খুলনা | সোমবার | ১৮ অগাস্ট ২০২৫ | ৩ ভাদ্র ১৪৩২

মাউশির মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে ৭ শিক্ষকের আবেদন

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাদের রক্ষার অভিযোগ

বাগেরহাট ও চিতলমারী প্রতিনিধি |
০৩:৫৭ পি.এম | ১৭ অগাস্ট ২০২৫


বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সংগঠনের পদধারী শিক্ষকদের রক্ষার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষা কর্মকর্তার ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা অঞ্চলের উপ-পরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা বরাবরে কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাতজন শিক্ষক লিখিত আবেদন করেছেন। শিক্ষা কর্মকতা মফিজুর রহমান বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক পীযূষ কান্তি রায়, যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক অবনী মোহন বসু ও দপ্তর সম্পাদক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মকে নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে আওয়ামী লীগের অফিসে পরিণত করলেও বর্তমান নিজেকে অন্য এ দলের সমর্থক বলে দাবী করছেন। আজ রোববার (১৭ আগস্ট) দুপুরে সাংবাদিকদের আবেদনকারী শিক্ষকরা এ সব তথ্য জানিয়েছেন।

সাতজন শিক্ষকের করা আবেদনপত্র জানা গেছে, চিতলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিধান চন্দ্র ব্রহ্ম কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের পর অত্র বিদ্যালয়ের বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ২৬ অক্টোবর বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা বিদ্যালয়ের হিসাব নিরীক্ষার জন্য রেজুলেশনের মাধ্যমে একটি নিরীক্ষা কমিটি গঠন করেন। নিরীক্ষা কমিটি একই বছরের ২৬ নভেম্বর রির্পোট দাখিল করেন। রিপোর্ট অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক বিধান কুমার ব্রহ্ম সর্বমোট ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী রবাবরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৩ কর্মদিবসের মধ্যে উক্ত হিসাব পর্যালোচনা করে রির্পোট দাখিলের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিদের্শনা দেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ০১ জানুয়ারি তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোসাঃ কামরুন্নেছা শিক্ষকদের হাজির হতে বলেন। শিক্ষকরা হাজির হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান আজ শুনানী হবে না। পরবর্তীতে হঠাৎ ১৫ জানুয়ারি বিকাল ৫টায় আবারও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তরের অফিস সহায়ক মোবাইলে শিক্ষকদের অফিসে ডেকে বলেন ১৬ জানুয়ারি স্যার আপনাদের আসতে বলেছেন। তদন্ত কাজে গাফলতি করায় শিক্ষকরা বাগেরহাট জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। বারবার আবেদন করার পরও রহস্যজনক কারণে প্রধান শিক্ষক বিধান কুমার ব্রহ্মের হিসাব নিরীক্ষার কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় শিক্ষকরা পুনরায় নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও তদন্ত কাজে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার অথবা উপজেলা সমবায় অফিসারকে সংযুক্ত করার জন্য ০২ ফেব্রæয়ারি আবেদন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমবায় কর্মকর্তাকে সংযুক্ত করেন। গত ০৭ এপ্রিল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোসাঃ কামরুন্নেছা বদলীর কারনে চলে গেলে চিতলমারীতে অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন মোঃ মফিজুর রহমান। মফিজুর রহমান বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রায় ৬ থেকে বছর মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসাবে চিতলমারীতে কর্মরত ছিলেন। সে সময় তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক পীযূষ কান্তি রায়, যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক অবনী মোহন বসু ও দপ্তর সম্পাদক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মকে নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে আওয়ামীলীগের অফিস হিসাবে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন। বিষয়টি তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল আইন শৃঙ্খলা সভায় ঘটনাটি উত্থাপন করেন। এরপর মোঃ মফিজুর রহমানের চিতলমারী থেকে বদলী হয়। শিক্ষা কর্মকর্তা মোসাঃ কামরুন্নেসা অবসর গ্রহণ করলে ওই মোঃ মফিজুর রহমান পুনরায় চিতলমারীতে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মসহ নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সংগঠনের পদধারী শিক্ষকদের রক্ষায় পক্ষপাতিত্ব করছেন।

কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও আবেদনকারী প্রভাত কুমার মজুদার বলেন, ‘যোগদানের পর থেকেই শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মফিজুর রহমান তাঁর পুরানো দোসর আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনঃবাসন করার এজেন্ডা পালন করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। তাঁর যোগদানের পরে অদ্যাবধি কোন তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন নাই যা খুবই রহস্যজনক। বরং বারবার চিতলমারী উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মের সাথে অপোষ করার জন্য বিভিন্ন হুমকি-ধামকি ও চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন।’

এ ব্যাপারে জানতে কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সখ্যতার কথা অস্বীকার করে চিতলমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষ কর্মকর্তা মোঃ মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি হলাম মোল্লাহাটের অফিসার। চিতলমারীতে অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। যারা অভিযোগ করেছে ওরা খারাপ লোক। ডিজি কেন ওর চাইলে উপরে অভিযোগ করুক। তাতে কোন সমস্যা নেই।’

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, ‘শিক্ষকদের করা দরখাস্তটি পেয়েছি। কেউ যদি দুর্নীতি করে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আমরা। দুর্নীতিবাজের কোন প্রশয় আমাদের কাছে নেই।’   

্রিন্ট

আরও সংবদ