খুলনা | শুক্রবার | ১৫ অগাস্ট ২০২৫ | ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২

চাঁদাবাজিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত

ভোরে নীলা মার্কেটে হাঁসের মাংস খেতে যান আসিফ মাহমুদ, বন্ধ থাকলে যান ওয়েস্টিনে

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩৮ এ.এম | ১৫ অগাস্ট ২০২৫


স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, মাঝে মাঝে রাতে তার কাজ শেষ হতে ভোর হয়ে যায়। সে সময় বাসায় খাওয়া-দাওয়া দেওয়ার মতো কেউ না থাকায় তিনি বেশির ভাগ সময় তিনশ’ ফুটের নীলা মার্কেটে যান হাঁসের মাংস খেতে। আর বেশি ভোর হয়ে গেলে নীলা মার্কেট বন্ধ হয়ে যায়, তখন তিনি যান গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে কেবিনেট মিটিং শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে এ দাবি করেন তিনি।
গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেফতার গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহি®কৃত নেতা জানে আলম অপুর ভিডিও বার্তায় এ ঘটনায় নাম আসা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
ভিডিওতে জানে আলম বলেছেন, যেদিন সাবেক সংসদ সদস্যের বাসা থেকে তারা চাঁদার টাকা নিয়েছিলেন, সেদিন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে গুলশানের একটি জায়গায় তার সাক্ষাৎ হয়েছিল। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেছেন, ওই দিন তিনি ওই এলাকায় গিয়েছিলেন কিনা সে বিষয়টি তার মনে নেই।
চাঁদাবাজির ওই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পাওয়া হেলমেট পরা ব্যক্তি আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজে হেলমেট পরা যে কাউকে যদি আমাকে বলে দাবি করা হয়, এটা কতটুকু আসলে বিশ্বাসযোগ্য।’
চাঁদাবাজির ওই ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা নেই দাবি করে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার মনে হয় না, এখনও কেউ এ রকম কোনো প্রমাণ দিতে পেরেছে আমার সম্পৃক্ততা আছে। বরং আরও যার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, এই সাক্ষাৎকারটা একজন রাজনৈতিক নেতার বাসায় একজনকে জোরপূর্বক নেওয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ এসেছে এটাও অত্যন্ত গুরুতর একটা অভিযোগ। এবং সেটা পরিবারের দিক থেকে এসেছে। যথেষ্ট রিলায়েবলও (বিশ্বাসযোগ্য) এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে। তো এর সাথে আমার সংশ্লিষ্টতার যে কথা বলা হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’
চাঁদাবাজিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত :  চাঁদা আদায়ের ঘটনায় গ্রেফতার বাগছাসের বহিষ্কৃত নেতা জানে আলম অপুর সঙ্গে গণঅভ্যুত্থানের পরে কখনো দেখা হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল­ী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এছাড়া চাঁদাবাজির অভিযোগকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেও দাবি করেছেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত। বিষয়টা এখনও যেহেতু তদন্তাধীন আছে, অনুসন্ধান চলছে, তাই মন্তব্য করা উচিত না। তারপরেও যেহেতু আমার নাম স্পেসিফিকলি সেখানে এসেছে এবং আমার নামটা আসার পর আমি অবাকই হই। 
আসিফ মাহমুদ বলেন, জানে আলম অপুকে আমি চিনতাম যখন আমি ছাত্র অধিকার পরিষদে ছিলাম। ২০২২ সালে যখন আমরা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তখন সেও ছাত্র অধিকার পরিষদ করত, সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে সম্ভবত সে ছিল। তখন চিনতাম। কিন্তু গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের (গণঅভ্যুত্থান) পরে তার সঙ্গে আমার কখনও কথা বা দেখা হয়নি। 
উপদেষ্টা আরও বলেন, এই ধরণের একটা অভিযোগ আসার পরে আমরা আবার আরেক জায়গা থেকে জানতে পারলাম আজকে কিছুক্ষণ আগেও আমি ক্যাবিনেট থেকে বের হয়ে দেখলাম যে একজন সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার স্ত্রী পরিচয়ে। আমি খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি যে আসলে কী এই ঘটনা। তিনি দাবি করেছেন যে অপুকে গুম করে নিয়ে এই স্টেটমেন্ট আদায় করা হয়েছে জোরপূর্বক। যদি এরকম কিছু হয়ে থাকে এটা আসলেই অত্যন্ত শঙ্কাজনক।
রাজধানীর গুলশানে সাবেক একজন এমপির বাসায় চাঁদা আদায়ের ঘটনায় ওই মামলায় গ্রেফতার বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) বহিষ্কৃত যুগ্ম-আহ্বায়ক জানে আলম অপুর একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ধারণা করা হচ্ছে, চাঁদাবাজির ঘটনার পর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ভিডিওটি ধারণ করেছিলেন জানে আলম অপু। ৩৫ মিনিটের ওই ভিডিওতে ঘটনার আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেন তিনি।
ভিডিওতে জানে আলম অপু বলেন, গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় টাকার ব্যাগ নিতে যে ছেলেকে দেখেছেন, সেটা আমি। আপনার একটি ফুটেজের মাধ্যমে দেখেছেন যে সমন্বয়করা চাঁদাবাজিতে জড়িত। যে সমন্বয়ক গত বছর ছিল মহানায়ক তারা হয়ে গেলো চাঁদাবাজ।
তিনি বলেন, আমার কিছু প্রশ্ন আছে। আপনারা কি জানেন, ওইদিন ভোর ৫টায় ওই জোনের ডিসি-এসিকে অবগত করে একদম অফিসিয়াল প্রসেসে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শাম্মির (সাবেক এমপি) বাসায় আমরা অভিযান চালাই। আপনারা কি জানেন, সেই অভিযানে যাওয়ার আগে গুলশানের কোনো একটি জায়গায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে আমার কথা হয়।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগে সংবাদ সম্মেলন অপুর স্ত্রী আনিসা জানান, জুলাইয়ের ৩১ তারিখ রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত অপুকে বন্দি করে যে স্বীকারোক্তি নিল, এটা কারা নিল? আর গোপীবাগ কার বাসা? গোপীবাগ ইশরাক হোসেনের বাসা না?
আনিসা আরও বলেন, ‘অপুকে তো ইশরাক হোসেনের বাসার সামনে থেকেই ধরেছে। আর আপনারা দেখেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ভিডিও-ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে, এগুলো সব ইশরাকের বাসায়ই।’

্রিন্ট

আরও সংবদ