খুলনা | সোমবার | ১১ অগাস্ট ২০২৫ | ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

নির্বাচন ঘিরে আ’লীগের পরিকল্পনা ফাঁস

খবর প্রতিবেদন |
০১:০৮ এ.এম | ০৯ অগাস্ট ২০২৫


গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি আ’লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, লুটপাটের করুণ পরিণতি জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা জনতার ভয়ে পালিয়ে ভারতের দিলি­তে আশ্রয় নেন। এর ঠিক আগে-পরে শেখ পরিবারের সদস্য, আ’লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি, এমনকি নেতারাও নির্বিঘেœ দেশ ছাড়েন। এবার বিদেশে বসেই দেশের নির্বাচন ভণ্ডুলের চেষ্টা করে যাচ্ছেন কার্যত নিষিদ্ধ এই দলটি।
ক্ষমতা হারানোর ধকল কাটিয়ে শেখ হাসিনাসহ আ’লীগের পলাতক নেতাদের অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে কথা বলতে শুরু করেছেন। যদিও তাদের এই কথাবার্তায় অনুশোচনার লেশমাত্র নেই। গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। আ’লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে এই বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন দলের নিবন্ধন স্থগিত করেছে এবং নৌকা প্রতীক বাদ দেওয়া হয়েছে।
সরকার ও এখানকার সক্রিয় দলগুলো আ’লীগ, এর মিত্র দলগুলোকে বাদ দিয়ে একতরফা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে দলটির অভিযোগ। সে কারণে দলটি আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। 
ক্ষমতার মসনদ হারানোর এক বছর পরেও ন্যূনতম অনুশোচনা কিংবা অনুতাপও নেই দলটির। বরং সেই পুরোনো ভুল পথেই এখনো চলছে ক্ষমতাচ্যুত দলটি। বিশেষ করে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে বসে আ’লীগের পলাতক নেতারা প্রতিনিয়ত নানা ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন। তাদের এখন মূল টার্গেট-যে কোনো মূল্যে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভণ্ডুল করা।
পাশাপাশি গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির মধ্যে বিভেদ বা ফাটল ধরানো। এসব অপকর্মের মাধ্যমে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে গোপনে নানা অপতৎপরতা চালানোর পাঁয়তারা করছে নেতা-কর্মীরা। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই মধ্যে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে উলে­খযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে-যাদের ভুলের খেসারত দিয়ে আ’লীগের মতো একটি বড় রাজনৈতিক দলকে আজকের এই পরিণতি বরণ করতে হয়েছে, সেই দুর্নীতিবাজ-লুটেরা নেতারা এখনো বিদেশে বসে কলকাঠি নাড়ছেন। ক্ষমতা হারানোর পর এক বছর হয়ে গেলেও তাদের কারও মধ্যে ভুল স্বীকারের তাগিদ নেই, নেই ন্যূনতম অনুতাপ। বরং নিয়মিত নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইছেন।
দেশের সাধারণ মানুষ, এমনকি দলের মাঠপর্যায়ের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মনের ভাবটাও বোঝার চেষ্টা করছেন না পলাতক এই নেতারা। উলটো আরও বিদেশ-বিভূইয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ এবং সুখের জীবন কাটাচ্ছেন তারা। আর দেশের ভেতরে থাকা সাধারণ কর্মীদের মাঠে নামতে উসকে দিয়ে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এতবড় একটা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আ’লীগের পতন হলো, তারপরেও দলটির কোনো নেতাকর্মীর আত্মোপলব্ধি নেই, বোধোদয় নেই। বরং নিজেদের ভুলগুলোর পক্ষেই সাফাই গেয়ে যাচ্ছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বিপরীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আ’লীগ দেশটাকে সম্পূর্ণভাবে স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামোর ভেতরে নিয়ে গিয়েছিল। দলটির নেতারা সীমাহীন দুর্নীতি-লুটপাট-অর্থ পাচার, গুম-খুন-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি ভিন্নমত দমনের পোড়ানীতি গ্রহণ করে। যার খেসারত দিতে হয়েছে তাদের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, আ’লীগের একজন নেতাও এখন পর্যন্ত নিজেদের ভুল স্বীকার করেননি। বরং দেশের পরিস্থিতি অশান্ত করতে বিদেশের মাটিতে বসে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন।
বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত আ’লীগের একজন পলাতক নেতার সঙ্গে আলোচনায় অনেকটা আক্ষেপের সুরে বলেন, ক্ষমতার সাড়ে ১৫ বছর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমসহ একটি প্রভাবশালী চক্রের হাতে আ’লীগ জিম্মি ছিল।
ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করার বদলে সর্বত্র স্বজনপ্রীতির রাজনীতি করেছেন তারা। বিশেষ করে আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। দিনের পর দিন চেষ্টা করেও সাধারণ নেতা-কর্মীরা ক্ষমতাধর এই নেতার দেখা পেতেন না। 
লন্ডন প্রবাসী ওই নেতা বলেন, ৫ আগস্টের ঘটনায় শিক্ষা নিয়ে আ’লীগকে ঢেলে সাজানোটা যখন অপরিহার্য, ঠিক তখন সেই ওবায়দুল কাদেরসহ পুরোনো সিন্ডিকেট ফের সরব এবং সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, যারা আ’লীগকে ডুবিয়েছে, তারাই বিদেশে বসে এখন আ’লীগের হাল ধরতে চাইছে। এরা হাল ধরলে আ’লীগের যে অস্তিত্ব টুকু এখন পর্যন্ত আছে, তাও আর থাকবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে কলকাতায় পালিয়ে থাকা ওবায়দুল কাদের দীর্ঘদিন চুপচাপ থাকার পর ফের সরব হয়েছেন। নিজের অবস্থান সংহত করার জন্য পলাতক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
স¤প্রতি কলকাতার মারকুইস স্ট্রিটে ‘বাংলা খাবার’ নামের একটি রেস্টুরেন্টে পলাতক আ’লীগ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদের। আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিম, মির্জা আজম, যুবলীগ নেতা নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন, ইসমাইল হোসেন সম্রাট, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা অপতৎপরতা নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ফ্যাসিস্ট আ’লীগের ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি বাড়িয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, কিছু লোক সামাজিক মাধ্যমে এসে অপপ্রচার চালাচ্ছে-তাদের ওপর কঠোর নজরদারি রয়েছে।
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে মেজর সাদিকুল ও তার স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় সুমাইয়াকে ৫ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। আর মেজর সাদিকুল হক সেনা হেফাজতে রয়েছেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ