খুলনা | রবিবার | ১০ অগাস্ট ২০২৫ | ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২

রাষ্ট্রীয় ভাবে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি

গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় আটক ৫ : জানাজায় মানুষের ঢল

খবর প্রতিবেদন |
০১:০৬ এ.এম | ০৯ অগাস্ট ২০২৫


গাজীপুরে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি মোঃ আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।  
গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান বলেন, সাংবাদিক মোঃ আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডে পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তবে সিসি ক্যামেরা বিশ্লেষণ যাদের পাওয়া গেছে আটকদের মধ্যে তারা কেউ নেই। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে অনীহা প্রকাশ করেন তিনি।
অপর দিকে, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপ-কমিশনার রবিউল হাসান বলেন, সাংবাদিক মোঃ আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা বিশ্লেষণ করে শনাক্ত করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেফতার করা হবে। জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে তিনি জানান।  
এদিকে শুক্রবার অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বাসন থানায় নিহতের ভাই মোঃ সেলিম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দিবাগত রাতে মহানগরীর বাসন থানাধীন ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা মোড় এলাকার দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি মোঃ আসাদুজ্জামান তুহিন নামের ওই সাংবাদিককে প্রকাশ্যে, জনসম্মুখে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরপরই সিসি ক্যামেরার একটি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
আসাদুজ্জামান তুহিন (৩২) ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ওষুধ সরবরাহের কাজ করতেন।
জানাজায় মানুষের ঢল : গাজীপুরে নিহত সাংবাদিক তুহিনের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। জুমার পর চান্দনা চৌরাস্তা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে এ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ।
জুমার জামাত শেষে মুসলি­রা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে ঈদগাহ ময়দানে জড়ো হন। জানাজা শেষে ‘আয়োজনে গাজীপুরের সাধারণ মুসলি­’-এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে এনসিপির নেতারাও বক্তব্য দেন।
জানাজার আগে গাজীপুর মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিম রনি, ইসলামী আন্দোলনের মহানগর আমির মোঃ গাজী আতাউর রহমান, এনসিপির কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক আলী নাসেরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের আয়োজনে হত্যার ঘটনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। শুক্রবার বেলা ১১টায় গাজীপুর প্রেসক্লাবের সামনে এই প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় গাজীপুরের কর্মরত সাংবাদিকরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সহকর্মী আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানান। প্রকাশ্য দিবালোকে গাজীপুরের জনবহুল চৌরাস্তা এলাকায় এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারা। এ সময় সাংবাদিকরা গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারের মদদদাতাদের চিহ্নিত করার দাবি তুলেন।
এ সময় সাংবাদিকরা বলেন, ঘটনার ১৭ ঘণ্টা পার হলেও এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আসামিরা চিহ্নিত, তাদের সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এরপরও গ্রেফতার করতে না পারা প্রশাসনের ব্যর্থতা।
রাষ্ট্রীয় ভাবে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি : গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও রাষ্ট্রীয় ভাবে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন, জুলাই রেভুলোশনারি জার্নালিস্ট অ্যালায়েন্স কর্তৃক আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মী ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্যে এনসিপির যুগ্ম-আহŸায়ক জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে তুহিন হত্যার বিচার চাওয়ার জন্য আমাদের রাজপথে নামতে হয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত খুনিদের গ্রেফতার করা হয়নি। আজ যদি ইন্টেরিমের কোনো উপদেষ্টার পরিবারের কাউকে খুন করা হতো, তাহলে কি গ্রেফতার এতো সময় লাগতো? লাগতো না।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরে সবচেয়ে বেশি হামলা-মামলা, খুনের শিকার হয়েছে যে পেশাজীবীরা, তারা হলেন সাংবাদিক। জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের পর সবচেয়ে বেশি জীবন দিয়েছে সাংবাদিকরা। অথচ আমরা কি পেলাম? আমাদের দিন-দুপুরে হত্যা করা হয়, আমরা কোনো নিরাপত্তা পেলাম না।  
গণমাধ্যম কর্মী আকরাম খান বলেন, আজকের এই মানবন্ধনে দাঁড়ানো আমাদের জন্য দুঃখজনক। ৫ আগস্টের আগে দেখেছি সাংবাদিক হামলা-মামলা, হত্যার শিকার হয়েছেন। আমরা আশা করেছিলাম বিপ্লব পরবর্তী সময়ে এসবের অবসান হবে, কিন্তু তা হয়নি। একটি স্বাধীন দেশে কেন সাংবাদিকরা হত্যার শিকার হবে? গাজীপুরের ঘটনাটি পুলিশের সামনেই হয়েছিল, অথচ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আবেদন, সাংবাদিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক।
আরেক গণমাধ্যম কর্মী সাইফুল ইসলাম বলেন, আজ আমরা সাংবাদিক তুহিন হত্যার বিচার চাইতে মানববন্ধন করেছি। কয়েকদিন পর হয়ত অনেকেই এ ঘটনা ভুলে যাব। বর্তমান সরকারের কাছ থেকে এখনো পর্যন্ত সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারের কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত পাইনি। শুধু সাগর-রুনি নয়, বেশির ভাগ সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের কোনো সুরাহা এখনো হয়নি। আমাদের দাবি থাকবে, দ্রুততম সময় তুহিন হত্যার আসামিদের গ্রেফতার করা হোক ও বিচার নিশ্চিত করা হোক।

্রিন্ট

আরও সংবদ