খুলনা | শনিবার | ২৩ অগাস্ট ২০২৫ | ৭ ভাদ্র ১৪৩২

এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী : কলেজে ভর্তি না হওয়াদের কথাও ভাবতে হবে

|
১২:০৪ এ.এম | ২২ অগাস্ট ২০২৫


বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা চলছে অপরিকল্পিতভাবে। এবার এসএসসি উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থীও যদি কলেজ বা সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়, তাতেও বিপুলসংখ্যক আসন খালি থাকবে। চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬। এর মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৬ লাখের বেশি। ১০ বছর পড়াশোনা করে এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া দেশের বড় অপচয় বলে মনে করি।
খবর থেকে জানা যায়, আসন্ন শিক্ষাবর্ষে (২০২৫-২৬) কলেজ ও মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে পৌনে ১১ লাখ ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী। এর মধ্যে কারিগরিতে উত্তীর্ণ এক লাখের মতো পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাদ দিয়ে হিসাব করলেও এক লাখের বেশি পরীক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে আবেদনই করেনি।
ঢাকার নটর ডেম কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের বাকি সব কলেজ ও মাদ্রাসায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী বাছাই করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত আবেদন ফি জমা দিয়ে সর্বনিম্ন ৫টি ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা মাদ্রাসার জন্য পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করতে হয়। এরপর কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীর মেধা, কোটা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও পছন্দের ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করে থাকে। কেউ কেউ পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে অপেক্ষমাণ তালিকার জন্য অপেক্ষা করে।
প্রথম দফায় যারা আবেদন করেনি, তারা দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার আবেদনের সুযোগ পাবে বলে শিক্ষা বোর্ড থেকে জানানো হয়েছে। তবে তাদের উলে­খযোগ্য একটি অংশ যে ভর্তি হবে না, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়। আর্থিক অসচ্ছলতা ও অন্যান্য কারণে অনেক শিক্ষার্থী জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কর্মজীবনে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়। দেখার বিষয় হলো উচ্চতর শিক্ষা না নেওয়া এই বিপুলসংখ্যক ছেলে ও মেয়ের ভবিষ্যৎ কীভাবে নির্মিত ও নির্ধারিত হবে? যে বয়সে তারা এসএসসি পাস করে, সেই বয়সে তারা জনশক্তির উপযোগী হয় না।
বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে; কিন্তু তাঁদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিতে হবে, কারিগরি জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আগে প্রচুর অদক্ষ কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে যেতে পারতেন। এখন সে সুযোগ অনেকটা কমে গেছে। বিদেশে যেতেও কর্মীদের ন্যূনতম কারিগরি জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ দরকার। প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও জানিয়েছেন, এখন পণ্য ওঠানো-নামানো বা নির্মাণ অবকাঠামো খাতে কাজ করতে হলেও কিছু দক্ষতা প্রয়োজন। প্রশ্ন হলো, দেশে বা বিদেশে চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজটি কে করবে। কিছু সরকারি সংস্থা তরুণদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে। এরা প্রকৃতপক্ষে কতটা প্রশিক্ষণ দেয়, তা-ও নজরদারিতে রাখতে হবে। পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক পরিসংখ্যান নিতে হবে, উচ্চতর স্তরে ভর্তি না হওয়া তরুণেরা কোথায় যাচ্ছেন।
আশা করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কলেজ বা উচ্চতর স্তরে ভর্তি হতে না পারা তরুণ-তরুণীদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাববে এবং বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেবে। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কাজ-এর যেকোনো একটিতে তাদের যুক্ত রাখতে হবে। অন্যথায় মাদক ও কিশোর গ্যাংয়ের চক্রে ঢুকে পড়ার সমূহ আশঙ্কা থেকে যাবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ