খুলনা | শুক্রবার | ০৯ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

অনলাইনে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ

খুলনায় হার্টের ওষুধের পরিবর্তে লেভেলবিহীন হজমি ট্যাবলেট!

সোহাগ দেওয়ান |
১২:৩৩ এ.এম | ০৩ অক্টোবর ২০২১

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন সব ধরনের জিনিষপত্র ক্রয়-বিক্রয় চলছে। প্রসাধনী, কাপড়, আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, খাবার ও ওষুধ রয়েছে এ তালিকায়। স¤প্রতি সময়ে কর্মব্যস্ত মানুষের দোড়-গোড়ায় চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক কোম্পানিগুলো। এ সকল সুবিধার মধ্যেই এক শ্রেণির প্রতারকচক্র সাধারণ মানুষকে নানাভাবে ধোকায় ফেলছেন। হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। নামী-দামি ব্রান্ডের ওষুধের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ডেলিভারী দিচ্ছেন লেভেলবিহীন হজমি ট্যাবলেট। স¤প্রতি নগরীতে হৃদরোগের ওষুধ (cardio-nrj) অর্ডার করে প্রতারিত হয়েছেন একাধিক গ্রাহক। সোস্যাল মিডিয়ায় ‘Malaysian online shop’ (মালয়েশিয়ান অনলাইন শপ) নামের একটি পেজ’র বিজ্ঞাপন দেখে ওষুধ অর্ডার করেছিলেন প্রতারনার শিকার ওই সকল মানুষ। খুলনায় (red x) রেডএক্স ডেলিভারী নামের প্রতিষ্ঠান এ সকল পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন গ্রাহকদের কাছে।   
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সোস্যাল মিডিয়ায় Malaysian online shop-এর বিজ্ঞাপন দেখে হৃদরোগের ওষুধ (cardio-nrj) অর্ডার করেন নগরীর কাকলীবাগ এলাকার বাসিন্দা কাজী আব্দুল হাসিব। এক কৌটা হৃদরোগের ওষুধ (cardio-nrj) পাউডার ২ হাজার টাকা দামে ক্রয় করা হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর (red x) রেডএক্স ডেলিভারী নামের প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এসে অর্ডারের পণ্য দিয়ে টাকা নিয়ে চলে যান। এরপর ডেলিভারী পাওয়া প্যাকেট খুলে গ্রাহক কাজী আব্দুল হাসিবের চোখ কপালে। দু’হাজার টাকায় তিনি পেলেন লেভেলবিহীন একপাতা হজমি ট্যাবলেট। তবে ওই ট্যাবলেটগুলো আদৌ হজমি ট্যাবলেট কি-না তা কোথাও লেখা নেই।
অনুসন্ধানে আরও পাওয়া গেছে, নগরীর খানজাহান আলী রোডের ৪৫নং বাড়ির ৩য় তলার বাসিন্দা মোঃ হুযাইফ সোস্যাল মিডিয়ায় “মালয়েশিয়ান অনলাইন শপ”-এর বিজ্ঞাপন দেখে হৃদরোগের ওষুধ (cardio-nrj) অর্ডার করেন। তিনি গত ২৮ সেপ্টম্বর ৪ হাজার টাকা বিনিময়ে ২টি ওষুধ ডেলিভারী পান। এবারও সেই রেডএক্স নামের প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ওষুধ ডেলিভারী দিয়ে যান। পরে প্যাকেট খুলে গ্রাহক মোঃ হুযাইফ লেভেল বিহীন দুইপাতা হজমি ট্যাবলেট পেয়েছেন।  
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কাজী আব্দুল হাসিব এ প্রতিবেদককে জানান, আমি হার্ডের সমস্যার কারনে অনলাইনে দেখে (cardio-nrj) পাউডার অর্ডার করেছিলাম। কিন্তু হাতে পেলাম নামবিহীন হজমি ট্যাবলেটের মতো দেখতে একপাতা ওষুধ। আমার মতো কেউ যাতে প্রতারিত না হয় সে জন্য এসকল চক্রকে আইনের আওতায় আনতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ বিষয়ে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন।
এবিষয়ে কথিত “মালয়েশিয়ান অনলাইন শপ” নামের প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে ডেলিভারী প্রতিষ্ঠান (red x) রেডএক্স’র খুলনার অফিসের ইনচার্জ মিঃ ফিরোজ কবীর শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, “মালয়েশিয়ান অনলাইন শপ” নামের প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো পণ্য আমরা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেই। এক্ষেত্রে আমরা ডেলিভারী চার্জ নিয়ে থাকি।    
এ বিষয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ডাঃ শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, জীবন রক্ষাকারী কোন ওষুধ চিকিৎসকের (পেসক্রিপশান) ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ক্রয়-বিক্রয় করা উচিত নয়। 
এ বিষয়ে খুমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মোস্তফা কামাল বলেন, না বুঝে নাম সর্বস্ব ওষুধ গ্রহনের ফলে একজন হৃদরোগী মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এমনকি কার্ডিয়াক এ্যাটাকে রোগির মৃত্যুও হতে পারে। অনলাইনে ওষুধ না কিনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফার্মেসী সঠিক ওষুধ গ্রহনের পরামর্শ দেন তিনি।      

্রিন্ট

আরও সংবদ