খুলনা | রবিবার | ১০ অগাস্ট ২০২৫ | ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২

যেভাবে ‘অপমান’ করা হচ্ছে, ইতিহাসে লেখা থাকবে : মঞ্জু

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩০ এ.এম | ১০ অগাস্ট ২০২৫


অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অপমানিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তিনি বলেন, “অনেক ভাবে আমাদের অপমান করা হয়েছে, এই জাতিকে অপমান করা হয়েছে। কিন্তু, এবার যেভাবে অপমান করছে, এটি ইতিহাসে লেখা থাকবে।”
শনিবার রাজধানীর ইমানুয়েল কনভেনশন সেন্টারে জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলনে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। গণঅভ্যুত্থানে আ’লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর আ’লীগের জোট শরিক জেপির (মঞ্জু) চেয়ারম্যান ও দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে আটকের তথ্য দিয়েছিল পুলিশ। পরে তাকে ছেড়ে দেয় বলে খবর আসে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সহিংসতার ঘটনায় পাঁচটি মামলার আসামির তালিকায় নাম রয়েছে মঞ্জুর। নব্বইয়ের দশকে এরশাদ সরকারের মন্ত্রী মঞ্জু ১৯৯৬-২০০১ আ’লীগ নেতৃত্বাধীন ঐকমত্যের সরকারেও মন্ত্রী ছিলেন। সে সময় তিনি ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব। পরে তিনি দল ভেঙে আলাদা সংগঠন শুরু করেন, যা এখন জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) হিসাবে পরিচিত। 
২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি আ’লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করলে মঞ্জুকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে দপ্তর পাল্টে মঞ্জুকে তিনি দেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
পিরোজপুর-২ আসন থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য হলেও সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে হেরে যান মঞ্জু। তার বাবা তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।
‘অনির্বাচিত সরকার’ এখন সরকার চালাচ্ছে মন্তব্য করে মঞ্জু বলেন, “আমাদের দুঃখ লাগে, এই দেশে যারা রাজনীতি করেছে, এদেশের মানুষের সাথে যারা সংগ্রাম করেছে, আন্দোলন করেছে, তাদের বাদ দিয়ে এখন দেশ কারা চালাচ্ছে?
“নন-গভর্নমেন্ট। গভর্নমেন্ট চালাচ্ছে কারা? নন-গভর্নমেন্ট। তাহলে তো চলার কথা না। সে প্রথমে বলে দিয়েছে, যে আমি চালাচ্ছি না। উপদেশ দিচ্ছে কারা, যারা এই দেশে বসবাস করতেন না।”
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “কোথায় আমেরিকায় ছিল, লন্ডনে ছিল, জাপানে ছিল, তাদের এনে বই লেখাচ্ছে। সংস্কার করতেছে। বাস্তবায়ন করবে কে?”
মঞ্জু বলেন, “এখন রাজনীতি কোথায় আছে, আল­াহ তাআলা ছাড়া কেউ জানে না। ১৮ কি ২০ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে রাজনীতি শুরু করেছি। পাকিস্তানের অন্যায়, শোষণ, অবজ্ঞা-এর বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি; স্বাধীকারের জন্য। সেটি এক পর্যায়ে স্বাধীনতার রূপ গ্রহণ করলো।
“আমরা বিপ্লব করে, পাকিস্তান ভেঙে আমরা বাংলাদেশ করেছি। এখন আমরা যে বাংলাদেশ করলাম, এটা দিয়ে আবার একটা বিপ্লব হচ্ছে। সংস্কার করছে।”
এরশাদ সরকারের আমলেও সংস্কার হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, “আমাদের ব্যবস্থায়ও তো সংস্কার ছিল। এরশাদ সাহেব সংস্কার করেন নাই। স্বাস্থ্যনীতি, শিক্ষানীতি, এই উপজেলা ব্যবস্থা, এগুলো সংস্কারেরই অংশ।”
দেশে নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে জেপি চেয়ারম্যান বলেন, “সংস্কার এখন কোন পর্যায়ে পৌঁছবে? দেশে একটা নির্বাচন হবে কি হবে না, করতে দিবে কি দিবে না, এই দোদুল্যমান অবস্থার ভেতর আমরা বসবাস করছি।”
আগামী নির্বাচনে ‘অনিয়মের’ আশঙ্কা করে তিনি বলেন, “আমি অনেক সময় হালকা মেজাজে বলি, নির্বাচন করার দরকার কি, তোমরা দু’টোই তো দল আছ। যে কয়টা আসন আছে, ভাগাভাগি করে নাও। যে ক’টা মন্ত্রী প্রয়োজন, ভাগাভাগি করে নাও। মাঝখান থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচন করার দরকার কী?”
এই আশঙ্কার ব্যাখ্যা দিয়ে মঞ্জু বলেন, “কেন এ কথা বলি? কারণ, অমুককে নির্বাচন করতে দেবে না, তমুককে নির্বাচন করতে দেবে না। আন্দোলনটা ছিল মানুষের অধিকারের ব্যাপারে। তাদের মৌলিক অধিকারের জন্য। কিন্তু, আজকে মৌলিক অধিকারের কথা কেউ বলে না, বাকস্বাধীনতার কথা বলে না, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলে না।
“সংবাদপত্রে পড়লাম, দখলের রাজনীতি হচ্ছে। ব্যবসা দখল হচ্ছে, দোকান দখল হচ্ছে। চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। নিয়মকানুনের ভেতরে নেই।”
জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি দলের কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, রওশনপন্থি জাতীয় পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, সে অংশের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আবু হোসেন বাবলা, জাতীয় মহিলা পার্টির সভাপতি নাজমা আক্তার।  

্রিন্ট

আরও সংবদ