খুলনা | সোমবার | ১১ অগাস্ট ২০২৫ | ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

নগরীর সরকারি মৎস্য বীজ খামার দখল করে ‘শহিদ মীর মুগ্ধ হল’ ঘোষণা খুবি শিক্ষার্থীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৪৫ এ.এম | ১১ অগাস্ট ২০২৫


খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার মধ্যে থাকা ‘খুলনা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার’ দখল করে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ হল’ নামে আবাসিক হলের ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিনের দাবি আদায়ের অংশ হিসেবে গতকাল রোববার দুপুরে খামার কার্যালয়ের নামফলকের ওপর নতুন ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্বর থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের সামনে যান। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১০ মিনিটের মধ্যে চলে যেতে বলেন। কর্মকর্তারা বের হয়ে গেলে শিক্ষার্থীরা মূল ভবনের সামনে ‘শহিদ মীর মুগ্ধ হল’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দেন। বেলা ২টা পর্যন্ত তাঁরা সেখানে অবস্থান করেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পদার্থ বিজ্ঞান ডিসিপ্লি¬নের রাকিবুল হক বলেন, প্রশাসনসহ সবার জানা দরকার আমরা হঠাৎ করেই এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করিনি। বছরের পর বছর আমরা এই দাবি উত্থাপন করে আসছি। এই দাবির যৌক্তিকতা খুলনার স্থানীয় প্রশাসন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ইউজিসি, সংশ্লি¬ষ্ট সচিবসহ প্রত্যেককে চাক্ষুষ দেখানো হয়েছে। তারা আমাদের দাবিকে অযৌক্তিক বলতে পারে নাই। এই মৎস্য বীজ উৎপাদনকেন্দ্র একটি অর্ধ পরিত্যক্ত স্থাপনা। এখানে ১০টা পুকুর, একটা পরিত্যক্ত গলদা চিংড়ির হ্যাচারি, একটি চারতলা ভবন ও কর্মকর্তাদের বাসভবন আছে। এটা তৈরি হয়েছিল পাশের ময়ূর নদীর জোয়ার ভাটা এবং এ সংক্রান্ত মাছের পোনা উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করার জন্য। ময়ূর নদী দীর্ঘদিন নাব্য হারিয়েছে, জোয়ার ভাটার প্রভাব নেই। তাই এই খামার মৎস্য গবেষণার জন্য তেমন ভূমিকা রাখতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন মাত্র এক পঞ্চমাংশ। দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান এতটা করুণ নয়। তাই এই মৎস্য ভবন আমাদের কোনো দাবি নয়, আমাদের অধিকার। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙার পর আমরা নিজেরাই এই অধিকার আদায় করছি এবং আদায় করেই ছাড়ব।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ বদরুজ্জামান জানান, শিক্ষার্থীরা এসে খামারে আমাদের নামফলক সরিয়ে ফেলেছেন। আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী যাঁরা ছিলেন, তাঁদের বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করেছি। ব্যাপারটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানোর প্রক্রিয়া চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার ভেতরে থাকা ১০ দশমিক ৩৫ একর আয়তনের খামারটি মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসন, গবেষণাগার স¤প্রসারণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে খামারটি বাধা হয়ে আছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসংখ্যা সাত হাজারের বেশি হলেও হল আছে মাত্র পাঁচটি। এতে মাত্র ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা নিশ্চিত হয়। জীববিজ্ঞানভিত্তিক ডিসিপ্লি¬নগুলোর মাঠ গবেষণার ক্ষেত্রেও জমির অভাব তীব্র সমস্যা তৈরি করেছে।
এরআগে, গত ৬ ফেব্র“য়ারি মৎস্য অধিদপ্তরের জমিতে ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা ব্যানার টাঙিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। ২০২৪ সালের ৬ নভেম্বরেও একই দাবিতে ক্যাম্পাসে সমাবেশ করে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন তাঁরা। ওই মাসেই মানববন্ধন, বিক্ষোভ-সমাবেশ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিবের কাছে স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মৎস্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় জমি হস্তান্তরের অনুরোধ জানিয়েছিল। চলতি বছরের মার্চে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার খুলনায় এসে বিষয়টিকে যৌক্তিক উলে­খ করে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মাহবুবুর রহমান জানান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স¤প্রসারণের জন্য ২০৩ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব-সংবলিত প্রকল্প অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ও আছে। আজকের ঘটনাটি এ ধরনের কোনো প্রক্রিয়ার অংশ নয়। দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা হয়তো সেখানে গেছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ বদরুজ্জামান বলেন, এটা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাইলে দুই মন্ত্রণালয়কে সম্মত হওয়া লাগবে। কোন প্রক্রিয়ায় অধিগ্রহণ হবে, সেটাও ঠিক করা হয়। আপসে হস্তান্তর হবে নাকি ক্ষতিপূরণ দিয়ে হস্তান্তর হবে, সেটারও সিদ্ধান্ত হবে। অধিগ্রহণের বিষয় হলে সিদ্ধান্তের চিঠি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করবে। তখন মূল্য নির্ধারণ বা অন্য সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু এ ধরনের কোনো কিছু এখনো হয়নি।
মৎস্য অধিদপ্তরের এক সূত্র জানায়, এ জায়গার জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি আবেদন দিয়েছিল। সেটির অনুলিপি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টাকেও দেওয়া হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মৎস্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে ঢাকায় একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে উভয় পক্ষ নিজেদের যৌক্তিকতা তুলে ধরে। আলোচনায় শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়, খামারটি হস্তান্তর করা হবে না। কারণ এর সম্ভাবনা রয়েছে। আজকের ঘটনার পেছনে ওই সিদ্ধান্তই প্রভাব ফেলেছে।
ওই সভার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ওই সভায় আমি ছিলাম না। তাই সিদ্ধান্ত জানি না।’
এ বিষয়ে খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমরা জেনেছি। ব্যাপারটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ