খুলনা | সোমবার | ১১ অগাস্ট ২০২৫ | ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

প্রতিবাদে বিক্ষোভ মানববন্ধন : সোমবারও কর্মসূচি ঘোষণা

খুলনা শিশু হাসপাতালে ফ্যাসিবাদের দোসর পুনর্বহালের সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফুঁসছেন কর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৪৫ এ.এম | ১১ অগাস্ট ২০২৫


খুলনা শিশু হাসপাতাল থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ আল আমিন রাকিব ও সহকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তা শীলা হালদারকে চাকুরিতে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ্যাডহক কমিটি। বিষয়টি জানাজানি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে হাসপাতালের মেইন গেট অবরুদ্ধ করে গতকাল রবিবার দুপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন তারা। 
শিশু হাসপাতালের ল্যাব ইনচার্জ এস এম ইমরান বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে দলীয় কোটায় শিশু হাসপাতালে চাকুরি পান সিটি কলেজ শাখা ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন রাকিব। আ’লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজানের আস্থাভাজন হিসেবে তিনি নিয়োগ পেয়েই একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। ক্ষমতার অপব্যবহার, অসদাচারণ, আর্থিক অনিয়মসহ নানা দুর্নীতিতে জড়িত হন। গেল বছরের ৫ আগস্টের পর দীর্ঘদিন নির্যাতন ও জুলুমের শিকার ডাক্তার, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুঁসে ওঠে। তাদের তীব্র ক্ষোভ ও লাগাতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ১৪ আগস্ট এ দু’জনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। কর্তৃপক্ষ আমাদের নিশ্চিত করেছিল যে তারা আর চাকুরিতে নেই। হঠাৎ করে গত শনিবার রাতের অন্ধকারে একটা নীল-নকশা আঁকা হয়েছে।
হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির স্টাফ এমডি আলী আসগর বলেন, আওয়ামী দোসর সাবেক প্রশাসনিক র্কমর্কতা ও সহকারী কর্মকর্তাকে গত বছর স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিলো। তাদেরকেই আবার কেন ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছেন?
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন মোঃ আলী আকবর, মোঃ মামুন, মোঃ আশারাফুর রহমান তুফান, মোঃ আলমগীর গাজী, মোঃ মনিরুল ইসলাম ও দেবদাস বিশ^াস প্রমুখ। সোমবার সকাল থেকে পুনরায় বিক্ষোভ কর্মসূচি চলবে বলে সভা থেকে ঘোষণা দেয়া হয়। 
জানা গেছে, গত ২৪ মে শিশু হাসপাতালের অ্যাডহক কমিটি সভায় এই দু’জনের বরখাস্তের বিষয়টি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে মতামত ও সুপারিশ প্রদান করবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। কমিটির সদস্যরা সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে তাদের পূর্ববর্তী কর্ম দক্ষতা বিবেচনায় নিয়ে কর্মস্থলে যোগদানের সুপারিশ করেন। 
যোগাযোগ করা হলে কমিটির সদস্য মুনীর আহমেদ বলেন, হাসপাতালে কর্মীদের কাজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দূর করার জন্য রাকিবের মতো দক্ষ লোকের দরকার। যে প্রক্রিয়ায় তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছিল তা বিধিসম্মত ছিল না। মিটিংয়ে ৫ জন সদস্য সর্বসম্মতভাবে দুইজনকে কাজে ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। 
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার ডাঃ অনুপ কুমার দে বলেন, তারা দু’জন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে চলে গিয়েছিল। এ্যাডহক কমিটি তাদেরকে আবারও ফিরিয়ে আনবে-এ খবর শুনে হাসপাতালের সবাই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। আমরা ডাক্তারসহ অন্য কেউ চাই না তারা ফিরে আসুক। 
তবে আল আমিন রাকিব বলেন, হাসপাতালে ফেরার বিষয়ে আমার আগ্রহ নেই। আমি ভিন্ন পেশায় যোগ দিয়েছি। চেয়েছিলাম হাসপাতালের কাছে আমার পাওনা টাকাগুলো দিয়ে দেয়া হবে। কমিটি আমাকে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানতাম না।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ এপ্রিল বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকার সদস্যের এডহক কমিটি ঘোষণা করেন। এ কমিটিতে পদাধিকারবলে জেলা প্রশাসক আহবায়ক, কোষাধ্যক্ষ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড বিভাগীয় কার্যালয় পরিচালককে মোঃ শাহীনুজ্জামান (উপ-সচিব), সদস্যবৃন্দ হলেন শিশু হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক/সিনিয়র কনসালটেন্ট, খুলনা ধানচাল বণিক সমিতির সভাপতি মোঃ মুনীর আহমেদ, মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ শফিকুল আলম তুহিন, নগর মহিলাদলের সাবেক সভাপতি আজিজা খানম এলিজা ও জামায়াত নেতা সাবেক ভিপি এড. শেখ জাকিরুল ইসলাম।
এর আগে, গত ২৮ অক্টোবর শিশু ফাউন্ডেশনের তৎকালীন সভাপতি ও বিভাগীয় কমিশনার মোঃ হেলাল মাহমুদ শরীফ খুলনা শিশু হাসপাতাল পরিচালনায় জেলা প্রশাসককে আহবায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট এ্যাডহক কমিটি গঠন করেছিলেন। সেই আহবায়ক কমিটিতে ছিলেন কোষাধ্যক্ষ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড বিভাগীয় কার্যালয় পরিচালককে মোঃ শাহীনুজ্জামান (উপ-সচিব), সদস্য খুলনা শিশু হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক, সদস্য মোঃ মুনীর আহমেদ, আজীবন সদস্য মোঃ তারিকুল ইসলাম জহির, এড. শেখ জাকিরুল ইসলাম ও এসএম নাজিম উদ্দিন পায়েল। পরে এ কমিটি বাতিল করে উপরোক্ত কমিটি ঘোষণা করা হয়।

্রিন্ট

আরও সংবদ