খুলনা | মঙ্গলবার | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৫ ভাদ্র ১৪৩২

দুর্বৃত্তমুক্ত হোক নির্বাচনী ব্যবস্থা

|
১২:১২ এ.এম | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫


গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আইনে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠিত হলেই তিনি জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারি পদে থাকার অযোগ্য হবেন। আইনটি কেবল অপরাধীদের শাস্তি নয়, রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে শুদ্ধ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা। এত দিন পর্যন্ত আইসিটি আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা, এমনকি যাঁদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাঁরাও ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে পেরেছেন।
নতুন বিধান অনুযায়ী, অভিযোগ গঠনের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের রাজনৈতিক ও সরকারি পদ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে। এটি একটি অত্যন্ত জরুরি সংস্কার। কারণ এতে বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন অভিযুক্তরা ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ পাবেন না।জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতনসহ নানা অপরাধের অভিযোগে অসংখ্য মামলা হয়েছে।
এরই মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত হওয়ায় তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। তবে নতুন বিধানটি শুধু একটি রাজনৈতিক দলের জন্য নয়, এটি একটি সামগ্রিক সংস্কারের প্রতীক, যা ভবিষ্যতে দুর্বৃত্তদের প্রভাবমুক্ত করে নির্বাচনী ব্যবস্থা সুস্থ রাখবে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, কেবল মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তরাই নয়, বরং ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের বেশি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও আপিলের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা না করে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হবেন।
এ ছাড়া আদালতে ঘোষিত ফেরারি আসামিদেরও নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের রাজনীতিকে দুর্বৃত্ত ও দাগি অপরাধীদের প্রভাব থেকে মুক্ত করতে সহায়ক হবে। দীর্ঘকাল ধরে আমাদের রাজনীতিতে অপরাধ ও দুর্নীতির যে নেতিবাচক ধারা চলে আসছিল, এই সংস্কারগুলো তার অবসান ঘটাতে পারে। তবে সমালোচকরা বলতে পারেন, অভিযোগ গঠনের সঙ্গে সঙ্গে অযোগ্য ঘোষণার সিদ্ধান্ত বিচারব্যবস্থার মৌলিক নীতি ‘ দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত কেউ অপরাধী নন’-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই দ্বিধাদ্ব›দ্ব মোকাবেলায় আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ এবং সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিশোধ নয়, বরং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষে এই উদ্যোগের প্রতিফলন দেখতে চাই আমরা।
এই সিদ্ধান্তগুলো জনগণের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষাকেই প্রতিফলিত করে, যা জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে স্পষ্ট হয়েছিল। মানুষ একটি পরিচ্ছন্ন ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা চেয়েছিল। যাঁরা জনগণের ওপর নৃশংসতা চালিয়েছেন, তাঁদের নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে দেওয়া হলে তা হবে সেই গণ-অভ্যুত্থানের আত্মত্যাগকারীদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। দেশের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহিংসতা, দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করতে শক্তিশালী আইন প্রণয়ন অপরিহার্য। নির্বাচনী অঙ্গন দুর্বৃত্তমুক্ত না হলে গণতন্ত্র কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। তাই মানবতাবিরোধী অপরাধী ও গুরুতর অপরাধে অভিযুক্তদের রাজনৈতিক ক্ষমতার বাইরে রাখা কেবল আইনি নয়, নৈতিক দায়িত্বও।
এই নতুন আইন ও প্রস্তাবগুলো একটি নৈতিক ও সুস্থ সমাজ গঠনের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এখন প্রয়োজন এই আইনগুলোর সঠিক প্রয়োগ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা, যাতে বাংলাদেশের রাজনীতি সত্যিকার অর্থেই জনগণের কল্যাণে নিবেদিত হতে পারে। এটি শুধু আইনি পরিবর্তন নয়, বরং একটি নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন।

্রিন্ট

আরও সংবদ