খুলনা | বুধবার | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৫ ভাদ্র ১৪৩২

‘গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যু, সুরতহালে না দেখাতে পুলিশ কর্মকর্তার হুমকি’

খবর প্রতিবেদন |
০১:২২ পি.এম | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫


রংপুরে জুলাই আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের মরদেহ নিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদনে গুলির কথা না লেখার জন্য চাপ দিয়েছিলেন তৎকালীন সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান। এমন বিস্ফোরক তথ্য জানিয়েছেন মামলার সাক্ষী এসআই তরিকুল ইসলাম।

আজ মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনালে এই সাক্ষ্য দেন তিনি। আদালতে তিনি জানান, ১৬ জুলাই বিকেলে তিনি তাজহাট থানায় দায়িত্বে ছিলেন। হঠাৎ ওয়ারলেস বার্তার মাধ্যমে জানানো হয়, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি মরদেহ রয়েছে, সেটি দেখে আসতে হবে।

প্রথমে আন্দোলনের ভিড় থাকায় তিনি মরদেহটি দেখতে পারেননি। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে আবার হাসপাতালে যান। সেখানে তিনি আবু সাঈদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তার শরীরে একাধিক গুলির চিহ্ন ছিল। মাথার পেছনের অংশ থেঁতলানো ছিল।

এসআই তরিকুল ইসলাম আদালতকে জানান, তিনি যখন সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করতে যান, তখন সহকারী কমিশনার আরিফুজ্জামান তাকে স্পষ্টভাবে বলেন, সুরতহাল রিপোর্টে এটা লিখতে পারবা না যে সে গুলিতে মারা গেছে।

তরিকুল যখন বলেন যে তিনি সত্য লিখবেন, তখন আরিফুজ্জামান রেগে গিয়ে বলেন, ব্যাটা, তুই কথা শুনবি না? তুই জামাত-শিবির করিস? এরপর তাকে চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।

এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়, ওই সময় পুলিশের একটি অংশ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।

এদিকে একই দিনে এই মামলার চতুর্থ দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ২৮ আগস্ট মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে শহিদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন জবানবন্দি দেন। সেদিনই দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে এনটিভির রংপুর প্রতিনিধি একেএম মঈনুল হকও জবানবন্দি দেন। তবে তার জেরা এখনো শেষ হয়নি।

মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয় ২৭ আগস্ট, যেখানে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সূচনা বক্তব্য দেন। তার আগে ৬ আগস্ট ৩০ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠন করে ট্রাইব্যুনাল।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় ২৪ জুন। এরপর ৩০ জুন ট্রাইব্যুনাল অভিযোগপত্র গ্রহণ করে। এই মামলায় মোট ৬২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে।

মামলার আসামিদের মধ্যে ২৪ জন এখনো পলাতক। তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত চারজন আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়েছে। শুনানির বিভিন্ন তারিখে একাধিক আইনজীবী পলাতক আসামিদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন।

রংপুরে আন্দোলনের সময় আবু সাঈদের মৃত্যু এবং তারপরে পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকাকে ঘিরে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, যা একটি ছাত্র আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

্রিন্ট

আরও সংবদ