খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ অগাস্ট ২০২৫ | ৫ ভাদ্র ১৪৩২

তিন নিরাপত্তা প্রহরী পুলিশ হেফাজতে

রূপসায় কৃষি ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ১৬ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় থানায় মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:২০ এ.এম | ১৭ অগাস্ট ২০২৫


কৃষি ব্যাংক, রূপসা ঘাট শাখায় ভল্ট ভেঙে ১৬ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ব্যাংক ব্যবস্থাপক মোঃ কামরুল ইসলাম বাদী হয়ে গত শনিবার বিকালে মামলা দায়ের করেন। এর আগে গত শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত এ দুই ঘন্টার মধ্যে ব্যাংকের টাকা লুট করে নেয় দুর্বৃত্তরা। ওইদিন রাতে ব্যাংকের তিনজন নিরাপত্তা প্রহরীকে আটক করে সংশ্লিষ্ট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ব্যাংকের এই শাখা কার্যালয়টি পূর্ব রূপসা পেট্রোল পাম্প ও পূর্ব রূপসা বাসস্ট্যান্ড পুলিশ ফাঁড়ির অতি নিকটে খুলনা-মোংলা মহাড়কের পাশে অবস্থিত। ব্যাংকে চুরির খবরে এলাকার ব্যবসায়ীদের মাঝে অনেকটা উদ্বেগ উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।    
সিসি টিভির ফুটেজ থেকে জানা গেছে, গত শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত এ দুই ঘন্টার মধ্যে ব্যাংকের বিভিন্ন গেটের ছয়টি তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা। ভিতরে ঢুকে চারটি সিসি ক্যামেরা কাপড় দিয়ে ঢেকে ক্যাশ কাউন্টারে প্রবেশ করে। পরে সেখানে রক্ষিত ভল্টের তালা ভেঙে মধ্যে রাখা ১৬ লাখ ১৬ হাজার টাকার মধ্যে ১ হাজার ৪২০ টাকা রেখে বাকি টাকা নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তবে সিসিটিভি ফুটেজে একজন দুর্বৃত্তকে দেখা গেলেও তার মুখে কাপড় দিয়ে বাধা থাকায় তাকে চিহ্নিত করা যায়নি। দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করতে ব্যাংকের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে থানা পুলিশ। অপরদিকে ব্যাংকের তিন নিরাপত্তা প্রহরী আফজাল হোসেন, আবুল কাশেম ও তরিকুল ইসলাম এখনো পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী আবুল কাশেমের ছুটি না নিয়ে কর্মস্থলে না এসে তার অসুস্থ স্ত্রীর কাছে যান। রাত ১০টায় আবুল কাশেম কর্মস্থলে এসে ব্যাংকের প্রধান গেট খোলা দেখতে পেয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় জানালে রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাহফুজুর রহমান, স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। সংবাদ পেয়ে ওই রাতে উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা, খুলনা জেলা ডিবি পুলিশের টীম, ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে আসেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই রাতে ব্যাংকের তিনজন নিরাপত্তা প্রহরীকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তারা পুলিশ হেফাজতে আছেন। এদিকে ঘটনার রহস্য উদঘাটনে রুবেল নামে এক ওয়ার্কশপ কর্মচারীকে আটক করে থানায় রাখা হয়েছে। 
এঘটনায় অফিসিয়ালি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে খুলনা বিভাগীয় অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করার নিয়ম থাকলেও এখনো করা হয়নি। আগামীকাল অফিস ডে’তে করা হতে পারে। তাছাড়া আমরা এখনো ঘটনাস্থলে অবস্থান করে সার্বিক বিষয় পরিদর্শন ও তদন্ত করছি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আটক তিন নিরাপত্তা প্রহরীকে আসামী করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলে, আমরা কারো নামে মামলা দেইনি। পুলিশ তাদের তিনজনসহ আরো একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ ব্যাপারে থানা পুলিশ ভালো বলতে পারবেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকের কার্যক্রম শেষ করে সবাই চলে যান। শুক্রবার সকাল থেকে ব্যাংকের তিনজন নিরাপত্তা প্রহরী (আবুল কাশেম, তরিকুল ইসলাম ও আবজাল হোসেন) কেউ তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন না করায় এবং এলাকাটি নির্জন এলাকা হওয়ায় দুর্বৃত্তদের ব্যাংকের টাকা লুট করতে সুবিধা হয়েছে। এমনই মন্তব্য করেছেন বাংকের আশপাশের একাধিক ব্যবসায়ী। 
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আল-বেরুনী বলেন, প্রকৃত তথ্য উদযাটনে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। খুলনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মুক্ত রায় চৌধুরী বলেন, মূল তথ্য উদঘাটনে কাজ চলছে। দ্রুত যাতে এ ঘটনার রহস্য বের করা যায় এজন্য আমাদের টীম কাজ করছে। 
রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাহফুজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ব্যাংকের তিন নিরাপত্তা প্রহরীকে ওইরাতে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় ব্যাংকের ম্যানেজার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। রূপসা বাসস্ট্যান্ড পুলিশ ফাঁড়ির আইসি মোঃ আকরাম হোসেন বলেন, এ ঘটনায় কৃষি ব্যাংকের ম্যানেজার মোঃ কামরুল ইসলাম রূপসা থানায় একটি মামলা করেছেন। 
কৃষি ব্যাংকের ম্যানেজার মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার অফিস শেষে আমরা সবাই বাড়ি চলে যাই। পরে শুক্রবার রাত ১০টায় নিরাপত্তা প্রহরীর মাধ্যমে জানতে পারলাম ব্যাংকে চুরি হয়েছে। দুর্বৃত্তরা গেটের তালা ভেঙে ভিতরে ভল্ট ভেঙে ১৬ লাখ ১৬ হাজার টাকার মধ্যে ১ হাজার ৪২০ টাকা রেখে বাকি টাকা নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় তিনি সংশ্লিষ্ট থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।  

 

্রিন্ট

আরও সংবদ