খুলনা | শনিবার | ২৩ অগাস্ট ২০২৫ | ৮ ভাদ্র ১৪৩২

হাসিনা, এসকে সিনহা, ব্যারিস্টার শফিক, বিচারপতি ফজলে কবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ

আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে আলোচিত সাক্ষী সুখরঞ্জন বালিকে অপহরণ, গুম এবং নির্যাতন

খবর প্রতিবেদন |
০১:০৮ এ.এম | ২২ অগাস্ট ২০২৫


আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের মামলায় আল­ামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আলোচিত সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি তার অপহরণ, গুম এবং নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ধরেছেন। এই ঘটনায় তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারপতি একেএম ফজলে কবিরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন অফিসে হাজির হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযোগে সুখরঞ্জন বালি উলে­খ করেন, ২০১২ সালে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আল­ামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু তিনি আদালতে গিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রত্যাশার বিপরীতে সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দেন। এই ঘটনার পরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রাঙ্গণ থেকেই নিখোঁজ হয়ে যান।
সুখরঞ্জন বালি জানান, তাকে সেদিন অপহরণ করা হয় এবং একটি গাড়িতে পুরো দিন আটকে রেখে শারীরিকভাবে নির্যাতন চালানো হয়। এরপর রাতে তাকে সীমান্তে নিয়ে গিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র হাতে তুলে দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, বিএসএফ তাকে আটক করে দুই মাস ১৭ দিন গুম করে রাখে এবং পরে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে ভারতের একটি কারাগারে পাঠানো হয়, যেখানে তাকে প্রায় এক বছর কারাবাসে থাকতে হয়। এই পুরো ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সুখরঞ্জন বালির আইনজীবী এড. মোহাম্মদ পারভেজ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তার মক্কেল যে চারজনকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করছেন, তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রক্ষমতার দায়িত্বে থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উলে­খ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার মক্কেল একজন নিরীহ নাগরিক, যাকে সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে অন্যায়ভাবে গুম করে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে এবং দীর্ঘ সময় বিদেশের মাটিতে আটক রাখা হয়েছে। আজ তিনি ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন।
অভিযোগপত্রে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা ছাড়াও ঘটনার সময়, স্থান, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরিচয়, প্রমাণ ও ব্যাখ্যা যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন অফিস জানিয়েছে, অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে এবং সেটি যাচাই-বাছাই শেষে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উলে­খ্য, ২০১২ সালে দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা চলাকালে সাক্ষ্য দিতে এসে সুখরঞ্জন বালি নিখোঁজ হন। পরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এবং মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, তিনি ভারতের একটি কারাগারে আটক রয়েছেন।
অনেক বছর নিখোঁজ থাকার পর তিনি দেশে ফিরেন। দেশে ফিরে দীর্ঘ সময় নীরব থাকার পর এবারই প্রথম তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করলেন।
তিনি মনে করেন, এই ঘটনার বিচার হওয়া উচিত এবং তার অধিকার লঙ্ঘনের দায়ে দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন।

্রিন্ট

আরও সংবদ