোয়েন্দা সংস্থা এবং কিছু মিডিয়া এই একই প্যাটার্নে হাসিনার আমলেও বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নামে প্রোপাগান্ডা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করত। নতুন বাংলাদেশেও গোয়েন্দা সংস্থা এবং কিছু মিডিয়ার এই পুরোনো অপরাধ প্রবণতা আমাকে একই সঙ্গে অবাক এবং ক্ষুব্ধ করে।
আমি মনে করি আমাদের পার্টির উচিত ছিল এই গোয়েন্দা সংস্থা ও অসৎ মিডিয়ার বিরুদ্ধে দৃঢ় ব্যবস্থা নেওয়া। তার পরিবর্তে পার্টি এমন ভাষায় আমাদের বিরুদ্ধে শোকজ প্রকাশ করেছে, যা মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্রতত্ত¡কে উসকে দিয়েছে।
যেকোনও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে শোকজ করতে হয় গঠনতন্ত্র বা বাই-লজের কোনও নির্দিষ্ট ধারা লঙ্ঘনের কারণে। আমাকে দেওয়া শোকজে এমন কিছুর উল্লেখ নেই, কারণ আমি পার্টির কোনও আইন লঙ্ঘন করিনি। এমন বিধিবহির্ভূত শোকজ দেওয়া এবং অতি উৎসাহী হয়ে তা মিডিয়ায় প্রকাশ করা কতটুকু রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচায়ক হয়েছে, সে বিষয়ে গভীরভাবে ভাববার অনুরোধ করবো।
আমি এনসিপির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং মনে করি যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও গণতান্ত্রিক সহনশীলতার মাধ্যমেই আমাদের দল রাজনৈতিকভাবে আরও পরিণত হবে। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাকে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যার সুযোগ দেওয়ার জন্য।

্রিন্ট

আরও সংবদ