খুলনা | শনিবার | ১৬ অগাস্ট ২০২৫ | ১ ভাদ্র ১৪৩২

উপজেলা প্রশাসনের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন

চিলা নদীর বাঁধ ভেঙে মোংলায় প্রায় ৭শ’ একর মৎস্য ঘের প্লাবিত

মোংলা প্রতিনিধি |
০২:১৩ এ.এম | ১৫ অগাস্ট ২০২৫


মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জালছেড়া ব্রিজ এলাকায় চিলা নদীর দক্ষিণ পাড়ের বাঁধ ভেঙে এলাকার কয়েকশ’ চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ৫ থেকে ৭শ’ একরের বাগদা, গলদা ও সাদা মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গিয়ে কয়েক কোটি টাকা মাছ ভেসে গেছে। এতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় চিংড়ি চাষিরা। বিপাকে পড়েছেন শতাধিক মৎস্য চাষি ও ঘের ব্যবসায়ী। চিলা নদীর বাধটি পুনঃ নির্মাণসহ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে উপজেলা প্রশাসনের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধবার বিকেলে ভরা জোয়ারের প্রবল স্রোতে চিলা নদীর বাঁধের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিটার ভেঙে যায়। হঠাৎ করে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় খালের পানি আশপাশের এলাকায় প্রবল বেগে পানি ঢুকে পড়ে এবং বিস্তীর্ণ এলাকার চিংড়ি ঘের ও ফসলি জমি প্লাবিত হয়। এতে ৫ থেকে ৭শ’ একরের দেড় শতাধিক মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। এতে এক ঘেরের মাছ অন্য ঘেরে চলে যায়। আবার অধিকাংশ মাছ নদীর পানির স্রোতে ভেসে গেছে। 
স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তরা জানায়, এ অঞ্চলের পানিতে লবণাক্ততা বেশী থাকায় মাছ ছাড়া অন্য কোন ফসল হচ্ছে না। তাই এখানকার মানুষের একমাত্র আয়ের উৎস হচ্ছে জমিতে চিংড়ি ঘের করে বাগদা, গলদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ চাষ করা। বর্তমানে বাগদা ও গলদা চিংড়ির চাষের মৌসুম চলছে। তাই পানি কিছুটা মিষ্টি হওয়ায় স¤প্রতি চিংড়ির মাছের পাশাপাশি এ সকল ঘেরে ছাড়া হয়েছে রুই, কাতল, মৃগেল, পাইসাসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ। হঠাৎ বাঁধ ভেঙে ঘেরগুলো তলিয়ে একাকার হওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে ঘের ব্যবসায়ীরা। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছে ঘের মালিক ও মাছ চাষিরা। ক্ষতিগ্রস্ত নদীর এ বাঁধটি পুনঃনির্মাণ ও সরকারি সহায়তা না পেলে মাছ চাষের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষগুলোর জীবন-জীবিকা বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 
এদিকে ভাঙন কবলিত আশপাশ এলাকায়ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নদীর পানি আরও বাড়তে থাকলে আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। চিলা ইউনিয়নের সাবেক মেম্বর শেখর চন্দ্র রায় বলেন, চিলা ও জালছেড়া নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ায় মাছের ঘের, বসত বাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা তলিয়ে যাওয়ায় বহু পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। চাষিদের মাছ, কৃষকদের জমি সব শেষ। যদি দ্রুত বাঁধ মেরামতের ব্যবস্থা না হয়, তবে আরও বড় বিপর্যয় নেমে আসবে বলে জানায় স্থানীয়রা মাছ চাষিরা। 
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই নদীটির পাড়ে দীর্ঘদিন ধরে ভেড়িবাঁধের ফাটল ছিল। বিভিন্ন সময়ে মেরামতের দাবি জানানো হলেও যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এবার সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় নদীর পানি বৃদ্ধিসহ পানির চাপ বাড়ায় দুর্বল অংশ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়।
মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)  ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আরাফাত হোসেন জানান, চিলা নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়ার সাথে সাথে লোক পাঠানো হয়েছে। এছাড়া উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের একটি টিম নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ করে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণসহ প্রাথমিক পর্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ওই ভাঙা বাঁধ দিয়ে আর যেন পানি না ঢুকতে পারে সে ব্যাপারে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। 
উলে­খ্য বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্ট হওয়ার সুন্দরবন উপকূলে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। ফলে মোংলা বন্দর ও সুন্দরবন উপকূলে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। সাগর প্রচন্ড উত্তাল, স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদীর পানি ২/৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে। 
 

্রিন্ট

আরও সংবদ