খুলনা | রবিবার | ১০ অগাস্ট ২০২৫ | ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২

নির্বাচন সিস্টেমের ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে

ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন : সিইসি

খবর প্রতিবেদন |
০১:০৯ এ.এম | ১০ অগাস্ট ২০২৫


আগামী বছরের ফেব্র“য়ারির প্রথম সপ্তাহে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
শনিবার বিকেলে রংপুর উত্তম এলাকায় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার ডিসি-এসপিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথাব বলেন।  
এর আগে সকালে রংপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সভাকক্ষে মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে যে বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে দেশে। তারপরও আমি বলবো, গত বছরের জুলাই-আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলার অনেক উন্নতি হয়েছে। আমরা ঘুমাতে পারছি। আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা ঘুমাতে পারছেন না, তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ইলেকশন আসতে আসতে আরও ভালো হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবাইকে নিয়ে আমরা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চাই, মানুষ যাতে নির্ভয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন।’  
নির্বাচন সিস্টেমের ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে : 
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন আরও বলেছেন, নির্বাচন সিস্টেমের ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। মানুষের আস্থা ফিরিয়ে কেন্দ্রে নিয়ে আসা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে, এই বিশ্বাস স্থাপন করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।  
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, মানুষ তো ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার অভ্যাসটাই ভুলে গেছে। ভোটের দিন ছুটি থাকে, আমি ঘুমাই, কারণ আমি না গেলেও তো ভোটটা কেউ না কেউ দিয়ে দেবে, এই রকম একটা মন-মানসিকতা ছিল। মানুষকে ভোটকেন্দ্রমুখী করা এবং সবাইকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ কী কী, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, যেগুলো দৃশ্যমান চ্যালেঞ্জ সেগুলো নিয়েই বলব। প্রথমে আইনশৃঙ্খলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনের পর থেকে দেশে যে বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল সেদিক থেকে চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই আইনশৃঙ্খলার। তারপরেও আমি বলব, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গত বছরের ৫ আগস্টের পরে অনেক উন্নতি হয়েছে। চ্যালেঞ্জের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে চ্যালেঞ্জ থাকা সত্তে¡ও এটি মোকাবিলা করতে পারব।
তিনি বলেন, প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের মধ্যে একটা পরিবর্তন আসবে। সব জায়গায় যে শিক্ষকদের দিয়ে করাব এমন নাও হতে পারে। আমরা বিকল্প চিন্তা করছি। এখন বিদেশ থেকে মানুষ আমদানি করে তো নির্বাচন করা যাবে না; দেশের মানুষ দিয়েই করতে হবে। ওই লোকগুলোকে এদিক-ওদিক করে করতে হবে। এখন ওদেরকে নিয়ে আগাতে হবে। এ দেশে আগেও তো সুন্দর নির্বাচন করেছি। মানুষ যদি দেখে এখানে ধান্দাবাজি নেই, মানুষ যদি বুঝতে পারে এরা সত্যিকার অর্থে একটা সুন্দর নির্বাচন দিতে চায় তাহলে দেখবেন মানুষ আপনাদের সঙ্গে আছে।  
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো হয়েছে। আমার বিশ্বাস নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে অবস্থার আরও উন্নতি হবে। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবাইকে নিয়ে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে চাই যেখানে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে নির্ভয়ে পছন্দের প্রার্থীকে মানুষ ভোট দিতে পারে।
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনকে নিজের ইমানি দায়িত্ব উলে­খ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ। আমি এবং আমার সহকর্মীরা এটাকে ইমানি দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছি। আমার সিদ্ধান্ত কারো পক্ষে-বিপক্ষে যেতে পারে। কিন্তু এটা আমার কারণে নয়, এটা আইন-কানুনের জন্য। যতক্ষণ আমার হুঁশ আছে ততক্ষণ আমি কারো পক্ষে নই বরং নিরপেক্ষভাবে কাজ করব।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারকে বড় সমস্যা উলে­খ করে নাসির উদ্দিন বলেন, অস্ত্রের চেয়ে মারাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এআই ও সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মানুষের ছবি দিয়ে বক্তব্য বানানো হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না। রাতে শুয়ে যখন সময় পায় তখন মোবাইলে দেখে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস কিংবা আমার অথবা বিভিন্ন নেতার বক্তব্য। যার সম্পর্কে বলছে সেও জানে না, যিনি বলছেন তিনিও আসল না।
তিনি আরও বলেন, এটা মোকাবিলা কীভাবে করা যায়, আমরা তা নিয়ে ভাবছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ধরনের খবর এলে যাচাই-বাছাই না করেই এক-দুই হাজারবার শেয়ার হয়ে যায়। যার সম্পর্কে দেওয়া হয়, তার ‘বারোটা’ বেজে যায়।
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ দুলাল তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় রংপুর অঞ্চলের সব অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিকেল সাড়ে ৩টায় রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে আরেকটি মতবিনিময় সভায় অংশ নেবেন সিইসি। সেখানে উপস্থিত থাকবেন রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি রংপুর রেঞ্জ, পুলিশ কমিশনার, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, সেক্টর কমান্ডার, বিজিবি রংপুর, আনসার ও ভিডিপির উপ-মহাপরিচালক, র‌্যাব-১৩-এর অধিনায়ক, কর্নেল জিএস, ডিজিএফআই, অতিরিক্ত পরিচালক এনএসআই, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, রংপুর অঞ্চল, রংপুর বিভাগের সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা।

্রিন্ট

আরও সংবদ