খুলনা | শুক্রবার | ১৫ অগাস্ট ২০২৫ | ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২

বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে পুরোনো সমস্যা ফিরবে: ড. ইউনূস

খবর প্রতিবেদন |
১২:৪৫ এ.এম | ১৫ অগাস্ট ২০২৫


বিচার ও কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া যদি কেবল নির্বাচন আয়োজন করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ আবারও আগের সংকটময় অবস্থায় ফিরে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএ’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন সাংবাদিক লোকি সু। সেখানে দেশের বর্তমান অবস্থা, অতীতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ভবিষ্যতের রূপরেখা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেন ড. ইউনূস।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরুর সময় চারটি মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্তম্ভ হচ্ছে—সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন। তার মতে, শুধুমাত্র নির্বাচন আয়োজন করলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। যদি সংস্কার ও বিচার কার্যক্রম ছাড়া নির্বাচন হয়, তাহলে দেশ আবারও পুরোনো রাজনৈতিক সংকটে পড়ে যাবে।

ড. ইউনূস বলেন, আমরা যে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা পেয়েছি, তা ছিল জালিয়াতিপূর্ণ। সবকিছুর অপব্যবহার হয়েছিল, যার ফলে দেশে ফ্যাসিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠা পায়। সেই সরকার জনগণকে শোষণ করেছে, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে এবং সামাজিক কাঠামোকে ভেঙে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের অবস্থা দেখে মনে হয়েছিল, যেন রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের পর সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। সে তুলনাতেই দেশে সংস্কারমূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে তিনি মনে করেন, এই কাজ কখনোই পুরোপুরি শেষ হওয়ার নয়, বরং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।

ড. ইউনূস বলেন, ধরুন, আমরা বিচার বা সংস্কার না করে সরাসরি নির্বাচন করি। তাহলে নির্বাচনের পর সব ক্ষমতা চলে যাবে নির্বাচিতদের হাতে। তখন আগের ব্যবস্থাই আবার ফিরে আসবে। আমাদের কাজ তখন অর্থহীন হয়ে যাবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ড. ইউনূস বলেন, তিনি রাস্তায় মানুষ হত্যা করেছেন। আমি তাকে দানব বলেছি। যদি আরও শক্তিশালী কোনো শব্দ থাকত, তাহলে আমি সেটাই ব্যবহার করতাম। তিনি মনে করেন, শেখ হাসিনাকে আর অস্থিরতা তৈরির সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। তার ভাগ্য নির্ধারণ করবে বিচার।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমরা চীন, পাকিস্তানের সঙ্গে যেমন ভালো সম্পর্ক চাই, তেমনি ভারতের সঙ্গেও গভীর বন্ধন চাই। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কখনোই খারাপ হয়নি।

তিনি আরও জানান, নেপাল এবং ভুটানের পাশাপাশি ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যকেও একটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক অঞ্চলে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব। এতে সব দেশই উপকৃত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানচিত্র না আঁকলে ভারতের মানচিত্রও আঁকা সম্ভব নয়। এই দুই দেশের সম্পর্ক গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। তিনি বিশ্বাস করেন, বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক অঞ্চলজুড়ে একটি যৌথ অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব।

সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে তিনি স্মরণ করেন, কীভাবে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন। বলেন, যখন আন্দোলনের সময় আমাকে সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানানো হয়, তখন আমি বাংলাদেশে ছিলাম না। প্রথমে রাজি হইনি। কিন্তু ছাত্ররা যখন বলেন, আপনি দূরে বসে জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগ করছেন, আর আমরা রক্ত দিচ্ছি—তখন আমি না করতে পারিনি।

তিনি জানান, আন্দোলনকারীদের অনুরোধ এবং দেশের সংকটময় অবস্থা তাকে নাড়া দেয়। সেই দায়বোধ থেকেই তিনি সরকারের নেতৃত্ব দিতে রাজি হন।

ড. ইউনূসের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিবর্তন আনা। আর তার জন্য একমাত্র পথ—গঠনমূলক সংস্কার, ন্যায়বিচার এবং জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। তবে সেটা হতে হবে সুস্থ, পরিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশে, যেখানে আগের শোষণমূলক ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি হবে না। 

্রিন্ট

আরও সংবদ