খুলনা | শুক্রবার | ১৫ অগাস্ট ২০২৫ | ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২

অবৈধ ‎সম্পদ : পাপিয়া দম্পতির সাড়ে ৩ বছরের কারাদণ্ড

খবর প্রতিবেদন |
০১:৫৬ এ.এম | ১৫ অগাস্ট ২০২৫


অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনকে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু তাহের। কারাদণ্ডের পাশাপাশি পাপিয়া ও সুমনকে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে, অনাদায়ে ছয় মাসের সাজা হয়েছে। পাপিয়া দম্পতির আইনজীবী শাখাওয়াত উল­াহ ভূঁইয়া বলেন, “এই সাজা ইতোমধ্যে তারা ভোগ করেছেন।”
সোয়া ৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২০ সালের ৪ অগাস্ট দুদকের উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ এ মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পরের বছরের মার্চ মাসে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন দুদক কর্মকর্তা শাহীন আরা মমতাজ।
সেখানে পাঁচ কোটি ৮৪ লাখ ১৮ হাজার ৭১৮ টাকার অবৈধ সম্পদ নিজেদের দখলে রাখার অভিযোগ আনা হয় পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে। এরপর ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর থেকে গত ২২ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেনসিয়াল স্যুট এবং চেয়ারম্যান স্যুটসহ ২৫টি কক্ষে অবস্থান করে খাবার, মদ, স্পা, লন্ড্রি, বারের খরচ বাবদ তিন কোটি ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৬১ টাকার বিল নগদে পরিশোধ করেন পাপিয়া। ওয়েস্টিন হোটেলে থাকার সময় তিনি প্রায় ৪০ লাখ টাকার কেনাকাটা করেছেন, যার কোনো বৈধ উৎস তিনি তদন্তের সময় দেখাতে পারেননি।
এছাড়া ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে মাসে ৫০ হাজার টাকা করে ৩০ লাখ টাকা বাসা ভাড়া দিয়েছেন। গাড়ির ব্যবসায় এক কোটি টাকা এবং নরসিংদীতে কেএমসি কার ওয়াশ সলিউশনে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
বিভিন্ন ব্যাংকে পাপিয়া ও তার স্বামীর নামে ৩০ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৮ টাকা জমা আছে উলে­খ করে মামলায় বলা হয়, দুদকের অনুসন্ধানে এসব অর্থের বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। ২০২০ সালের ২২ ফেব্র“য়ারি পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ঢাকা ও নরসিংদীতে পাপিয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়ার কথা জানায় র‌্যাব। অভিযানে তাদের বাসা থেকে নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা এবং মফিজুর রহমান সুমনের নামে হোন্ডা সিভিএ ২০১২ মডেলের একটি গাড়ি জব্দ করা হয়, যার দাম ২২ লাখ টাকা। সে সময় র‌্যাবের তরফ থেকে বলা হয়, পাপিয়া গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেল ভাড়া নিয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালিয়ে যে আয় করতেন, তা দিয়ে হোটেলে বিল দিতেন কোটি টাকার ওপরে।
সব মিলিয়ে তাদের নামে ছয় কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার ৭১৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে উলে­খ করে দুদকের মামলায় বলা হয়, এসব অর্থ তারা অপরাধজনক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আয় করেছেন।
‎‎গ্রেফতারের পর পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দু’টি মামলা করে র‌্যাব। বিমানবন্দর থানায়ও তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ এর অধীনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আর গুলশান থানায় মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে সিআইডি আরেকটি মামলা করে। পরে দুদক পাপিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে।
এর মধ্যে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর অস্ত্র মামলায় পাপিয়া ও সুমনের ২০ বছরের কারাদণ্ড হয়। আর অর্থ পাচারের মামলায় গত ২৫ মে পাপিয়ার চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় আদালত। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীসহ সহযোগীরা খালাস পান।

্রিন্ট

আরও সংবদ