খুলনা | সোমবার | ১১ অগাস্ট ২০২৫ | ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

অভিযোগকারী প্রধান সহকারী ছুরিকাহত হয়ে খুমেক হাসপাতালে

বাগেরহাটের পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ : তদন্ত কমিটি গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৪৬ এ.এম | ১১ অগাস্ট ২০২৫


বাগেরহাট জেলা পুলিশ সুপার তৌহিদুল আরিফের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা অনিয়মের মাধ্যমে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। তারই প্রধান  সহকারী এস এম হাফিজুর রহমান এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন, আইজিপিসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। বিষিয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের একধিক টিম। 
এদিকে পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় তার প্রধান সহকারীকে বাগেরহাট থেকে খাগড়াছড়ি বদলী করা হয়েছে এবং গত সপ্তাহে খুলনায় তার উপর ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। বাগেরহাটের পুলিশ সুপার তৌহিদুল আরিফ তার বিরুদ্ধে তারই প্রধান সহকারী দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ করার কথা স্বীকার করেন। তবে বিষয়টা তদন্তধীন থাকায় সে দুর্নীতির কোন কথা বলতে রাজি হননি।
বাগেরহাট পুলিশ সুপার অফিসের প্রধান সহকারী এস এম হাফিজুর রহমান দালিলিক প্রমাণসহ ১০ পাতার অভিযোগে উলে­খ করেন, গত ২০২৪ সরকার পরিবর্তনের পর বাগেরহাট জেলার সাবেক পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত সিলেট রেঞ্জে প্রথম ওএসডি হন। নতুন পুলিশ সুপার তৌহিদুল আরিফ যোগদান করে অফিস সহকারীর মাধ্যমে জানতে পারেন বিগত ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে টেন্ডার আহবান করা হলেও কোন মালামাল সরবরাহ না নিয়ে ঠিকাদারদের দিয়ে তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা নেয়া হয়েছে। বিনিময় ঠিকাদারদের ৫% লাভের টাকা দেয়া হয়েছে। টেন্ডারের পণ্য না নিয়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে মোট ৩৯ লাখ ৭৬ হাজার ৯৫৮ টাকা নিয়ে গেছেন সাবেক পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত। বিষয়টি বর্তমান পুলিশ সুপার জানার পর তিনি প্রধান সহকারীকে চাপ প্রদান করেন টাকা ফেরত আনার জন্য পণ্য ক্রয় করবেন বলে। 
পরবর্তীতে পুলিশ সুপার কনস্টেবল নং ১২০৪ মোঃ রুমেনুর রহমানকে সাবেক পুলিশ সুপার আবুল হাসনাতের কাছে পাঠিয়ে তার কাছ থেকে ৩৫টি আইটেম না ক্রয় বাবদ নগদ ২৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৮ টাকা বুঝে দিয়ে টাকা রিসিভ করিয়ে নেন। কিন্তু সাবেক পুলিশ সুপারের কাছ থেকে নগদ টাকা ফেরত আনার পরও তিনি কোন পণ্য ক্রয় করেননি বলে তারই প্রধান সহকারীর অভিযোগ।  
একজন পুলিশ কসস্টেবলের মাধ্যমে এত নগদ টাকা গাড়িতে করে আনার বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে সেই কনস্টেবলকে খাগড়াছড়ি বদলী করে দেয়া হয়। এস এম হাফিজুর রহমানের অভিযোগ টাকা ফেরত পাবার পর পুুলিশ সুপার আগের পুলিশ সুপারের নামে তিনটি মামলা দিয়ে গ্রেফতার করিয়ে দেন এবং বাগেরহাট কারাগারে নিয়ে আসেন।
বাগেরহাটের সাবেক পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত পরবর্তীতে বাগেরহাট জেলার তিনটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে বাগেরহাট জেলে ছিলেন। পরবর্তীতে তাকে বগুড়া জেলা কারাগারে হস্তান্তর করা হয় বলে বর্তমান পুলিশ সুপার তৌহিদুল আরিফ নিশ্চিত করেছেন। 
তৌহিদুল আরিফ পুলিশ সুপার নতুন দায়িত্ব নিয়ে আগের পুলিশ সুপারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে টেন্ডার আহবান করে ঠিকাদারের কাছ থেকে পণ্য না নিয়ে তাদের ৫-১০% লাভ্যাংশ টাকা দিয়ে স্বাস্থ্য বিধান সামগ্রি, মনোহরি সামগ্রি, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, কম্পিউটার সামগ্রী, কাচাঁ মাল ও খুচরা যন্ত্রাংশ, মটরযান মেরামত, জলযান মেরামত, যন্ত্রপাতি ক্রয়, আসবাপত্র ক্রয়, পরিবহন ব্যায়, চিকিৎসা ও শৈল্য সরঞ্জামাদি, ওষুধ ও প্রতিষেধক খাতে প্রায় দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন বলে তারই প্রধান সহকারী দালিলিক ভাবে প্রমাণ দিয়ে অভিযোগ করেন এবং তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে স্বীকার করেন।
পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে দেওয়া তারই প্রধান সহকারী দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সদর দপ্তর তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটির প্রধান খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবু রায়হান মোহাম্মদ সালেহ। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি প্রধানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তদন্ত কমিটির বিষয় স্বীকার করেন। বলেন, তিনি স¤প্রতি তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছেন। তদন্তাধীন বিষয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন।
এছাড়ও প্রধান সহকারী এস এম হাফিজুর রহমান আইজিপি বরাবরে আবেদনে জানান, পুলিশ সুপার গাড়ি রিকুজিশনে ভুয়া বিল করে ৯ লাখ ৭৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রধান সহকারী এস এম হাফিজুর রহমান এই অভিযোগ আইজিপিসহ দুদকের দেবার পর পুলিশ সুপার প্রধান সহকারী এম এম হাফিজুর রহমানকে বদলী করার জন্য ডিআইজি খুলনা রেঞ্জ বরাবরে পত্র দেন।  
ডিআইজি মোঃ রেজাউল হক প্রধান সহকারীকে ডেকে ঘটনা জানতে চাইলে পুলিশ সুপারের দুর্নীতি কথা তুলে ধরে লিখিত অভিযোগ করেন। প্রধান সহকারীর অভিযোগ ডিআইজি তার কাছে থেকে লিখিত অভিযোগ নিয়ে পুলিশ সুপারকে ডেকেও কোন ব্যবস্থা নেননি। এ ব্যাপারে ডিআইজি রেজাউল হকের সাথে কথা বলতে চাইলে, তিনি এক ঘন্টা বসিয়ে রেখে কথা বলবেন না বলে জানান।
এ ব্যাপারে পরে বাগেরহাট পুলিশ সুপার জানান, প্রধান অফিস সহকারী হাফিজুর রহমানকে খাগড়াছড়িতে বদলী করা হয়েছে। এই প্রধান সহকারী ২০১৪ সাল থেকে বাগেরহাট পুলিশ সুপার কার্যালয়ে যুক্ত। এই দীর্ঘসময় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে চাকুরীতে থেকে নিজেকে পুলিশ অফিসের দণ্ডমুন্ডুর কর্তায় পরিণত করেছেন। নিজের স্ত্রীর নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্টানসহ দীর্ঘ এক যুগে বাগেরহাটে ৭টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে পুলিশের যাবতীয় সরবরাহ টেন্ডার দিয়ে মালিকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়েছেন। 
এছাড়া ডিআইজি, পুলিশ সুপারের নামে নিয়োগ বাণিজ্য অর্থ আত্মসাৎ, কর্মচারী বদলীর নামে কোটি কোটি টাকার অবৈধ আয় করে খুলনা, ঢাকায় বাড়ি ফ্লাট নির্মাণ করেছেন বলে পুলিশ সুপার তৌহিদুল আরিফ পাল্টা অভিযোগ করেন।
এদিকে বাগেরহাট পুলিশ সুপার অফিসের অফিস সহকারী এস এম হাফিজুর রহমান বদলী হওয়া খাগড়াছড়িতে যোগদান না করে এই বদলীর বিরুদ্ধে খুলনা প্রশাসনিক আদালতে মামলা করেছেন। এই মামলায় গত সপ্তাহে আদালতে থেকে খুলনা হাজী মুহাসিন রোড়ে দিয়ে যাবার সময় তিনজন দুর্বৃত্ত হাফিজুর রহমানের নিতম্বে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাহত করে। পরে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনও তিনি চিকিৎসাধীন।
অপরদিকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন বাগেরহাট পুলিশ সুপারে তৌহিদুল আরিফের দশ কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশণ সভাপতি মোঃ মতিউর রহমান শেখ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনিসুজ্জামান বিবৃতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।  

্রিন্ট

আরও সংবদ