খুলনা | মঙ্গলবার | ১২ অগাস্ট ২০২৫ | ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২

সাংবাদিক হত্যা: আমার সোনার বাংলার লজ্জার ইতিহাস

মোঃ নাজমুল হুদা, সাংবাদিক |
১২:৪৭ এ.এম | ০৯ অগাস্ট ২০২৫


এই দেশে গণমাধ্যমকর্মীদের হত্যা করা যেন সবচে সহজ একটি কাজ। পৃথিবীর অনেক দেশেই একটি কীট-পতঙ্গকেও বিনা কারণে মারা যায় না, ছোঁয়া পর্যন্ত যায় না, অথচ এখানে একজন সাংবাদিককে হত্যা করা যায় দিনের আলোতে, শত মানুষের চোখের সামনে, বিনা ভয়ে।
আমার কাছে মনে হয় এর অন্যতম কারণ গোটা জাতির নিচ থেকে উপর পর্যন্ত দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের প্রভাব ও দৌরাত্ম্য। সমাজের প্রতিটি স্তরে তারা শেকড় গেঁড়ে বসে আছে। তাদের হাতে অর্থ, ক্ষমতা, অস্ত্র আর আছে প্রশাসনের ভেতরের অসৎ অংশের মদদ। এই নোংরা চক্রের কাছে একজন সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকের জীবন কতটা তুচ্ছ তা আমরা প্রতিদিন দেখছি, শুনছি, আর লজ্জা লুকিয়ে যাচ্ছি।
আমার সোনার বাংলাদেশ? যে দেশের সাংবাদিকদের কলম রক্তে ভিজে যায়, আর খুনিরা ক্ষমতার ছায়ায় নিরাপদে ঘুরে বেড়ায় সেই দেশ কিভাবে “সোনার” নামে পরিচিত হয়? আজ গভীর দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যদি তুমি দুর্নীতিবাজ হও, তাহলে সাংবাদিককে আঘাত করো, ইতিহাসে তোমার নাম উঠবে “কালো অধ্যায়ে”। যদি তুমি প্রকৃত দুর্নীতিবাজ হও, তাহলে সাংবাদিকের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে গালাগালি দেবে এটিই হবে তোমার ‘গর্ব’। যদি তুমি মাদক কারবারি হও, তবে প্রশাসনকে ডাকবে “বাবা” আর সাংবাদিককে ডাকবে “সাংঘাতিক” এটাই তোমার অভ্যাস।
যদি তুমি অস্ত্র ব্যবসায়ী হও, তবে সাংবাদিককে গুলি করবে আর প্রশাসনকে ফাঁকি দেবে কারণ এটাই তোমার চরিত্র। এ যেন এক অদ্ভুত দেশের ছবি, যেখানে কলমের ভাষা শক্তি নয়, অপরাধ, যেখানে সত্য বলা সাহস নয়, মৃত্যুর ডাক। যেখানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানে নিজের কফিন প্রস্তুত রাখা।
আমরা ভুলে যাচ্ছি- সাংবাদিক হত্যার মানে শুধু একজন মানুষের মৃত্যু নয়, সত্যের মৃত্যু। আর যখন সত্যের মৃত্যু ঘটে, তখন গোটা জাতি ধীরে ধীরে নৈতিকভাবে মৃত হয়ে যায়।
আজ প্রশ্ন তুলতে হয়, আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? যেখানে দুর্নীতিবাজ, মাদক কারবারি, অস্ত্র ব্যবসায়ী আর চাঁদাবাজরা রাজত্ব করবে, আর সত্য বলার অপরাধে সাংবাদিকরা লাশ হবে? যেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হবে কাগজে-কলমে, বাস্তবে কেবল ভয় ও হুমকির বন্দিশালা?
সাংবাদিক হত্যা বন্ধ করতে হলে শুধু খুনিদের গ্রেফতার করলেই হবে না তাদের আশ্রয়-প্রশয়দাতার ক্ষমতার চক্রকেও ভাঙতে হবে। প্রশাসনের ভেতরের দুর্নীতিবাজ অংশকে চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে। আইনের শাসনকে শক্ত হাতে প্রয়োগ করতে হবে এবং সবচে বড় কথা, জাতি হিসেবে আমাদের সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহস দেখাতে হবে। পাশাপাশি সাংবাদিকতা পেশায় আঘাত আনা ব্যক্তি-গোষ্ঠী কিংবা প্রতিষ্ঠানের অবৈধ পন্থায় অর্জিত সকল সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিক/পরিবারের অনুকূলে দ্রুত বুঝিয়ে দিতে হবে আইন আদালতের  মাধ্যমে। তাহলেই দেশের চতুর্থ স্তম্ভ কে প্রকৃত সম্মান দেওয়া হবে। এতে গণমাধ্যম হিসেবে রাষ্ট্র এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে প্রকৃত গণমাধ্যম। দেশের সাংবাদিকরা ফিরে পাবেন তাদের প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা। একইসাথে কঠোর ভাবে শিক্ষা দেওয়া হবে দেশের সকল দুর্নীতিবাজ-চাঁদাবাজ-কুচক্রী মহল ও সন্ত্রাসীদেরকেও।
না হলে, আমার সোনার বাংলা একদিন শুধু নামেই থাকবে ভেতরে থাকবে রক্ত, অন্যায় আর ভয়ের দগদগে ক্ষত।

্রিন্ট

আরও সংবদ