খুলনা | রবিবার | ২৪ অগাস্ট ২০২৫ | ৯ ভাদ্র ১৪৩২

অনুপ্রবেশকারী মুক্ত বাংলা গড়ার ঘোষণা

বাঁচতে চাই, বিজেপি তাই : কলকাতার জনসভায় মোদি

খবর প্রতিবেদন |
০১:২৭ এ.এম | ২৩ অগাস্ট ২০২৫


বৃষ্টিস্নাত কলকাতায় জনজোয়ারে ভেসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ও উন্নয়নকে ঘিরে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন। শুক্রবার দমদমে জনতার উদ্দেশ্যে তিনি ঘোষণা করলেন, পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র ইতোমধ্যে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প এনেছে। কিন্তু দুর্নীতি ও স্বজন পোষণের কারণে সেই সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। তিনি বললেন, বাঁচতে চাই, বিজেপি তাই।
যশোর রোড মেট্রো স্টেশন থেকে নতুন তিনটি রুটের উদ্বোধনের পর দমদম সেন্ট্রাল জেলের মাঠের দিকে রওনা দেয় প্রধানমন্ত্রীর কনভয়। রাস্তার দু’ধারে উপচে পড়ে সাধারণ মানুষের ভিড়। মোদি মোদি শ্লোগান দিতে থাকেন সাধারণ মানুষ। গাড়ির মধ্যে থেকে প্রধানমন্ত্রীকেও হাত নাড়তে দেখা গেছে।এদিন ‘ভারত মাতাকি জয়’ বলে ভাষণ শুরু করেন মোদি। পরে বাংলায় বললেন, বড়রা আমার প্রণাম নেবেন। ছোটরা ভালোবাসা।
দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট, করুণাময়ী কালী মন্দির, দমদম বালাজি মন্দিরসহ স্থানীয় বেশ কিছু মন্দিরের নাম বলে প্রণাম জানালেন। বললেন, আমি এমন সময়ে কলকাতা এলাম, যখন দুর্গাপূজার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। কুমোরটুলিতে প্রতিমা গড়া চলছে। এর সঙ্গে যখন উন্নয়ন জুড়ে যায়, খুশি তখন দ্বিগুণ হয়ে যায়।
এরপরেই বিধানসভা ভোটের দামামা বাজিয়ে আক্রমণাত্মক মোদি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের জন্য যে অর্থ আমরা সরাসরি রাজ্য সরকারকে পাঠাই, তার বেশির ভাগ লুট হয়ে যায়। আপনাদের জন্য খরচ হয় না। টিএমসি ক্যাডারের জন্য খরচ হয়। এই জন্য জনকল্যাণে পিছিয়ে পড়ছে পশ্চিমবঙ্গ। আগে ত্রিপুরা, আসামে এই হাল ছিল। যবে থেকে বিজেপি সরকারে এসেছে গরীব কল্যাণ যোজনার লাভ ওই দুই রাজ্য পাচ্ছে।
মোদি বলেন, প্রথমে কংগ্রেস, তার পর বামেদের শাসন দেখেছে পশ্চিমবঙ্গ। ১৫ বছর আগে আপনারা মা-মাটি-মানুষে বিশ্বাস করে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে আগের চেয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলো। এটা স্পষ্ট যে যত দিন বাংলায় তৃণমূলের সরকার থাকবে, ততদিন বাংলায় উন্নয়ন থমকে থাকবে। তৃণমূল গেলে তবেই আসল পরিবর্তন আসবে। টিএমসি যাবে, তবেই আসল পরিবর্তন আসবে। বাংলার গৌরবের অতীত আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই একসঙ্গে বলতে হবে, তৃণমূলকে সরাও। বাংলাকে বাঁচাও।
এরপরেই মোদি আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির নয়া শ্লোগান তুলে ধরে বলেন,  আমরা চাই পরিবর্তন, যা মেয়েদের সুরক্ষা দেবে, যা দোকান আর ঘর জ্বালানো বন্ধ করবে, গরীবের অধিকার গরীবকে পাইয়ে দেবে, কৃষকের উন্নতি হবে, বাঁচতে চাই, তাই বিজেপি চাই!
অনুপ্রবেশ নিয়ে এদিন ফের তৃণমূলকে নিশানা করে মোদি বলেন, এখান থেকে অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াতে হবে কিনা? কে তাড়াবে? বিজেপি তাড়াবে। বিজেপিকে জেতান। বিজেপিকে ভোট দিন। অনুপ্রবেশকারীরা বাংলা ছেড়ে পালাবে। ভারতের কাছে সম্পদ কম। যুব সমাজকে উপার্জন দিতে হবে, নাগরিকদের সুবিধা দিতে হবে। অনুপ্রবেশকারীরা রোজগার কেড়ে নিচ্ছে। নাগরিকদের অধিকারে ভাগ বসাচ্ছে। মা-বোনদের সম্মানে হাত দিচ্ছে। তৃণমূল অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। ভোটব্যাংকের জন্য প্রশ্রয় দিচ্ছে। জমি কেলেঙ্কারি হচ্ছে। কৃষকের জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, আদিবাসীদের জমি দখল করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমি লালকেল­ার প্রাচীর থেকেও বলেছি, অনুপ্রবেশকারীদের যেতেই হবে। যারা নকল কাগজপত্র নিয়ে এখানে আছে, তাদের এখান থেকে যেতেই হবে। এইভাবে তৃণমূল সরকারকেও এখান থেকে বিদায় নিতে হবে।
তৃণমূলের দুর্নীতির কথা উলে­খ করে সংবিধান সংশোধনী আইন নিয়ে তিনি বলেন, বাংলায় শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষক নিয়োগ মামলায় গ্রেফতারির পরেও পদ ছাড়তে চাননি। তৃণমূলের আরও এক মন্ত্রী রেশন দুর্নীতিতে গ্রেফতার হয়েছেন। তিনিও মন্ত্রিত্ব ছাড়তে চাননি। মানুষের ভাবনা নেই তাদের। তারা জনতাকে ধোঁকা দিয়েছেন। এদের সরকারি পদে থাকার অধিকার আছে?
এরপর তিনি বলেন, এটাও দেখলাম যে দুর্নীতি করে জেলে গিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর কাজ করছেন! সংবিধানের এই অপমান মোদি মানবেন না। দুর্নীতি করলে প্রধানমন্ত্রীর কুরসি থাকবে না। কিন্তু তৃণমূল এই আইনের বিরোধিতা করছে। সংসদে বিলের বিরোধিতা করছে।
এদিন বাংলার মানুষের কাছে আহŸান জানিয়ে মোদি বলেন, বিজেপি সরকার সগর্বে বাংলা ভাষা আর বাংলা সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করছে। আমরাই বাংলা ভাষাকে ধ্র“পদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছি। বাংলায় বিজেপির সরকার বানান। আমরা শ্যামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের স্বপ্নের বাংলা বানিয়ে দেবো। বিকশিত বাংলা, মোদির গ্যারান্টি। বাংলার উন্নয়নের জন্য বিজেপির কাছে রোডম্যাপ আছে। কিন্তু তৃণমূলের নেই। তৃণমূল উন্নয়নের শত্র“। তার সাক্ষী এই দমদমের মানুষও। স্মার্ট সিটি মিশনে এখানকার অনেক উন্নতি হতে পারতো। কিন্তু তৃণমূলের সরকার সেই প্রকল্পে যুক্ত হলো না। তৃণমূলের কাজ হলো যেকোনও উপায়ে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের রূপায়ণ আটকানো। তাই আপনারা এখানেও বিজেপিকে একবার সুযোগ দিয়ে দেখুন।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ