খুলনা | শনিবার | ১৬ অগাস্ট ২০২৫ | ১ ভাদ্র ১৪৩২

নগর ও জেলা পূজা পরিষদের নানা কর্মসূচি

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০২:০০ এ.এম | ১৬ অগাস্ট ২০২৫


আজ শনিবার পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী। অধর্মকে বিনাশ ও ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি যুগে যুগে এ পৃথিবীতে আভির্ভূত হয়েছেন। দ্বাপর যুগের সন্ধিক্ষণে রোহিনী নক্ষত্রের শুভ এই দিনে ভারতের মথুরা রাজ্যে কংসের কারাগারে পিতা বসুদেব ও মাতা দেবকীর সন্তান রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। অধার্মিকদের নাশ সাধুদের পরিত্রাণ এবং ধর্মকে স্থাপন করেছিলেন। দিবসটি পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ খুলনা মহানগর ও জেলা এবং বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন)  নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে গীতাযজ্ঞ, ধর্মীয় শোভাযাত্রা, শ্রীকৃষ্ণ পূজা ও ভক্তবৃন্দদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ। আজ সরকারি ছুটির দিন।
দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার দেওয়া বাণীতে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তথ্য অধিদপ্তরের এক বিবরণীতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মহাভারত ও ভাগবত  গীতা থেকে জানা যায়, দ্বাপর যুগে রাজা কংস, শিশুপাল, জরাসন্ধ, হিড়িমবক, বকাসুর, হস্তিনার অধার্মিক রাজা ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র দুর্যোধনসহ কতিপয় রাজাদের অত্যাচারে পৃথিবী মানুষ যখন জর্জরিত তখন সকল দেবতারা বিষ্ণুর কাছে গিয়ে তাদের প্রতি কতিপয় রাজাদের অত্যাচারের কথা বলেন। বিষ্ণু দেবতাদের কথা শ্রবণ করে তিনি দেবতাদের আদেশ প্রদান করেন যে তারা সকলে যেন মথুরা রাজ্যে যদুবংশে জন্মগ্রহণ করেন। বিষ্ণু অতি শিগগিরই শ্রীকৃষ্ণ রূপে যদুবংশে আবির্ভূত হবেন। 
অপরদিকে ভারতের মথুরা রাজ্যের রাজা উগ্রসেনের পুত্র কংস তার বাবাকে কারাগারে বন্দি করে নিজেই মথুরার রাজা হলেন। উগ্রসেনের ছোট ভাই সুর সেনের কন্যা দেবকীর সঙ্গে যদুবংশীয় বসুদেবের সঙ্গে বিবাহ দিলেন। ঐ যুগে নিয়ম ছিল বোনের বিবাহের পর বড় ভাই রথে করে বোন ও জামাইকে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিবেন। দেবকীর কোন ভাই ছিল না। তাই রাজা কংস নিজে রথ চালিয়ে বোনকে তাঁর শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছে দিতে চললেন। এমন সময় আকাশে দৈববাণী হলো “ হে কংস তুমি কাকে নিয়ে আনন্দ করছো, ঐ দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান তোমাকে হত্যা করবে।” অত্যাচারী রাজা ঐ কথা শোনা মাত্র তার তরবারি দ্বারা বোনকে হত্যা করতে উদ্যত হলেন। বসুদেব ছিলেন পরম ধার্মিক। নিজের স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য তিনি কংসকে অনেক উপদেশ দিলেন। কিন্তু রাজা কংস কোন কথা শোনলেন না। অবশেষে বসুদেব অসুরের হাত থেকে দেবীকে বাঁচানোর কংসকে বললেন, তুমি দেবকীকে হত্যা করো না আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি যে দেবকীর যে সন্তান হবে আমি তাকে তোমার হাতে তুলে দেব। তখন রাজা কংস তার নববিবাহিত বোন-ভগ্নিপতিকে কারাগারে নিক্ষেপ করলেন। এরপর দেবকীর একে একে ছয়টি সন্তান জন্ম হলো এবং কংস ছয়টি সন্তানকে হত্যা করেছিল। সপ্তম গর্ভে ধারণ করেছিলেন বলরাম। তখন যোগমায়া দেবকীর সপ্তম গর্ভের সন্তানকে মাতা রোহিনীর গর্ভে স্থানান্তর করেন। পরবর্তীতে আসলেন দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান শ্রীকৃষ্ণ। সেদিন ছিল রোহিনী নক্ষত্র। সবদিক শুভ ছিল। দুর্যোগের রাত। চতুর্থর্ভুজ মূর্তি ধারণ করেন বসুদেব ও  দেবকীর সম্মুখে আবির্ভূত হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। বসুদেব ও দেবকী বুঝতে পারলেন যে ভগবান পুত্র রূপে তাদের সম্মুখে আবির্ভূত হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ তখন শিশু মূর্তি ধারণ করে পিতা বসুদেবকে বললেন, পিতা আপনি আমাকে নন্দালয়ে রেখে সেখানে একটি কন্যা সন্তান হয়েছে তাকে এখানে নিয়ে আসুন। বসুদেব দেখলেন দুর্যোগের রাত তখন তিনি নিজ পুত্রকে কোলে নিয়ে নন্দালয়ে গমন করলেন। বাসকি নাক ফনা ধরে ছাতার মতো পিতা-পুত্রকে ঝড়-সৃষ্টি থেকে রক্ষা করলেন। সেখানে গিয়ে বসুদেব দেখলেন, রাজরক্ষীরা সবাই ঘুমিয়ে আছে। তখন নিজ পুত্রকে নন্দালয়ে যশোদা মায়ের কাছে রেখে যশোদা মায়ের কন্যা সন্তানকে নিয়ে কংসের কারাগারে ফিরে আসলেন। পরদিন সকালে রাজা কংস শিশু কন্যার কান্না শুনতে পেয়ে কারাকক্ষে প্রবেশ করে দেবকীর কাছ কন্যা সন্তানকে ছিনিয়ে নিয়ে আছাড় মারতে উদ্যত হলেন। তখন কংসের হাত থেকে ফসকে গিয়ে যোগমায়া নিজ মূর্তি ধারণ করে কংসকে বললেন, ‘ওরে মুর্খ আমাকে বধিলে কি হবে, তোমাকে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে। 
রাজা কংস শ্রীকৃষ্ণকে মারার জন্য পুতনা, তৃণাবত, কাকাসুর, বকাসুর, অঘাসুরসহ বহু অসুরকে পাঠালেন কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ সবাইকে বধ করলেন। অবশেষে শ্রীকৃষ্ণ-বলরামকে মারার জন্য মল­ যুদ্ধের জন্য দুই ভাইকে মথুরায় আনলেন। মল­ যুদ্ধে যখন সকল মল­রা পরাজিত হলো তখন রাজা কংস শ্রীকৃষ্ণ-বলরামকে হত্যা করার আদেশ দিলেন। শ্রীকৃষ্ণ কংসকে বধ করে তাঁর পিতা উগ্রসেনকে মথুরার রাজা করলেন। মধুরায় ধর্মস্থাপন করলেন। এইরূপে তিনি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে ধার্মিক পান্ডু পুত্রদের পক্ষ নিয়েছিলেন এবং অধার্মিক ধৃতরাষ্ট্রের দুর্যোধনসহ একশ’ ভাই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পান্ডপুত্র ভীমের হাতে জীবন দিয়েছেলেন। অবশেষে হস্তিনায় ধর্মরাজ্য স্থাপন করেন। 
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ খুলনা মহানগর শাখা আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় নগরীর ধর্মসভাস্থ গোলকমণি শিশু পার্ক এ আলোচনা সভা ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। 
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও নগর সংকীর্ত্তন করে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন, থানা কমিটি, মন্দির কমিটি, বাদ্যযন্ত্র, ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড, শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনি, শ্রীকৃষ্ণের প্রতিকৃতি, ডিসপ্লে সহকারে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে গোলকমণি শিশুপার্কে এসে শেষ হবে এবং ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হবে। রাত ৮টায় স্যার ইকবাল রোডস্থ আদি কালীবাড়ীপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দিরে দেশ, জাতি ও বিশ্ববাসীর কল্যাণে সমবেত প্রার্থনা ও রাত ১২.০১ মিনিটে শ্রীশ্রীকৃষ্ণ পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়াও নগরীর গল­ামারীস্থ রাধা-মাধব মন্দিরে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। 

্রিন্ট

আরও সংবদ