খুলনা | সোমবার | ১৮ অগাস্ট ২০২৫ | ৩ ভাদ্র ১৪৩২

কালিগঞ্জে কথিত ওঝার ভুল চিকিৎসায় প্রাণ গেল ৮ম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রীর

কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি |
০৫:৪৪ পি.এম | ১৬ অগাস্ট ২০২৫


কথিত ওঝা আয়নাল হোসেনের ভুল চিকিৎসার কারণে প্রাণ গেল অষ্টম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী অহনা দাশের (১৫)। সাপে কামড়ানোর পর টানা চারদিন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর তার মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের মুকুন্দপুর গ্রামে।

অহনা দাশ মুকুন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ধুলিয়াপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী নরেন্দ্রনাথ দাশের মেয়ে এবং শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এনএল দাশের ভাতিজি। সে ধুলিয়াপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

পরিবারের সদস্যরা জানান, গত মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকেলে বাড়ির বারান্দায় বসে পড়াশোনা করছিল অহনা। সন্ধ্যার পূর্ব মুহূর্তে উঠোন থেকে একটি বিষধর সাপ একটি ব্যাঙকে তাড়া করে বারান্দার দিকে আসে। শিকার ধরতে ব্যর্থ হয়ে সাপটি অহনার পায়ের আঙুলে দুইবার ছোবল দিয়ে চলে যায়। যন্ত্রণায় কাতর অহনা তাৎক্ষণিকভাবে বাড়ির লোকজনকে বিষয়টি জানালে তারা ক্ষতস্থানের ওপর পরপর চারটি বাঁধন দিয়ে তাকে পার্শ্ববর্তী দেয়া গ্রামে কথিত ওঝা আয়নাল হোসেনের কাছে নিয়ে যান।

সেখানে আয়নাল হোসেন (৬৫) কবিরাজি চিকিৎসা দিতে গিয়ে অহনার পায়ের সব বাঁধন খুলে দিয়ে তাকে হাঁটাহাঁটি করান। এতে অহনার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। একপর্যায়ে ওই ভণ্ড ওঝা নিজেই অপারগতা প্রকাশ করে অন্যত্র চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেন। বিষয়টি জানার পর অহনার কাকা ডা. এনএল দাশ দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ৪টি এন্টিভেনম দেয়া হয় এবং পরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে মারা যায় অহনা দাশ।

শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে পিরোজপুর মহাশ্মশানে হৃদয়বিদারক পরিবেশে অহনাকে সমাধিস্থ করা হয়।

বর্তমানে সাপে কামড়ানো রোগীর জন্য সরকারি হাসপাতালে এন্টিভেনমের ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ গ্রামীণ মানুষের অজ্ঞতা ও সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে আয়নাল হোসেনের মতো ভণ্ড ওঝারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছে। এ ধরণের প্রতারকদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি আইনগতভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

্রিন্ট

আরও সংবদ