খুলনা | সোমবার | ১১ অগাস্ট ২০২৫ | ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো : বিলম্বে হলেও সুযোগ কাজে লাগাতে হবে

|
১২:২৭ এ.এম | ১০ অগাস্ট ২০২৫


গত বছরের মে মাসের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে যেতে না পারা কর্মীদের নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালয়েশিয়া। খবরটি বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে আনন্দের; বিশেষ করে যেসব কর্মী জনশক্তি এজেন্সিকে লাখ লাখ টাকা দিয়েও ভিসা জটিলতার কারণে যেতে পারেননি। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত বছরের ৩১ মের মধ্যে যাঁরা মালয়েশিয়ায় আসতে পারেননি, তাঁদের মধ্য থেকে বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের জন্য মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়া গেছে। মালয়েশিয়া সরকার নির্মাণ (কনস্ট্রাকশন) ও পর্যটন (ট্যুরিজম) খাতে এসব কর্মীকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তবে এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মীদের বেশ কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে। যেমন পর্যটন খাতের কর্মীদের মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চাহিদাপত্র (ডিমান্ড লেটার) সত্যায়নের জন্য সংযুক্ত চেকলিস্ট অনুযায়ী সব তথ্য দেশটির ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (এফডব্লিউসিএমএস) অনলাইন পোর্টালে দাখিল করতে হবে। আর নির্মাণ খাতের কর্মীদের সব আবেদন দেশটির কনস্ট্রাকশন লেবার এক্সচেঞ্জ সেন্টার বেরহাদের (সিএলএবি) মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য এফডব্লিউসিএমএসের পোর্টালে দাখিল করতে হবে।
উলে­খ্য, গত বছর সব প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্ত ছাড়পত্র নিয়েও মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি ১৬ হাজার ৯৭০ কর্মী। তাঁদের একাংশ উড়োজাহাজের টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি। আরেকটি অংশ মালয়েশিয়া থেকে নিয়োগকর্তার চূড়ান্ত সম্মতি পাননি।আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে এ ঘটনা ঘটে। এর দুই মাস পরই গণ-অভ্যুত্থানে এই স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে। গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা কর্মীদের পাঠানোর জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বাংলাদেশ সফরকালে সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি উত্থাপন করা হলে তিনি তাঁর দেশে কাজের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে আশ্বাস দেন। স¤প্রতি প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মালয়েশিয়া সফরকালেও বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিষয়ে সফল আলোচনা হয়।
বিলম্বে হলেও ‘আটকে পড়া’ বাংলাদেশি শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় পাঠানো নিয়ে যে অচলাবস্থা চলছিল, তার অবসান হলো। কিন্তু এই সুসংবাদের সঙ্গে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ মিশন একটি সতর্কবার্তাও দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ার সাবাহ প্রদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের প্রতারণার প্রমাণ পাওয়া গেছে। মালয়েশিয়ার সাবাহ প্রদেশে কর্মী পাঠানোর কথা বলে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে পাসপোর্ট ও নগদ টাকা সংগ্রহ করছে এই চক্র। অথচ বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ার সাবাহ প্রদেশে কর্মী নেওয়ার জন্য বর্তমানে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কোনো চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক নেই। এ বিষয়ে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক যাতে এসব অসাধু চক্রের ফাঁদে না পড়েন, সে বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে মিশনটি।
মালয়েশিয়ায় ৯ লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন, যা সেখানকার একক বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে সেখানে যেসব শ্রমিক যান, তাঁদের একাংশ প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী চাকরি পান না, অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হন। বিষয়টি জাতিসংঘেরও নজরে এসেছে। ভবিষ্যতে এ রকম পরিস্থিতি যাতে না হয়, সে জন্য দুই দেশকেই একযোগে কাজ করতে হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো নিয়ে একটি বড় সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল, যার সঙ্গে তৎকালীন মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরাও জড়িত ছিলেন। সরকার বদলের পর নতুন কোনো সিন্ডিকেট যাতে গড়ে উঠতে না পারে, সে বিষয়েও সরকার তথা সংশ্লিষ্ট বিভাগ সর্বোচ্চ সজাগ থাকবে আশা করি।

্রিন্ট

আরও সংবদ