খুলনা | শনিবার | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৮ ভাদ্র ১৪৩২

‘যে দল মাথা তুলে দাঁড়াতে পারতো না, তারা এখন দৃশ্যমান শক্তি’

ডাকসু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে : ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্না

খবর প্রতিবেদন |
১২:৫৬ এ.এম | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫


ছাত্র আন্দোলন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, এ প্রজন্ম দুর্বৃত্তায়িত ও চাঁদাবাজ রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে এবং পরিবর্তনের দাবি তুলছে।
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না এ কথা বলেন। ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ: সংস্কার বাস্তবায়নের পথরেখা’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ।
মাহমুদুর রহমান মান্না সতর্ক করে বলেন, রাজনীতি শুধুই মিথ্যাচার, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতা দখলের লড়াই যদি হয়ে থাকে, তবে তা টেকসই হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে এখনো ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। কারণ, জনগণ বিকল্প খুঁজছে।
ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে নিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘৩০-৪০ বছর আগেও একটা রাজনৈতিক দল মাথা তুলে দাঁড়াতে পারত না। কেউ দেখে ফেললে তাদের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি হতো। এখন মাথা উঁচিয়ে আমাদের সামনে আসছে। বড় দল যারা, তাদেরও চ্যালেঞ্জ করছে। বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা দিয়ে বলছে, যেভাবে বলা হচ্ছে, তার সবকিছু ঠিক নয়।’
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ডাকসু নির্বাচন ও মানুষের প্রত্যাশার চিত্র তুলে ধরে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, মানুষ এখনো প্রশ্ন করে ভোট আদৌ হবে কি না। ডাকসু নির্বাচন দেখিয়েছে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব, যদিও অনেকের কাছে তা অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। ছাত্রসমাজকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তারা সাহস দেখিয়েছে, যা আগের প্রজন্ম পারতো না।
ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, অতীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দাঁড়ানোর সাহস পেত না, কিন্তু এখন দাঁড়াচ্ছে, এটিই পরিবর্তনের ইঙ্গিত। এখন আর বিশাল জনসভা নয়, বরং সাইবার প্রচারণা ও নতুন প্রজন্মের ভাবনায় রাজনীতি গড়ে উঠছে। এ প্রজন্ম প্রচলিত সংস্কৃতি বড় ভাইদের সালাম, প্রটোকল বা দখলদারির রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বুঝেছে, রাজনীতি মানে আন্তরিকতা, সংগ্রাম ও অঙ্গীকার; এটি লুটপাট বা ক্ষমতার শর্টকাট রাস্তা নয়।
‘ছাত্ররা ভিন্ন উদাহরণ দেখিয়েছে’ : মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সুবিধাবাদী হয়ে পড়েছে, কিন্তু ছাত্ররা ভিন্ন উদাহরণ দেখিয়েছে। ভবিষ্যতে ঐক্য ও সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এ জন্য যতখানি দৃঢ়তা দরকার, তেমনি প্রয়োজনে ছাড়ও দিতে হবে। সংকট নিরসনে সুপ্রিম কোর্টের রায় গ্রহণযোগ্য সমাধান হতে পারে, আর তা সব দলকেই মানতে হবে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, রাজনীতি হালকাভাবে নেওয়ার বিষয় নয়। এটি মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত সংগ্রাম। তাই সবার দায়িত্ব সৎ, অংশগ্রহণমূলক ও সংস্কারমুখী রাজনীতি গড়ে তোলা। তাহলেই আগামী দিনের জন্য একটি ভালো নির্বাচন এবং একটি উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করা সম্ভব হবে।
জাতীয় রাজনীতিতে ডাকসু নির্বাচনের প্রভাব নিয়ে দ্বিমতও এসেছে আলোচনা সভায়। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ডাকসুর মতো ফল যদি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও হয়, তখনো বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরঞ্জিত ও ঢালাও প্রচার হচ্ছে।
সাইফুল হক বলেন, এই নির্বাচনকে জাতীয় রাজনীতিতে সফলতা বা ব্যর্থতার মাপকাঠি হিসেবে দেখা উচিত নয়। এমন দৃষ্টিভঙ্গি নিজেদের জন্যই আত্মঘাতী ও বিপজ্জনক। জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ১২ কোটি ৬০ লাখ ভোটারের বিপরীতে ৩২ হাজার ভোট অনেকটাই সমুদ্রে এক ফোঁটা পানির মতো।
আলোচনা সভায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, স্বৈরশাসনের যে প্রক্রিয়া বা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে দুর্বৃত্তায়িত শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, গুম-খুন, আয়নাঘরের মতো ব্যাধি জন্ম নিয়েছে, লুণ্ঠনতন্ত্রের বৈধতা দেওয়ার প্রয়াস হয়েছে, এর থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরি করার জন্য যে কাঠামো ও আইনগত সংস্কার দরকার-এটাই এ সরকারের অঙ্গীকার ছিল।
জেএসডি সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আজকে দেখছি, জুলাই আন্দোলনের যে আকাক্সক্ষা ছিল, যাঁরা এ আন্দোলনের অংশীজন ছিলেন, তাঁদের পাশ কাটিয়ে একটি সম্ভ্রান্ত রাজনৈতিক পরিবারের সদস্যদের টেকানোর জন্য আরেকটি জায়গা এ সরকার এবং রাজনীতিবিদেরা তৈরি করছেন।’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুমের সভাপতিত্বে ও অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল­াহ কায়সার, ভাসানী জনশক্তি পার্টির মহাসচিব আবু ইউসুফ সেলিম ও মুখপাত্র আবদুল কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য আকবর খান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির মিডিয়া ও প্রচার সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন প্রমুখ।

্রিন্ট

আরও সংবদ