খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৮ অগাস্ট ২০২৫ | ১২ ভাদ্র ১৪৩২

‘ধর্মীয় স¤প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা বরদাশত করা হবে না’

১ হাজার ১ টাকায় মসজিদ ও মন্দিরকে জমি দিলো সরকার

খবর প্রতিবেদন |
০১:৪৫ এ.এম | ২৮ অগাস্ট ২০২৫


রেলওয়ে রাজধানীর জোয়ার সাহারা মৌজায় অবস্থিত দু’টি মসজিদ ও একটি মন্দিরকে প্রতীকী মূল্যে জমি হস্তান্তর করেছে। তিনটি ধর্মীয় উপাসনালয়ের প্রতিটির জন্য ১ হাজার ১ টাকা হারে মোট ৩ হাজার ৩ টাকার বিনিময়ে এই জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রেলওয়ের ইতিহাসে এটি প্রথম।
বুধবার রেলভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ঢাকার বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মোঃ মহিউদ্দিন আরিফ সংশ্লিষ্ট পরিচালনা কমিটির নিকট বরাদ্দপত্র তুলে দেন। এতে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, ধর্ম উপদেষ্টা ড. আঃ ফ ম খালিদ হোসেন এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে, খিলক্ষেত রেলওয়ে জামে মসজিদ পেয়েছে ০.২০১১ একর (৮,৭৬০ বর্গফুট) ; আন-নূর-জামে মসজিদ ০.০৫৫২ একর (২,৪০৫ বর্গফুট) এবং খিলক্ষেত সার্বজনীন শ্রীশ্রী দুর্গা মন্দির পেয়েছে ০.০৫৬২ একর (২,৪৫০ বর্গফুট) জমি। সব মিলিয়ে, মোট প্রায় ৩১ শতাংশ জমি তিনটি উপাসনালয়কে হস্তান্তর করা হয়েছে।
রেলওয়ের এই উদ্যোগকে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির এক অনন্য নজির হিসেবে উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি ও সৌহার্দ্যের রোল মডেল। তিনি আরও বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কিংবা উপাসনালয়গুলোকে যারা অপবিত্র করতে চায়, তাদের কোনো ধর্মীয় পরিচয় নেই, তারা দুষ্কৃতকারী। তিনি হিন্দু স¤প্রদায়ের বেদখল হয়ে যাওয়া দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধারেও সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বাংলাদেশ ধর্মীয় স¤প্রীতির দেশ।’ তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কেউ এই স¤প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করলে তাকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা রেলওয়ের এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
প্রেস সচিব : বাংলাদেশে ধর্মীয় স¤প্রীতি রক্ষা করা একটি দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। দেশের বিভিন্ন ধর্ম ও স¤প্রদায়ের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে স¤প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যে কোনো ধরনের উসকানি বা ইস্যু তৈরি করে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করলে সরকার তা বরদাশত করবে না।
বুধবার সকালে রাজধানীর খিলক্ষেতের তিনটি মসজিদ ও মন্দিরকে জমি বরাদ্দপত্র হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। সা¤প্রতিক সময়ে খিলক্ষেতে রেলওয়ের জমি উদ্ধারের সময় একটি হিন্দু মন্দির উচ্ছেদ হওয়ায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এই বিষয়টি সমাধানে সরকার বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব।
শফিকুল আলম অনুষ্ঠানে বলেন, রেলওয়ের জমি উদ্ধারকালে হিন্দু স¤প্রদায়ের মন্দির উচ্ছেদ করা হয়েছিল এবং এটি মর্যাদাপূর্ণ ভাবে হয়নি। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার নতুন করে ওই মন্দিরের জন্য জমি বরাদ্দ দিয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় নির্ধারিত মূল্যে জমি প্রদান করেছে যাতে স¤প্রদায়ের মানুষ নতুন উপাসনালয় গড়ে তুলতে পারেন।
এছাড়া চট্টগ্রামের চন্দ্রনাথ মন্দিরের দাবি অনুযায়ী মন্দিরে যাতায়াতের সিড়িগুলোর সংস্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। পাশাপাশি রাজধানীর খিলক্ষেতের তিনটি মসজিদকেও জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহযোগিতা করছে, যাতে প্রতিটি ধর্মীয় স¤প্রদায় সমান মর্যাদা ও সুযোগ পায়।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম আরও বলেন, দেশে ধর্মীয় স¤প্রীতি বিনষ্টের যেকোনো ষড়যন্ত্র বা উসকানিকে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। সরকার চায়, সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করুক এবং ঐতিহ্যবাহী স¤প্রীতি অক্ষুণœ থাকুক।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রেলওয়ের আইনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়ার কোনো বিধান ছিল না। তবে এই আইনকে কিছুটা পরিবর্তন করে হিন্দু ও মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য স্থায়ীভাবে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তবে অনেকে মনে করছেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। কারণ, যেকোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এই দৃষ্টান্তকে ব্যবহার করে বাজার মূল্যের বাইরে জমি বরাদ্দের আবেদন করতে পারে। এ বিষয়ে একটি সুচিন্তিত নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে তাঁরা মনে করেন। যদিও রেল উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ভবিষ্যতে রেলওয়ের জমি পেতে হলে বাজার মূল্যেই নিতে হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ