খুলনা | বুধবার | ২০ অগাস্ট ২০২৫ | ৫ ভাদ্র ১৪৩২

প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা

ঝিনাইদহের এইড ফাউন্ডেশনের প্রলোভনে দিশেহারা প্রায় দুইশ’ পরিবার

খাইরুল ইসলাম নিরব, ঝিনাইদহ |
১২:৪৪ এ.এম | ২০ অগাস্ট ২০২৫


ঝিনাইদহ পৌর এলাকার ষাটবাড়িয়ায় অবস্থিত এ্যাকশান ইন ডেভোলপমেন্ট (এইড ফাউন্ডেশন) এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মাসিক ও ৫ বছরে আমানতের টাকার ডাবল লভ্যাংশ দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা, খুলনা বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই টাকা ফেরত নিতে আসা ব্যক্তিরা নানা ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে এ্যাকশান ইন ডেভোলপমেন্ট (এইড ফাউন্ডেশন) এর হেড অফিসে ক্ষতিগ্রস্ত এসকল ব্যক্তিদের ধর্না দিতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রামের বৃদ্ধ সামাদ সরদার। তার স্ত্রী শাহার বানুর নামে ২০১৮ সালে বিষয়খালী ব্রাঞ্চে মাসিক লভ্যাংশে দেড় লক্ষ টাকা আমানত রাখেন। ২০২২ সালে ওই ব্রাঞ্চে শাহার বানুসহ ওই এলাকার অনেকের আমানতের টাকা তাদেরকে বুঝিয়ে না দিয়ে রাতের অন্ধকারে শাখা অফিস বন্ধ করে চলে আসে। তার কিছুদিন পর টাকার অভাবে চিকিৎসা না করতে পেরে অসুস্থ শাহার বানু মারা যান। তারপর থেকে শাহার বানুর স্বামী বৃদ্ধ সামাদ সরদার হেড অফিসে আমানতের মূল টাকা নিতে এসে প্রায়ই হয়রানির শিকার হন। এভাবে করে বিষয়খালী গ্রামের রেহেনা খাতুন ২ লক্ষ টাকা রেখেছিলেন। বর্তমানে রেহেনা ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন। টাকার অভাবে সুচিকিৎসা না পাওয়ায় তার জীবন এখন মৃত্যুর মুখে। অসুস্থ রেহেনা সাংবাদিকদের মাধ্যমে তার আমানতের টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি জানান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯২ সালে সমাজ সেবার মাধ্যমে এ্যাকশান ইন ডেভলপমেন্ট (এইড) নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রথম দিকে সুনামের সাথে চালালেও পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মোট ২৬টি শাখা অফিসে ক্ষুদ্র ঋণ চালু করে। একই সাথে অভিনব কায়দায় মানুষের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করে। মানুষের বিশ্বাস অর্জন করার জন্য ৫ বছরে আমানতের টাকার দ্বিগুণ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়ে অগ্রিম চেক প্রদানের মধ্য দিয়ে অধিকাংশ শাখা থেকে ওই এলাকার সাধারণ মানুষকে এ প্রলোভনে ফেলে। এভাবে করে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা করছেন।
ভুক্তভোগী সামাদ সরদার জানায় আমি সকালে অফিসে আসি। কিন্তু অফিস চালু থাকলেও আমার সাথে কেউ কোন কথা বলেন না। নিরুপায় হয়ে এই বৃদ্ধ বয়সে প্রায়ই এসে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এই প্রতিষ্ঠানের বিষয়খালী শাখায় আমার স্ত্রী শাহার বানুর নামে দেড় লক্ষ টাকা রাখা ছিল। বৃদ্ধ বয়সে এখান থেকে যে টাকা পাওয়ার জন্য রেখেছিলাম তা তো পায়ইনি বরং টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন।
ডাকবাংলা শাখায় শাহিনা আক্তার নামে এক নারী ১০ লক্ষ টাকা মাসিক লভ্যাংশে রেখেছিলেন। তিনি জানান, তার স্বামী ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। কোর্টে মামলা দিয়ে বিচারের দিন গুণছেন। একই শাখায় হাসি নামে এক নারী ২ লক্ষ টাকা ৫ বছরের চুক্তিতে রেখে একের পর এক দিন গুণছেন। এছাড়াও ওই ব্রাঞ্চের শিউলি খাতুন ৫ লাখ টাকা দিয়ে টাকা ফেরত পাননি। হরিণাকুন্ডু শাখায় মনোরা খাতুন এক লক্ষ ও জার্মান আলীর এক লক্ষ টাকাসহ বেশ কয়েকজন বর্তমানে হেড অফিসে ধর্না দিচ্ছেন।
এছাড়াও ঝিনাইদহ সদর শাখায় মিরা ১৪ লক্ষ, সাধন ১ লাখ বিশ হাজার, হারুন মাস্টার ১৪ লক্ষ, সদরের হলিধানী শাখায় জয়নাল ২ লাখ বিশ হাজার, নাজমা ১ লাখ ৫০ হাজার, জেলার কোটচাদপুর শাখায় ইব্রাহীম মন্ডল ৫ লাখ, মিনুবালা ৩ লাখ টাকা পাবেন। তারা প্রত্যেকে টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি জানান।
ঝিনাইদহ শহরের বাসিন্দা নাসের হাসান জানান এইড ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার শত শত মানুষ। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ আদালতসহ বিভিন্ন আদালতে ৫০টির অধিক মামলা চলমান। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি জনগণের সাথে প্রতারণা করলেও এইডের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ। 
এইড ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, অনেকে টাকা পায় এটি সত্য। অনেকের কমবেশি করে দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেককেরই টাকা তারা পর্যায়ক্রমে ফেরত পাবেন। এ ব্যাপারে জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, এইড ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে লিখিত কোন অভিযোগ এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  
 

্রিন্ট

আরও সংবদ