খুলনা | রবিবার | ১৭ অগাস্ট ২০২৫ | ২ ভাদ্র ১৪৩২

ভেতরে আটকা পড়েছেন বহু

ভারতে মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের সমাধিক্ষেত্রের গম্বুজ ধস, মৃত ৫

খবর প্রতিবেদন |
০১:৪০ এ.এম | ১৬ অগাস্ট ২০২৫


ভারতের রাজধানী দিলি­র দক্ষিণাঞ্চলীয় পূর্ব নিজামুদ্দিনে মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের ঐতিহাসিক সমাধিক্ষেত্রের গম্বুজ ধসে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। 
দিলি­ দমকল বিভাগ জানায়, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও কয়েকজন চাপা পড়ে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধারকর্মীরা পাঁচটি লাশ উদ্ধার করেছেন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দমকলের পাঁচটি দল এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। দুর্ঘটনার সময় সমাধিক্ষেত্রের ভেতরে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড় ছিল বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ছোট, সবুজ রঙের ভবনটির একপাশের ছাদ হঠাৎ ভেঙে পড়ে। তখন ভবনের ভেতরে ১৫-২০ জন উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যে দারগাহর ইমামও ছিলেন বলে জানিয়েছেন তারা।
দুর্ঘটনার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হচ্ছে, ধসে পড়া অংশটি ২৫ থেকে ৩০ বছরের পুরোনো। দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত চলছে।
মৌসুমি বৃষ্টির ফলে সমাধিক্ষেত্রের গম্বুজের কাঠামো দুর্বল হয়ে গিয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া, রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকমতো না হওয়া কিংবা কাঠামোগত কোনও ত্র“টির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে কর্তৃপক্ষ। 
দ্বিতীয় মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের সমাধি ১৫৬২ সালে তার স্ত্রী হামিদা বানু বেগমের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়। বেলেপাথরে তৈরি এই স্থাপনাটি নকশা করেছিলেন বুখারার স্থপতি মির্জা গিয়াস।
মুঘল ইতিহাসে এটিই প্রথম উদ্যান-সমাধিক্ষেত্র, যা পরবর্তীতে তাজমহলসহ বহু মুঘল স্থাপত্যে প্রভাব রেখেছে। সমাধিক্ষেত্রটি ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত। পুরাতত্ত¡বিদরা একে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করেন।
১৫২৬ সালে প্রথম পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদিকে হারিয়ে বাবর দিলি­ দখল করেন। কিন্তু পাঁচ বছরের মধ্যেই বাবরের মৃত্যু হয়, সিংহাসনে আসেন তার ছেলে হুমায়ুন। শের শাহ সুরির কাছে পরাজিত হয়ে দেশ ছাড়তে হলেও শের শাহের মৃত্যুর পর হুমায়ুন পুনরায় দিলি­ দখল করেন।
১৫৫৬ সালে তার মৃত্যু হলে ১৫৬২ সালে পুরানা কিল­ার কাছেই এই সমাধি নির্মাণ শুরু হয়। সেই সময় থেকে এটি দিলি­র অন্যতম প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন হিসেবে পরিচিত।
এই সমাধিটি মূলত লাল বেলেপাথর এবং সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি, আর এর স্থাপত্যে পারস্যের ‘চারবাগ’ (চার ভাগে বিভক্ত বাগান) এবং ভারতীয় শিল্পকলার এক চমৎকার সংমিশ্রণ দেখা যায়। এই সমাধির নকশা ও নির্মাণশৈলী পরবর্তীকালে বহু মুঘল স্থাপত্যকে প্রভাবিত করেছিল, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো আগ্রার বিশ্ববিখ্যাত তাজমহল, যা প্রায় এক শতাব্দী পরে নির্মিত হয়েছিল।
এটি কেবল হুমায়ুনের সমাধি নয়, এখানে মুঘল রাজবংশের প্রায় ১৫০ জনেরও বেশি সদস্যের কবর রয়েছে, তাই একে ‘মুঘল রাজবংশের নেক্রোপলিস’ (সমাধিক্ষেত্র) বলা হয়। এর অসাধারণ ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যিক গুরুত্বের কারণে এটি ১৯৯৩ সাল থেকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা লাভ করেছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ