খুলনা | শনিবার | ২৩ অগাস্ট ২০২৫ | ৭ ভাদ্র ১৪৩২

বেহাল মহাসড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে যাত্রীরা

|
১২:২১ এ.এম | ২১ অগাস্ট ২০২৫


১২ আগস্ট থেকে গণমাধমের খবরে দেশের বেহাল মহাসড়কগুলো নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করে আসছে। এসব প্রতিবেদনে মহাসড়কগুলোর যেসব চিত্র উঠে এসেছে, তা অতিশয় নাজুক বললেও কম বলা হয়। অনেক সড়ক যানবাহন চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সড়কে যাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি বেড়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। বেশির ভাগ মহাসড়কের করুণ দশার কারণে যানবাহন সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। যাত্রীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তিন ঘণ্টার পথ পার হতে লেগে যায় পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। প্রথম আলোয় ঢাকা-সিলেট, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, ফরিদপুর-বরিশাল-কুয়াকাটা, খুলনা-সাতক্ষীরা, ঢাকা-বরিশাল, বগুড়া-নাটোরসহ মাত্র কয়েকটি মহাসড়কের চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। এসব সড়কের সমস্যা মোটামুটি অভিন্ন খানাখন্দে ভরা।
উন্নত দেশগুলোয় নতুন সড়ক কমপক্ষে ১০ বছর টেকসই থাকে, মেরামত করতে হয় না। কিন্তু আমাদের এখানকার সড়ক নির্মাণের তিন-চার বছর, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক বছরের মধ্যে মেরামতকাজ জরুরি হয়ে পড়ে। সড়ক নির্মাণে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়, তাদের বেশির ভাগই নিম্নমানের। আবার মেরামতের কাজও ঠিকমতো না হওয়ায় কয়েক মাসের মধ্যে সড়ক পুরোনো অবস্থায় ফিরে আসে। এই ধারা চলে আসছে বহু বছর ধরে।এবার মহাসড়কগুলোর করুণ দশার আরেকটি কারণ অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হওয়া। অন্যান্য বছর কর্তৃপক্ষ লাগে ‘টাকা দেবে গৌরী সেন’ মনোভাব নিয়ে মেরামতের কাজ বৃষ্টি মৌসুম শুরুর আগেভাগে করে ফেলতো। এবার বাড়তি জবাবদিহি থাকায় সেটা তাঁরা পারছেন না। ফলে অনেক সড়ক মেরামতের কাজটি আটকে আছে। দেশের সড়ক-মহাসড়কের করুণ দশার আরেকটি কারণ হলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। সব ক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজন হয়, তা-ও নয়। যেসব সড়কের ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করার কথা নয়, সেসব সড়ক দিয়েও সেটা চলাচল করে। কোনো নজরদারি নেই।
খবরে আটটি প্রতিবেদনে যেসব সড়কের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলোর হালচাল জানা গেলেও এর বাইরে আরও অনেক সড়ক আছে। ধারণা করি, সেগুলোর অবস্থা উলি­খিত সড়কের চেয়ে আরও নাজুক। অনেকটা প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতো। এসব সড়ক-মহাসড়কের প্রতি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি তখনই পড়ে, যখন কোনো দুর্ঘটনা ঘটে বা সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়। সড়ক মেরামতের নামে যেমন জনগণের অর্থের অপচয় কাম্য নয়, তেমনি কৃচ্ছ্রসাধন করার জন্য অতিজরুরি মেরামতকাজও ফেলে রাখা যাবে না। বড় ও ছোট সব সড়কের সংস্কারকাজ করতে হবে। তবে অর্থের যাতে অপচয় না হয়, কিংবা মেরামতের নামে ইট-বালুর আস্তর দিয়ে দায়িত্ব শেষ করা না হয়, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কঠোর দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন।
বৃষ্টির কারণে প্রতিবছরই সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবার বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণও বেড়েছে। কর্তৃপক্ষের উচিত হবে সড়ক-মহাসড়কগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া। যাত্রীদের ভোগান্তি কাটাতে এর বিকল্প নেই।  
নদীমাতৃক বাংলাদেশে একদা নৌপথই ছিল আমাদের প্রধান যোগাযোগমাধ্যম। কিন্তু এটি শ্লথগতির। ট্রেনও অতীতের গৌরব হারাতে বসেছে। এ অবস্থায় যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন অপরিহার্য। আমরা সড়কে যেমন মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন চলাচল করুক এটা চাই না, তেমনি ভালো মানের যানবাহন অনুপযোগী সড়কে নেমে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াবে, সেটাও প্রত্যাশিত নয়।

্রিন্ট

আরও সংবদ