খুলনা | শনিবার | ২৩ অগাস্ট ২০২৫ | ৭ ভাদ্র ১৪৩২

অ্যাম্বুলেন্স আটকে ‘শিশু হত্যা’ চক্রগুলো ভেঙে দিন

|
১২:৪৫ এ.এম | ১৯ অগাস্ট ২০২৫


অসুস্থ বা আহত রোগীকে বাঁচানোর জন্য যে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হয়, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারের জন্য সেই অ্যাম্বুলেন্স আটকে রেখে একটি শিশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হলো। মানুষ কী করে এতটা নৃশংস হতে পারে?
অ্যাম্বুলেন্স হলো একটি বিশেষ যানবাহন, যা অসুস্থ বা আহত ব্যক্তিদের জরুরি চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য বা উন্নত চিকিৎসার জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যায়। অনেক দেশে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য সড়কে আলাদা লেন থাকে। আমাদের দেশে সেটি না থাকলেও অ্যাম্বুলেন্স এলে অন্য যানবাহন স্বেচ্ছায় জায়গা ছেড়ে দেয় রোগীর কথা ভেবে। অথচ একটি চক্র শরীয়তপুরে সেই অ্যাম্বুলেন্স আটকে শিশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল। তাদের দাবি, রোগী বহনের জন্য স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্সই ব্যবহার করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স চালকেরা মিলে ঢাকাগামী সেই অ্যাম্বুলেন্সের চালককে মারধর করেন এবং গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা তর্কাতর্কি ও ধস্তাধস্তির মধ্যে চিকিৎসা না পেয়ে নবজাতক মারা যায়।
অ্যাম্বুলেন্স আটকে না দিলে হয়তো শিশুটিকে এভাবে করুণ মৃত্যুর শিকার হতে হতো না। এটি কি ‘হত্যাকাণ্ড’ না? এ ঘটনায় শিশুটির বাবা পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ইতিমধ্যে ঘটনার প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমরা আশা করব, বাকি আসামিদেরও দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। গ্রেফতার হওয়া প্রধান আসামির বাবা শরীয়তপুর সিভিল সার্জনের গাড়ির চালক। ফলে এই বিচারপ্রক্রিয়ায় যেন কোনো প্রভাব খাটানোর চেষ্টা না হয়, সেটি নিশ্চিত করা হবে-এমনটাই প্রত্যাশা।  
জানা যাচ্ছে, শরীয়তপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের বর্তমান ও সাবেক কর্মচারীরা একটি অ্যাম্বুলেন্স চক্র গড়ে তুলেছেন। ওই চক্রের অধীনে জেলা শহরে ২০টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সগুলোর মালিকও ওই কর্মচারীরা। চক্রটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে রোগী পরিবহন করে। তাদের অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া ঢাকা অথবা অন্য জেলা থেকে আসা অ্যাম্বুলেন্সে রোগী তুলতে দেওয়া হয় না। বাংলাদেশে অ্যাম্বুলেন্স আটকে মানুষ হত্যার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ জেলায় জেলায় হাসপাতালকেন্দ্রিক অ্যাম্বুলেন্স চক্র দৌরাত্ম্য দেখাচ্ছে। বাইরের কোনো অ্যাম্বুলেন্সে রোগী আনা-নেওয়া করলেই তারা বাঁধা দেয়। উদ্বেগের বিষয় হলো, এই চক্র প্রত্যেক সেবাপ্রার্থীর কাছ থেকে যে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ভাড়া আদায় করে, তার হিস্যা যায় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের কর্মীদের কাছেও।
শরীয়তপুরে শিশুমৃত্যুর ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, হাসপাতাল ঘিরে গড়ে ওঠা অ্যাম্বুলেন্স চক্রটি কতটা বেপরোয়া। তারা এক ঘণ্টার মতো অ্যাম্বুলেন্সটিকে আটকে রেখেছে। শুধু তা-ই নয়, অ্যাম্বুলেন্স চালকদের চক্র রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিভাগীয় বা রাজধানীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য রোগীর স্বজনদের প্রতারণায়ও ফেলেন। এমন ঘটনায় কুমিল­ায় এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগও উঠেছে কয়েক বছর আগে। হাসপাতালগুলোতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স অচল থাকা নিয়ে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশিত হয়। হাসপাতালের কর্মচারীরাও যেহেতু অ্যাম্বুলেন্স চক্রে যুক্ত থাকেন, ফলে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স অচল থাকার পেছনে তাঁদের যোগসাজশ থাকার বিষয়ে অনেকে ধারণা করেন।
হাসপাতাল হলো রোগীর শেষ আশ্রয়। যখন বাড়িতে থেকে চিকিৎসাসেবা নেওয়া সম্ভব হয় না, তখন তাঁরা হাসপাতালে যান। অথচ এই হাসপাতাল ঘিরে যে অ্যাম্বুলেন্স চক্র, দালাল চক্র তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিংবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আছে বলে মনে হয় না। যারা হাসপাতালের সামনে এভাবে মানুষকে জিম্মি করে, অবিলম্বে তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতাল ঘিরে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের চক্র বা সিন্ডিকেট গড়ে উঠতে না পারে, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। হাসপাতালগুলো চিকিৎসা সেবাপ্রার্থী মানুষের ভরসার স্থল হোক; আতঙ্কের নয়।

 

্রিন্ট

আরও সংবদ